বাংলাদেশ সেবক সমিতির সংক্ষিপ্ত ইতিকথা
প্রতিষ্ঠতঃ ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ
(সংকলিত ইতিহাস ও তথ্যসূত্র থেকে)
প্রতিষ্ঠতঃ ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ
(সংকলিত ইতিহাস ও তথ্যসূত্র থেকে)
দিন পঞ্জিকার পাতা থেকে সেবক সঙ্গীতের বিভিন্ন সংস্করণে প্রকাশিত ঈশ্বরভক্ত প্রিয়নাথ বৈরাগীর জীবনী পাঠে জানা যায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে ৩রা জুন বরিশাল জেলার ইন্দুরকানি গ্রামে। অথচ অতীত স্মৃতি আলোচনা করলে দেখা যায় সেবক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দে। এজন্য মহান ঈশ্বর তাঁর রাজ্য ধার্মিকতা রক্ষার মানসে ইস্রায়েল জাতির অবশিষ্টাংশকে যেরূপ মনোনয়ন করেছেন সেইরূপ সেবক সমিতি প্রতিষ্ঠত হবার নেপথ্যে ছিল ১৮৪০ খ্রীঃ সত্যগুরু ও কর্তাভজা নামে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের অনুরূপ দু’টো দলই ছিল বরিশাল ও ফরিদপুর জেলার প্রধান কেন্দ্র রামাসিসিদ্ধ গ্রামে। দলের প্রধান ছিল কাঙ্গালী মোহন্ত সাথে ভাষারাম হালদার, রাজু মিস্ত্রি, যদাই ফকির, হারাধন বৈরাগী, কাঁশীনাথ রত্ন, কুশাই হালদার, লেছাই বৈদ্য, ঐশান মৃধা, রামচরণ কুলু, রাজমোহন হাজরা প্রমুখ ১১ জনকে সাথে নিয়ে সত্যগুরু মেলায় তারা মানতদান ও প্রার্থনা উৎসর্গ করতেন। তারা যখন আসর বসাতেন তাদের সঙ্গে তখন একজোড়া চাকি, খোল-করতাল নিয়ে মনমাতানো গান গাইতেন। কথিত হলেও সত্য কাঙ্গালী মোহন্ত ও তার দলবল যে সত্যের সন্ধান করেছিলেন তাহা তিনি সত্য গুরু দলের মধ্যদিয়ে লাভ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ১৮৪৫ খ্রীঃ তার দলবল সহ যীশু খ্রীষ্টের অনুসারী হলেন। সেই সময় থেকে তার দলের সকলেই দমিদারের এমনকি উচ্চবর্ণ হিন্দুদের নানাবিধ অত্যাচার সহ্য করে খ্রীষ্টের প্রেমের বাণী প্রচার করতে লাগলেন।
কালক্রমে ১৮৫৯ খ্রীষ্টাব্দে বরিশাল ও ফরিদপুর মন্ডলীর তদানিন্তন নেতা ও তত্ত্বাবধায়ক বাবু রামচরণ ঘোষ, সুখীরাম সরকার ও জন সরকারের নেতৃত্বে বর্ণহিন্দুদের অত্যাচার দমন করে বিদেশী মিশনারীদের সহায়তায় বঙ্গদেশীয় খ্রীষ্টিয় সাংস্কৃতির প্রকাশভঙ্গী নিয়ে প্রায় প্রতি ঘরেই যীশু খ্রীষ্টে বনদীক্ষিত (সত্যগুর ও কর্ত্তাভজা সম্প্রদায়কে) সাথে নিয়ে নিয়মিত পারিবারিক সভা গান প্রার্থনা প্রচলন থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে তারাই প্রার্থনা সভার দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই দলটি একসময় বাবু বিন্দুনাথ সরকার ও মতিলাল সরকার, মাঝিবিহীন নৌকার মত পরিচালনা করতেন। বিন্দুনাথ হলেন সুখীরাম সরকারের পৌত্র। সুখীরাম সরকার নারায়নখানার প্রথম খ্রীষ্টান। তিনি ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দে ১৮ই মার্চ প্রভুর দাস পেজ সাহেবের দ্বারা স্বপরিবারে খ্রীষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। বিন্দুনাথ সরকার ১৮৬২ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০ বছর বয়স থেকে সভায় যোগ দিয়ে সভা পরিচালনা করতেন। বিন্দুনাথ সরকার ছিলেন শ্রীনাথ সরকারের জ্যেষ্ঠপুত্র, তিনি তার পিতার মত নির্ভীক দৃঢ় বিশ্বাসী ও পরিশ্রমী কর্মী হিসাবে বিল অঞ্চলের মণ্ডলীগুলি দেখাশুনা করতেন। পরবর্তীতে পালকীয় অভিষেক গ্রহণ করেন রেভাঃ বিন্দুনাথ সরকার। বাংলাদেশে খ্রীষ্টানদের উপর উচ্চবর্ণ হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার নিপীড়ন, সুদসহ কর আদায় ও ফসল আদায় এমনকি শারিরীক নির্যাতন বেড়ে যেতে লাগল। ফলে ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দে ইন্দুরকানি গ্রামের খ্রীষ্টানদের উপর অমানবিক জমিদারী নির্যাতন, শারিরীক অত্যাচার, মানসিক অশান্তির বিষয় রেভাঃ বিন্দুনাথ জানতে পারলেন। তিনি তার দলের কয়েকজনকে নিয়ে ইন্দুরকানিতে প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন। এ প্রার্থনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ধামসরের নন্দকুমার দেউড়ী, ডহরপাড়ার চৈতন্য সমাদ্দার, পীরেরপাড়ের রামমোহন সমাদ্দার, ইন্দুরকানির নসাই বালা, বারপৈকার প্রবান্ন বৈরাগী, তারা চাঁদ বৈরাগী, চৌরখুলির বিষ্ণু ও কৈলাস মিত্র এবং পূর্ণচরণ সন্ন্যাসী, অরুনোদয় ঘোষ, মহেশ হালদার প্রভুর বাক্য প্রচার করেন এবং দলের খরচ বহন করেন।
সেবক সমিতির বর্তমান প্রজন্ম এই জন্যই ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দকে বাংলাদেশ সেবক সমিতির প্রতিষ্ঠা তারিখ ও সন হিসাবে গণনা করে।
পরবর্তী ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দের কোন এক সময় বুড়ুয়াবাড়ির মহেশ হালদারের গৃহে রেভাঃ বিন্দুনাথ সরকারের পরিচালনায় আত্মক উদ্দীপনামূলক বৃহৎ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে খ্রীষ্টভক্তগণ ও মণ্ডলীর বিশিষ্ট কর্মকর্তাগণ যোগ দেন। তারা এই প্রার্থনা সভা বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে বাড়ীতে বাড়ীতে করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। কথিত আছে, মহেশ হালদার ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়া থানার অন্তর্গত ভাঙ্গারহাটের সৃষ্টি করেন। তিনি ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে প্রভু যীশুর বাক্য প্রচার করতেন ফলে প্রচুর লোক সমাগমের জন্য হাট বসিয়ে দেয়া হয়। সেই প্রার্থনা সভা দলের অনেকেই ঈশ্বরের কোলে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই নতুনভাবে যোগ দেন। তথ্য সংগ্রহে জানা যায়, রেভাঃ বিন্দুনাথ সরকার বয়োঃবৃদ্ধির কারণে চলাফেরা করতে না পারায় শশী রায় ও পূণ্যচরণ পাগলদের পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারা দু’জনে পাগলা দলকে আরও উজ্জীবিত করে তোলেন।
অবশেষে ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে পাগলদের প্রার্থনা সভা দলে প্রার্থনাশীল সংস্থার নামকরণ হয় ‘প্রার্থনাশীল সংস্থা’ কিন্তু তখনো অনেকেই তাদেরকে ‘পাগলা দল’ বলে ডাকত। ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে রেভাঃ বিন্দুনাথ সরকার প্রভুর কোলে আশ্রয় নেন এবং বটবাড়ীর রূবেন সরকার, মধু দেউড়ী, রাজু হাজরা, বাত্য সমাদ্দার পাগলদের দলে যোগ দেন। এজন্য সকলে একমত হয়ে বটবাড়ীর রূবেন সরকার মহাশয়কে সভা পরিচানার দায়িত্ব দেন।
কালের পরিক্রমায় ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে বরিশাল, ফরিদপুর জেলায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, এমনকি ইন্দুরকানিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট আকার ধারণ করে। পানিতে ফসল নষ্ট হয়ে যায়, অনেকে অনাহারে দিন কাটায়। একদিকে জমিদারের অত্যাচার, নির্যাতন, অভাব-অনটন, অন্যদিকে মহামারী দেখা দেয়। ফলে খ্রীষ্টানদের বেঁচে থাকার পথ ছিল না। এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য ইন্দুরকানি ব্যাপ্টিষ্ট উপসনালয়ে তারা প্রভু যীশুর কাছে প্রাণের আবেগে চোখের জলে প্রার্থনা করেন, “প্রভু আমাদের কোন বান্ধব নেই, একমাত্র তুমিই আছ, তুমি আমাদের রক্ষা কর।” খ্রীষ্টভক্ত পাগলদের চিৎকার শুনে বর্ণহিন্দু মালিকেরা ও জমিদারেরা অতিষ্ঠ হয়ে বলতে লাগলেন- “দেখ, দেখ পাগলেরা কিভাবে চিৎকার করছে। ওরা পাগল হয়েছে। ওদের অভাব কি মোচন হবে?” একদিকে ভৎসনা, টিটকারী অন্যদিকে খ্রীষ্টভক্তদের আকুল আবেদনের চিৎকার বন্ধের চেষ্টা চলছিল কিন্তু; তাদের চিৎকার বন্ধ হয়নি। অবশেষে পাগলদের আর্তনাদ পবিত্র ঈশ্বরের চরণতলে পৌছাল। ফলে পরবর্তী ফসল মৌসুমে দ্বিগুণ ফসল পেয়ে তারা জমির খাজনা এবং জমিদারদের সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করে দিল, এই আশ্চর্য ঘটনা বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ল।
এই মহা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে ইন্দুরকানির গিরীবালা ও মহেশ বাড়ৈ, বাঁশিীনাথ বালা, কাশিনাথ বালা, সুখলাল বালা, বসন্ত বালা, অক্ষয় বাড়ৈ, সূর্য্য বাড়ৈ, মিলন বাড়ৈ (পঞ্চায়েত) তারা সকলে মিলে বিভিন্ন বাড়ীতে বিভিন্ন সময় প্রার্থনা করে বেড়াতেন। তখন পাগল দলের সাথে ইন্দুরকানির ঐ সভায় উপস্থিত ছিলেন ধামসরের নন্দলাল দেউড়ী, গৈলার সানুহারের রজনীকান্ত রায়, নারিকেলবাড়ীর রাজাই হালদার, বাশীরাম বল্লভ, বদরতলার সাগর মৌয়ালী, বুড়ুয়াবাড়ীর যাদব বাড়ৈ, নারায়নখানার রাজু মোহন হাজরা, উত্তর পাড়ার সত্য সমদ্দার, সানুহারের বিহারী মিস্ত্রি, আনন্দপুরের মতিলাল সরকার, আটাশীবাড়ীর মহেশচন্দ্র গাইন, আমবলিয়ার ধলাই বৈদ্য, আসকরের রামধনু ঘরামী, মানব সজ্জন, চন্দ্রমোহন বৈরাগী, মৈস্তারকান্দির নিবারণ ঢালী ও রামজীবন ঘরামী (হালদার), কলিগ্রামের বাবুল বৈদ্য, বুড়ুয়াবাড়ীর যোগ্য হালদার, জীবন হালদার, জ্যোতিশ হালদার ও শীতলপুরের রূবেন বাড়ৈ। বটবাড়ীর রেভাঃ রূবেন সরকার সভা পরিচালনা করেন।
এ সময় অর্থাৎ ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রিয়নাথ বৈরাগী শ্রীরামপুর কলেজে ধর্মতত্ব শিক্ষা লাভের পরে প্রথম বরিশালে মিশন কার্যে যোগদান করেন।
এখানে বলা আবশ্যক ইন্দুরকানি সভায় উপস্থিত পাগলেরা যুক্তভাবে সভা সমিতি করতে লাগলেন। তখন জমিদারেরা এদের পাগল বলে উপাধি দেওয়ায় ইন্দুরকানিতে মিলিত সকলে প্রার্থনার মাধ্যমে এই পাগলা দলের (সমিতির) নামকরণ করেন “পাগলা সমিতি”।
তারা যীশু নামে পাগল হয়ে গ্রামে গ্রামে গান প্রার্থনা করতেন। তাদের পরনে থাকত ছয়হাত গামছার মত ধূতিকাপড় এবং কাঁধে একটি গামছা। এরা গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন বাড়ীতে গিয়ে বলতেন, আজকে আমরা আপনার বাড়ীতে গান প্রার্থনা করব, কিন্তু কারও বাড়ীতে খেতে চাইতেন না। তারা নিজ বাড়ী থেকে বের হবার সময় গামছায় কিছু চাল এবং চারটি পয়সা বেঁধে নিয়ে বের হতেন। তারা কোথায় যাবেন তারও ঠিক থাকত না। অসুস্থ, পীড়িত, দুঃখী-কাঙ্গালদের বাড়ীতে গিয়ে উপযাজক হিসাবে পাগলবৃন্দ কথা বলতেন। তারা সন্ধ্যাবেলা সভা আরম্ভ করতেন। যখন ভোর হত তখন একজন পাগল ঐ বাড়ীর গৃহকত্রীকে বলতেন ‘মা, আমাদের এই চাল ক’টা ফুটিয়ে দাও’। তারা ঘুরে ঘুরে এভাবে প্রভু যীশুর সুসমাচার প্রচার এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে অনেক রোগীকে সুস্থ্য করতেন।
তারা যখন সবা করতেন তখন তারা যীশু নামে এতবেশি পাগল হয়ে যেতেন যে, অনেক সময় তারা হেসে দিতেন। আবার কখনও কেঁদে কেঁদে চোখের জলে মাটি ভিজিয়ে দিতেন। এমনকি মাটিতে গড়াগড়ি দিতে দিতে এসে অন্যের পায়ের ধূলি মাথায় নিতেন। তাদের মধ্যে লজ্জা, ঘৃণা, ভয়, অবিশ্বাস, সন্দেহ কিছুই ছিল না, কিন্তু এদেশেরই মাটিতে বাঙ্গালী ঐতিহ্য অতিপুরানো বঙ্গদেশীয় কৃষ্টি সাংস্কৃতি চেতনা প্রকাশের ভাব কায়দায় খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস ও চেতনায় একত্রে অশ্রুজলে তাদের প্রাণের কথা প্রভু যীশুর কাছে বলতেন। তারা শিক্ষিত, অশিক্ষিত ধনী গরীব ভেদাভেদ করতেন না। তারা কোন পদ প্রাপ্তির আশা করেন নি। তারা ছিলেন সম-মনা ও সহগোত্রীয়। তারা খাবার চিন্তা করতেন না। এজন্য এই পাগলা সমিতিকে কেহ বিপদে আপদে অসুস্থ্য হলে বাড়ীতে এনে প্রার্থনা সভা দিতেন। অনেকে আবার পাগলা সভায় মানত করতেন।
ঘটনাপূঞ্জে ১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে ইন্দুনাথ বাবু ফ্রাণ্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যান। ঐ সময় মিসেস সরকার (ইন্দুনাথ বাবুর স্ত্রী) মানত করেছিলেন ইন্দুনাথ যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে মিশন কম্পাউন্ডে পাগলা সমিতির সভা দিবে। প্রভুর অনুগ্রহে ইন্দুনাথ যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে কথিত সেই মানত অনুসারে পাগলা সমিতির সভা ডাকলেন। দেখা গেল নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বের দিন বিকালে পাগলরা মিলিত হল, তারা সন্ধ্যার আগেই সামান্য কিছু খাদ্য গ্রহণের পরে নিজেরাই ধ্যান ও প্রার্থনায় বসে গেলেন।সমস্ত রাতই এভাবে কেটে গেল। পরদনি সকাল থেকে আরম্ভ হল আর শেষ হল সন্ধ্যার আগে। সভা চলাকালীন ৮/১০ জন পাগলরা কেহ জল ভিন্ন কোন খাবার গ্রহণ করলেন না। তারা দু’হাত উপরে তুলে মুখ উচু করে দেশীয় আঞ্চলিক ভাষায় প্রার্থনা করলেন।
এখানে বলা আবশ্যক ইন্দুরকানি সভায় উপস্থিত পাগলেরা যুক্তভাবে সভা সমিতি করতে লাগলেন। তখন জমিদারেরা এদের পাগল বলে উপাধি দেওয়ায় ইন্দুরকানিতে মিলিত সকলে প্রার্থনার মাধ্যমে এই পাগলা দলের (সমিতির) নামকরণ করেন “পাগলা সমিতি”।
তারা যীশু নামে পাগল হয়ে গ্রামে গ্রামে গান প্রার্থনা করতেন। তাদের পরনে থাকত ছয়হাত গামছার মত ধূতিকাপড় এবং কাঁধে একটি গামছা। এরা গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন বাড়ীতে গিয়ে বলতেন, আজকে আমরা আপনার বাড়ীতে গান প্রার্থনা করব, কিন্তু কারও বাড়ীতে খেতে চাইতেন না। তারা নিজ বাড়ী থেকে বের হবার সময় গামছায় কিছু চাল এবং চারটি পয়সা বেঁধে নিয়ে বের হতেন। তারা কোথায় যাবেন তারও ঠিক থাকত না। অসুস্থ, পীড়িত, দুঃখী-কাঙ্গালদের বাড়ীতে গিয়ে উপযাজক হিসাবে পাগলবৃন্দ কথা বলতেন। তারা সন্ধ্যাবেলা সভা আরম্ভ করতেন। যখন ভোর হত তখন একজন পাগল ঐ বাড়ীর গৃহকত্রীকে বলতেন ‘মা, আমাদের এই চাল ক’টা ফুটিয়ে দাও’। তারা ঘুরে ঘুরে এভাবে প্রভু যীশুর সুসমাচার প্রচার এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে অনেক রোগীকে সুস্থ্য করতেন।
তারা যখন সবা করতেন তখন তারা যীশু নামে এতবেশি পাগল হয়ে যেতেন যে, অনেক সময় তারা হেসে দিতেন। আবার কখনও কেঁদে কেঁদে চোখের জলে মাটি ভিজিয়ে দিতেন। এমনকি মাটিতে গড়াগড়ি দিতে দিতে এসে অন্যের পায়ের ধূলি মাথায় নিতেন। তাদের মধ্যে লজ্জা, ঘৃণা, ভয়, অবিশ্বাস, সন্দেহ কিছুই ছিল না, কিন্তু এদেশেরই মাটিতে বাঙ্গালী ঐতিহ্য অতিপুরানো বঙ্গদেশীয় কৃষ্টি সাংস্কৃতি চেতনা প্রকাশের ভাব কায়দায় খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস ও চেতনায় একত্রে অশ্রুজলে তাদের প্রাণের কথা প্রভু যীশুর কাছে বলতেন। তারা শিক্ষিত, অশিক্ষিত ধনী গরীব ভেদাভেদ করতেন না। তারা কোন পদ প্রাপ্তির আশা করেন নি। তারা ছিলেন সম-মনা ও সহগোত্রীয়। তারা খাবার চিন্তা করতেন না। এজন্য এই পাগলা সমিতিকে কেহ বিপদে আপদে অসুস্থ্য হলে বাড়ীতে এনে প্রার্থনা সভা দিতেন। অনেকে আবার পাগলা সভায় মানত করতেন।
ঘটনাপূঞ্জে ১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে ইন্দুনাথ বাবু ফ্রাণ্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যান। ঐ সময় মিসেস সরকার (ইন্দুনাথ বাবুর স্ত্রী) মানত করেছিলেন ইন্দুনাথ যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে মিশন কম্পাউন্ডে পাগলা সমিতির সভা দিবে। প্রভুর অনুগ্রহে ইন্দুনাথ যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে কথিত সেই মানত অনুসারে পাগলা সমিতির সভা ডাকলেন। দেখা গেল নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বের দিন বিকালে পাগলরা মিলিত হল, তারা সন্ধ্যার আগেই সামান্য কিছু খাদ্য গ্রহণের পরে নিজেরাই ধ্যান ও প্রার্থনায় বসে গেলেন।সমস্ত রাতই এভাবে কেটে গেল। পরদনি সকাল থেকে আরম্ভ হল আর শেষ হল সন্ধ্যার আগে। সভা চলাকালীন ৮/১০ জন পাগলরা কেহ জল ভিন্ন কোন খাবার গ্রহণ করলেন না। তারা দু’হাত উপরে তুলে মুখ উচু করে দেশীয় আঞ্চলিক ভাষায় প্রার্থনা করলেন।
এই মানত সভায় উপস্থিত ছিলেন রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগী, ধামসরের নন্দলাল দেউড়ী, সানুহারের রজনীকান্ত রায়, বটবাড়ীর রূবেন সরকার, নারিকেলবাড়ীর রাজাই হালদার, বাঁশীরাম বল্লব, বদরতলার সাগর মৌয়ালী, বুরুয়াবাড়ীর যাদব বাড়ৈ, চৌরখুলির জুড়ান বাড়ৈ, আসকরের গগণ পাগলা, কলিগ্রামের বাবুল বৈদ্য প্রমুখ পাগলসহ আরও অনেকে।
কালের পূর্ণতায় অনেকেই গতায়ু হলে রেভাঃ রূবেন সরকার পাগলা সমিতির প্রধানরূপে কাজ চালাতে থাকেন।
এসময় ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে একদিন রবিবারে বুরুয়াবাড়ী খ্রীষ্টান ব্যাপ্টিষ্ট মিশনে ভারতের ঊড়িষ্যা প্রদেশের কটাক গগরের নিবাসী শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিষ্ট হোম মিশনের কাজ ছেড়ে দিয়ে শাস্ত্রজ্ঞানী পণ্ডিত, ঈশ্বরভক্ত খ্রীষ্টদাস জ্ঞান্দ্রে নাথ সিং উপস্থিত হলেন। রবিারের উপাসনা পরিচাণনার সময় বৃষ্টি হচ্ছিল মুষলধারে। আর তার প্রার্থনায় বৃষ্টি থেকে গেল।
উপসনা শেষে তিনি বললেন, আমি বটবাড়ী রূবেন সরকার মহাশয়ের বাড়ী যাব। বটবাড়ীর কাছে গিয়ে রূবেন সরকারের নাম ধরে ডাক দিলেন। অতঃপর তার সাথে দেখা করে হঠাৎ বটবাড়ী থেকে কোথায় গেলেন তা কেউ জানতে পারেনি। শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষিত এই মানুষটি পথে পথে হাঁটতেন এমনকি পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতেন। তিনি প্রার্থনার সময় বলতেন- “প্রভু তুমি বলে দাও আমি কোন পথে যাব।” এই পথ পিয়াসী ঈশ্বরভক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ সিং প্রভুর ইচ্ছায় বঙ্গদেশে বরিশাল, ফরিদপুর মণ্ডলীর নতুনভাবে উদ্দীপনা দেবার জন্য ফিরে আসেন। তখন তিনি পাগলা সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন স্থানে বিল অঞ্চলে প্রচার কার্য আরম্ভ করেন। ফলে তদানিন্তন সময়ে ফরিদপুর বরিশাল বিলাঞ্চলে অবহেলিত আধুনাকলের সেবক সমিতি খ্রীষ্টিয় আদর্শকে সমুন্নত রাখে। বাংলার মণ্ডলীগুলিতে নব চেতনায় খ্রীষ্টিয় জাগরণ আসে। এ জন্য বর্তমানকালে খ্রীষ্টয় চিন্তাবিদগণ বিশেষভাবে সেবক সমিতিকে ভালবেসে তাদের নিরলস খ্রীষ্টিয় সংগ্রামের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করেন। এ সময় যারা ছিলেন তাদের সাথে পীড়ের পাড়ের হরমোহন সমাদ্দার, সুখলাল সমাদ্দার, জ্ঞানেন্দ্র নাথ সমাদ্দার, ধামসরের দানেশ দেউড়ী, আগৈলঝাড়ার রসিক হালদার, আনন্দপুরের মনিময় সরকার, ইন্দুরকানির শশীভূষণ পন্ডিত, মান্দ্রার উমেশ হাজরা, বুদ্ধি মিস্ত্রি ও জয়নাথ বাড়ৈ, কলিগ্রামের হেমন্ত তালুকদার, অশ্বিনী বৈদ্য ও ফণীভূষণ বৈরাগী একত্রে প্রার্থনা সভা করতেন।
ঘটনা প্রবাহে ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে যুগ ও সন্ধিক্ষণে রেভাঃ রূবেন সরকারের সহায়তায় এবং ভক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ সিং- এর প্রচেষ্টায় ইন্দুরকানির রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগীর অনুপ্রেরনায় বরিশাল জেলার অন্তর্গত গৈলার সানুহার গ্রামের রজনীকান্ত রায়ের গৃহে তৎকালীন পাগলা সমিতির প্রায় ৩০/৪০ জন ঈশ্বরভক্তের উপস্থিতিতে একটি বিরাট অধিবেশন হয়।
উক্ত অধিবেশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাগলা সমিতির একটি নতুন নামকরণ করা এবং ভবিষ্যতে যাহাতে সমিতির শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় ভাবধারা নিয়ে খ্রীষ্টিয় চেনায় সভার কাজ পরিচালিত করা যায় সেই জন্য সংক্ষিপ্ত সংবিধান প্রণয়ণ করা।
উপস্থিত ঈশ্বরভক্তগণ নাম পরিবর্তনের ব্যাখ্যা ও মতামত প্রকাশ করে বলেন যে, এই সমিতির ভক্তগণ কেবলমাত্র ঐশ্বরিক নামে পাগল তাই নয় বরং তারা ঈশ্বরের সেবা আরাধনা করে এমনকি মানুষের সেবায় তারা নিবেদিত। উপস্থিত সকলে এই যুক্তিকে সমর্থন করে পাগলা সমিতির নাম পরিবর্তনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই সর্বসম্মতিক্রমে পাগলা সমিতির নাম পরিবর্তন করে যুগোপযোগী সেবক সমিতি নামকরণ করেন।
এ সময় তাদের মধ্যে শুধুমাত্র সবাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেবক সমিতির প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন ফরিদপুর জেলার (বর্তমান গোপালগঞ্জ) কোটালীপাড়া থানার বটবাড়ী গ্রামের বাবু মাধু সরকারের কনিষ্ঠ পুত্র রেভাঃ রূবেন সরকার মহাশয়।
কালের পূর্ণতায় অনেকেই গতায়ু হলে রেভাঃ রূবেন সরকার পাগলা সমিতির প্রধানরূপে কাজ চালাতে থাকেন।
এসময় ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে একদিন রবিবারে বুরুয়াবাড়ী খ্রীষ্টান ব্যাপ্টিষ্ট মিশনে ভারতের ঊড়িষ্যা প্রদেশের কটাক গগরের নিবাসী শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিষ্ট হোম মিশনের কাজ ছেড়ে দিয়ে শাস্ত্রজ্ঞানী পণ্ডিত, ঈশ্বরভক্ত খ্রীষ্টদাস জ্ঞান্দ্রে নাথ সিং উপস্থিত হলেন। রবিারের উপাসনা পরিচাণনার সময় বৃষ্টি হচ্ছিল মুষলধারে। আর তার প্রার্থনায় বৃষ্টি থেকে গেল।
উপসনা শেষে তিনি বললেন, আমি বটবাড়ী রূবেন সরকার মহাশয়ের বাড়ী যাব। বটবাড়ীর কাছে গিয়ে রূবেন সরকারের নাম ধরে ডাক দিলেন। অতঃপর তার সাথে দেখা করে হঠাৎ বটবাড়ী থেকে কোথায় গেলেন তা কেউ জানতে পারেনি। শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষিত এই মানুষটি পথে পথে হাঁটতেন এমনকি পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতেন। তিনি প্রার্থনার সময় বলতেন- “প্রভু তুমি বলে দাও আমি কোন পথে যাব।” এই পথ পিয়াসী ঈশ্বরভক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ সিং প্রভুর ইচ্ছায় বঙ্গদেশে বরিশাল, ফরিদপুর মণ্ডলীর নতুনভাবে উদ্দীপনা দেবার জন্য ফিরে আসেন। তখন তিনি পাগলা সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন স্থানে বিল অঞ্চলে প্রচার কার্য আরম্ভ করেন। ফলে তদানিন্তন সময়ে ফরিদপুর বরিশাল বিলাঞ্চলে অবহেলিত আধুনাকলের সেবক সমিতি খ্রীষ্টিয় আদর্শকে সমুন্নত রাখে। বাংলার মণ্ডলীগুলিতে নব চেতনায় খ্রীষ্টিয় জাগরণ আসে। এ জন্য বর্তমানকালে খ্রীষ্টয় চিন্তাবিদগণ বিশেষভাবে সেবক সমিতিকে ভালবেসে তাদের নিরলস খ্রীষ্টিয় সংগ্রামের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করেন। এ সময় যারা ছিলেন তাদের সাথে পীড়ের পাড়ের হরমোহন সমাদ্দার, সুখলাল সমাদ্দার, জ্ঞানেন্দ্র নাথ সমাদ্দার, ধামসরের দানেশ দেউড়ী, আগৈলঝাড়ার রসিক হালদার, আনন্দপুরের মনিময় সরকার, ইন্দুরকানির শশীভূষণ পন্ডিত, মান্দ্রার উমেশ হাজরা, বুদ্ধি মিস্ত্রি ও জয়নাথ বাড়ৈ, কলিগ্রামের হেমন্ত তালুকদার, অশ্বিনী বৈদ্য ও ফণীভূষণ বৈরাগী একত্রে প্রার্থনা সভা করতেন।
ঘটনা প্রবাহে ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে যুগ ও সন্ধিক্ষণে রেভাঃ রূবেন সরকারের সহায়তায় এবং ভক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ সিং- এর প্রচেষ্টায় ইন্দুরকানির রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগীর অনুপ্রেরনায় বরিশাল জেলার অন্তর্গত গৈলার সানুহার গ্রামের রজনীকান্ত রায়ের গৃহে তৎকালীন পাগলা সমিতির প্রায় ৩০/৪০ জন ঈশ্বরভক্তের উপস্থিতিতে একটি বিরাট অধিবেশন হয়।
উক্ত অধিবেশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাগলা সমিতির একটি নতুন নামকরণ করা এবং ভবিষ্যতে যাহাতে সমিতির শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় ভাবধারা নিয়ে খ্রীষ্টিয় চেনায় সভার কাজ পরিচালিত করা যায় সেই জন্য সংক্ষিপ্ত সংবিধান প্রণয়ণ করা।
উপস্থিত ঈশ্বরভক্তগণ নাম পরিবর্তনের ব্যাখ্যা ও মতামত প্রকাশ করে বলেন যে, এই সমিতির ভক্তগণ কেবলমাত্র ঐশ্বরিক নামে পাগল তাই নয় বরং তারা ঈশ্বরের সেবা আরাধনা করে এমনকি মানুষের সেবায় তারা নিবেদিত। উপস্থিত সকলে এই যুক্তিকে সমর্থন করে পাগলা সমিতির নাম পরিবর্তনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই সর্বসম্মতিক্রমে পাগলা সমিতির নাম পরিবর্তন করে যুগোপযোগী সেবক সমিতি নামকরণ করেন।
এ সময় তাদের মধ্যে শুধুমাত্র সবাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেবক সমিতির প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন ফরিদপুর জেলার (বর্তমান গোপালগঞ্জ) কোটালীপাড়া থানার বটবাড়ী গ্রামের বাবু মাধু সরকারের কনিষ্ঠ পুত্র রেভাঃ রূবেন সরকার মহাশয়।
এসময় সেবক সমিতির পরিচাণার জন্য লিখিত সংবিধান পাশ করা হয়েছিল। কিন্তু ছাপানো হয়নি। এই লিখিত বিধি ব্যবস্থা সমিতির সভাপতির কাছে থাকত। সেই অনুসারে সভা পরিচালনা করা হতো। যাহার নমুনা আস্কর নিবাসী রেভাঃ নরেন্দ্র নাথ ঘরামী কর্তৃক পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে।
উপরে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন, ইন্দুরকানির কাঁশীনাথ বালা, বাঁশীনাথ বালা, অক্ষয় বাড়ৈ, হরনাথ বাড়ৈ, দহরপাড়ার যদাই সমাদ্দার, হরমোহন সমাদ্দার, আস্করের গগন পাগলা, আগৈলঝাড়ার রশিক লাল হালদার, আনন্দপুরের মনিময় সরকার, মান্দ্রার উমেশ হাজরা, বুদ্ধি মিস্ত্রি, জয়নাথ বাড়ৈ, কলিগ্রামের সুবল বৈদ্য, ফণীভূষণ বৈরাগী, বুড়ুয়াবাড়ীর জীবন হালদার, যোগেশ্বর হালদার, যাদব বাড়ৈ, নারিকেলবাড়ীর রাজাই হালদার, বাঁশীনাথ রায়, সাগর মৌয়ালী, মৈস্তারকান্দির নিবারণ ঢালী, গৈলা সানুহারের রজনীকান্ত রায় প্রমুখ ভক্তগণসহ আরো অনেকে।
পরবর্তী ১৯৪৫ খ্রীষ্টাব্দে মান্দ্রার ব্যাপ্টিষ্ট মণ্ডলীতে সেবক সমিতির প্রথম সভা হয়। সেই সভায় প্রভুর বাক্য প্রচার করেছিলেন রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগী।
বার্ধক্যজনিত কারনে ১৯৫২ খ্রীষ্টেব্দে রেভাঃ রূবেন সরকারের েদেহত্যাগের পর ১৯৫৩ এবং ১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত মাত্র দুই বছর রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগী সেবক সমিতির সভাপতি হিসাবে পরিচানা দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি সমিতির গান রচনা করেন এবং ঐচারমাঠের শ্রীনাথ রায় পরীক্ষা করে সুর দিতেন।
অতঃপর ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দে রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগীর সুপারিশক্রমে স্বর্গতঃ রূবেন সরকারের সুযোগ্য সন্তান রেভাঃ প্রসাদ সরকার সেবক সমিতির সভাপতির দায়িত্ববার গ্রহণ করেন। অবশেষে ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর আনুমানিক ভোর ৩টায় শ্রীরামপুরে প্রভূতে নিদ্রিত হন।
১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলার মোকসেদপুর থানার অন্তর্গত কলিগ্রামে এ্যাংলিকান মণ্ডলীর সভ্য বাবু হেমন্ত তালুকদার ও তার সহধর্মীনি সেবক/সেবিকা হয়েছিলেন ফলে চার্চের কঠোর বিধিনিষেধ জারীকৃত থাকা সত্বেও তাদের বাড়ীতেই কলিগ্রাম সেবক সমিতির প্রতিষ্ঠা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইতিপূর্বে ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দে রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগীর অনুপ্রেরণায় মাদ্রা নিবাসী বাবু অমর মন্ডলের প্রচেষ্টায় কলিকাতায় পশ্চিম বঙ্গ সেবক সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কালক্রমে প্রিয়নাথ বৈরাগীর পুত্র নলিনী রঞ্জন বৈরাগী তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সেবক সমিতির নেতৃত্ব দেন।
১৯৮৪ খ্রীষ্টাব্দে বাবু নলিনী রঞ্জনের মৃত্যুর পর কলিকাতা নিবাসী সেবক/সেবিকাগণ পশ্চিমবঙ্গ সেবক সমিতির পরিচালনার নেতৃত্বে দেন। বর্তমানকালের পশ্চিমবঙ্গ সেবক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি রেভাঃ অঞ্জন সিং িএবং সম্পাদক বাবু দিবাকর হালদার। সেখানে মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান আছে।
১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে ১৭ই মার্চ রেভাঃ রজনীকান্ত রায় দেহত্যাগ করেন। তাঁর স্থানে ইন্দুরকানির শশীভূষণ পন্ডিত সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্ত ীতে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন, গান বাজনায় পারদর্শী ও প্রার্থনায় শক্তি গুণসম্পন্ন বুরুয়াবাড়ীর যাদব চন্দ্র বাড়ৈ। পর্যায়ক্রমে তার স্থালাভিষিক্ত হন বাবু দানিয়েল ওঝা।
১৯৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বাবু যাদব বাড়ৈর মৃত্যুর পর ১৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দে নারিকেলবাড়ীর বাবু যোগেশ চন্দ্র হালদার সেবক সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৮২ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ই নভেম্বর রেভাঃ প্রসাদ চন্দ্র সরকার স্বর্গধামে আশ্রয় নেন, ফলে তখন বাবু যোগেশ চন্দ্র হালদারকে সভাপতি এবং কলিগ্রামের বিবেকানন্দ (ঠাকুর) বালাকে সহ-সভাপতি এবং স্বর্গত প্রসাদ চন্দ্র সরকারের জেষ্ঠপুত্র হর্ষনাথ সরকারকে সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৮৫ খ্রীষ্টাব্দে ৩০শে অক্টোবর বরিশাল জেলার অন্তর্গত আস্কর ব্যাপ্টিষ্ট মণ্ডলীতে যুক্ত সেবক সমিতির পরমর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত পরামর্শ সভায় যুক্ত সেবক সমিতিকে আবার কেন্দ্রীয় সেবক সমিতি বলা হয়। এই সভায় ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ জন সেবক/সেবিকা ও বিভিন্ন মণ্ডলী থেকে ২৮ জন, সর্বমোট ৯৩ জন উপস্থিত ছিলেন। পরামর্শ সভার আলোচ্য বিষয় ছিল সেবক সমিতির ১০০তম জুবিলী বার্ষিক উদ্যাপন এবং সেবক সমিতির ইতিহাস ও সেবক সংগীত প্রকাশের সিন্ধান্ত।
১৯৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ১২ ও ১৪ই ফেব্রুয়ারী ইন্দুরকানি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে জুবিলী বর্ষ উদ্যাপনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। জুবিলী বৎসর অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত সেবক/সেবিকাগণ সকলে একমত হয়ে পূর্বের সেবক সমিতিকে বাংলাদেশ সেবক সমিতি নামকরণ করেন। সফল কার্যক্রম ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হইতেছে।
১৯৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ১২ ও ১৪ই ফেব্রুয়ারী ইন্দুরকানি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে জুবিলী বর্ষ উদ্যাপনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। জুবিলী বৎসর অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত সেবক/সেবিকাগণ সকলে একমত হয়ে পূর্বের সেবক সমিতিকে বাংলাদেশ সেবক সমিতি নামকরণ করেন। সফল কার্যক্রম ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হইতেছে।
ইহা ছাড়াও শাখা সংগঠনে নিজস্ব কমিটিতে এলাকাভিত্তিক যে সকল সেবক/সেবিকা দায়িত্ব প্রাপ্ত আছেন তাদের প্রার্থনা ও আত্মিক পরিচানায় সারা বছর গ্রামে গঞ্জে প্রত্যন্ত এলাকায় সকল সেবক/সেবিকাগণ সুসমাচার কার্যসহ শোকার্ত পীড়িতের সেবায় রত আছেন। ইতিকথার প্রেক্ষাপটে মর্মকথা হল বাংলাদেশ সেবক সমিতি প্রত্যেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর প্রাণপ্রিয় প্রার্থনার সংগঠন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় রেভাঃ রূবেন সরকার মহাশয়, সেবক সমিতির স্থায়ী সভাপতি হিসাবে আত্মনিবেদিত প্রাণপুরুষ। ঈশ্বরভক্ত রেভাঃ প্রিয়নাথ বৈরাগী খ্রীষ্টগতপ্রাণ সংস্কারক। এজন্য বলা যায় পবিত্র শাস্ত্রে লিখিত- সমাগম তাম্বুর মত পবিত্র ঈ্শ্বরই একমাত্র বাংলাদেশ সেবক সমিতিরূপ তাম্বুর প্রতিষ্ঠাতা।
মূলতঃ বাংলাদেশ সেবক সমিতি একটি অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব নন্দিত আন্তঃমাণ্ডলিক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
প্রার্থনার বন্ধন, সুসমাচার প্রচার, আর্তের সেবা ও বিশ্বমানব মৈত্রী প্রতিষ্ঠাই এই সংগঠনের লক্ষ্য। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সকলের প্রার্থনা ও পবিত্র আত্মার পরিচালনা কামনায় শেষ করছি।
প্রার্থনার বন্ধন, সুসমাচার প্রচার, আর্তের সেবা ও বিশ্বমানব মৈত্রী প্রতিষ্ঠাই এই সংগঠনের লক্ষ্য। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সকলের প্রার্থনা ও পবিত্র আত্মার পরিচালনা কামনায় শেষ করছি।
অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য পাঠককূলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমেন।
সূত্রঃ প্রকাশক বাবু উইলিয়াম ঢালীর প্রকাশিত সেবক সঙ্গীত প্রথম সংস্করণ থেকে সংগৃহিত।
সূত্রঃ প্রকাশক বাবু উইলিয়াম ঢালীর প্রকাশিত সেবক সঙ্গীত প্রথম সংস্করণ থেকে সংগৃহিত।
একটি অভাবনীয় উদ্দেগ
উত্তরমুছুনgreat job
উত্তরমুছুন