খ্রিষ্টিয় উপাসনার গান- সেবক সঙ্গীত (Sebok Sangeet)

সেবক সঙ্গীত

(১)
আলেয়া-একতালা


অপার মহিমা তব, নাহিক হে তুলনা
অতুল তোমার প্রেম, কে করে হে বর্ণনা।

১। তুমি নিজ পুত্র দিলে, তরিতে পাতকিদলে
দিয়াছ সকলি প্রভু করিয়া ত করুনা।

২। শোক-দুঃখে অভিভুত, ছিলাম যখন পিতঃ
তোমারই প্রেম-বাহুতে, করেছ হে সান্তনা।

৩। তোমার শ্রীমুখ-জ্যোতি, দেখিয়াছি দিবারাতি
রক্ষিয়াছ নাথ তুমি, হতে বিপদ যন্ত্রণা।

৪। যাগ যজ্ঞে নহ প্রীত, তব যজ্ঞ চূর্ণ চিত
লহ আজি তাহা পিতঃ, পূর্ণ কর কামনা।
- তিনকড়ি চট্টোপাধ্যায়
_________________________________________________________________


(২)
আমরা যীশুর সেবক- আমরা যীশুর সেবায়
জীবন কাটাব ভাই তাঁহার সেবায় (এই ধরায়)।

১। যে রত থাকে ভাই যীশুর সেবায়
আনন্দে মেতে যীশুর নাম গুণ গায়;
আমরা যীশুর নামে এসে এক স্থান
নাচিয়ে যীশু নাম গুণ গাই।

২। যখন আমরা সবি একস্থানে, ডাকি হয়ে
এক প্রান যীশুর নামে
তিনি নিজ গুণে আসেন সেখানে তাই তাঁর
আত্মার শক্তি আমরা পাই।

৩। যীশু আছেন মোদের হৃদয়ে-রে ভাই
অনিত্য অন্তিমের কোন ভাবনা নাই
তিনি আছেন যেখানে নিবেদন সেখানে, মহানন্দে
মেতে আমরা জয় যীশু জয় গাই।
-রজনীকান্ত রায়
____________________________________________________________________

(৩)
ভৈরবী খেম্‌টা
অভয় বাণী শুনবার আশে আছি চেয়ে মুখপানে।
নীরব থেক না আর বাক্য ব্রহ্ম, একবার কথা বল চাঁদ বদনে।

১। মুখের বাক্যে সৃষ্টি, স্থিতি, লয়
জীবন মরণ, সুখ-দুঃখ-তপি,
কত আসে আবার যায়।
তোমার মুখের বাক্যে সৃষ্টি হইল, আবার
প্রলয় হবে শুনি শেষ দিনে।

২। তোমার আজ্ঞায় এলেম জগতে
আবার যেদিন হুকুম হবে, ফিরে হবে হে যেতে
আজ মোর জীবনকালে কথা বল
আমার আসা যাওয়ার এই মাঝখানে।

৩। অগোচরে থেকে আড়ালে
কত দয়া কত অনুগ্রহ দিয়েছ ঢেলে
আবার বিপদ কালে দেখা দিয়ে উদ্ধার করেছ এ অধম জনে।

৪। দাঁড়ালে আজ সম্মুখে এসে,
রূপের ছটায় সারা জগত সৃষ্টি গিয়াছে ভেসে
বল “শান্তি হোক, হোক নূতন সৃষ্টি”
আমার জরাজীর্ণ এ জীবনে।
- প্রিয়নাথ বৈরাগী
____________________________________________________________________

(৪)
বসন্ত-একতাল
আজ মহা পরিত্রাণ ভাই, আজ মহা পরিত্রান;
যীশু উঠেছেন দেখ পাপীরে করিতে ত্রাণ।

১। চেয়ে দেখ কবর পানে, যীশুর দেহ নেই সেখানে,
(শুধু) বস্ত্রগুলি পড়ে আছে, দূতে করে সাক্ষ্যদান।

২। মগ্দালিনী মরিয়ম, করেন যীশুর অন্বেষণ;
(ও ভাই) মালি ভেবে শুধায় তারে, কোথায় আমার ত্রাণধন।

৩। বিশ্বাসী যদিও মরে, তবু সে উঠিবে পরে।
(ও ভাই) মৃত্যুঞ্জয়ী যীশু সেই, সত্যের চির প্রমান।

৪। যীশু আগে স্বর্গে গিয়ে, স্বর্গ দুয়ার দিলেন খুলে,
যাব যাব স্বর্গে যাব, যীশুর রক্তে পেয়ে ত্রাণ।

৫। নেচে নেচে তালে তালে, সবে মিলে বাহু তুলে,
(এখন) জয় যীশু, জয় যীশু, বলে কর তাঁহার গুণ কীর্তন।
-ইউসুপ বিশ্বাস
____________________________________________________________________

(৫)
সুর-ভাটিয়ালী
অবুঝ মন রে আমার মানেনা প্রবেধের বারণ
ওরে দেখা দিয়ে আমায় ফেলে, কোথায় কর যে পলায়।

১। ব্যথার আসন বুকে পাতিয়া তুমি আসবে বলে,
জীবনে মোর জীবন সাথিয়া;
কবে দুঃখের মধ্যে এসে তুমি, করবে আমায় বক্ষে ধারণ।

২। আমার এই গান না শুনবে যদি
তবে কণ্ঠে কেন মোর সুর দিলে নিষ্ঠুর দরদী
তোমার দেওয়া সুরে নিরবধি কাঁদি যেন, প্রভু তোমার কাঁদন।

৩। অধম বলে যদিও দিনযামী
তবে কেঁদে ফিরে তবুও বিশ্বাস হারাইনি আমি
কবে দুঃখের মধ্যে এসে তুমি, করবে আমায় বক্ষে ধারণ।
-মতিলাল মন্ডল
____________________________________________________________________

(৬)
অপূর্ব প্রেমে প্রভু এ জগৎ মাতালে
তুমি প্রেম বলে, ধরাতলে বিজয়ী হইলে।

১। তুমি প্রেম করে, (যীশু হে, ও আমার দয়াল যীশু)
তুমি প্রেম করে নরের তরে, এ ভবে আইলে।

২। তুমি ভবে এসে, (যীশু হে, ও আমার দয়াল যীশু)
তুমি ভবে এসে, কত ক্লেশে জীবন যাপিলে।

৩। তুমি পাপীর তরে, (যীশু হে, ও আমার দয়াল যীশু)
তুমি পাপীর তরে, ক্রশোপরে মরণ ভুগিলে।

৪। আমার প্রেম-তরী, (যীশু হে, ও আমার দয়াল যীশু)
আমার প্রেম-তরী, প্রেমকরি পাপী পার করিলে।

৫। আমার প্রেম-রতন, (যীশু হে, ও আমার দয়াল যীশু)
তুমি প্রেম রতন, তোমায় যতন করিব সর্বকালে।

৬। তোমার প্রেমরসে, (যীশু হে, ও আমার দয়াল যীশু)
তোমার প্রেমরসে, বঙ্গদেশে, মাতাও সকলে।
-রামচরণ ঘোষ (১৮৮৩)
____________________________________________________________________


(৭)
আজ এই শুভ দিনে চাহি তব দয়া
হও বিরাজিত রাজরাজেশ্বর আজ এই সভা মাঝে
প্রসারিত কর তোমার স্নেহশীতল পক্ষ ছায়া।

১। যে যুবক যুবতী আজি বসেছে চরণে তব
কৃপাদৃষ্টি তাদের প্রতি কর তুমি
নিজ হস্তে তাদের শিরে দেও আশীর্বাদ অভিনব
তোমার প্রেমানন্দে তুমি পূর্ণ কর তাদের হিয়া।

২। সুখে দুঃখে তাদের দৃষ্টি থাকে যেন তোমার প্রতি
থাকে প্রাণে প্রজ্জ্বলিত তোমার ঐ শ্রীমুখের জ্যোতি
যেন তোমার শুভ ইচ্ছা পালন করে দিবারাতি
তোমার পায়ে উৎসর্গ করি এ দম্পতির জীবনকায়।

৩। মুক্তি প্রদান কর এদের তোমার নিজ সন্তান বলে
রাখ এ দু’জনে তুমি তোমার উদার চরণ তলেে
এ জীবনে জীবনান্তে ইহকাল আর পরকালে
করে যেন তোমার সেবা চিত্ত মন প্রাণ দিয়া।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী
____________________________________________________________________

(৮)
কীর্তনাঙ্গ কাওয়ালী
আজি পূজিব পদ রাজীব তব, হে দেবাদিদেব নন্দন
তোমার শ্রীপাদপদ্ম পরমারাধ্য, দেব মানব বন্দন।

১। স্বর্গে সাধুজন বৃন্দে সঁপিয়া মুকুট মণি
সদা করে নিশিদিন, বিরামবিহীন, যীশু নামে জয়ধ্বণন হে।

২। মোরা অভাজন অতি দুরাত্মা দুর্মতি, ভকতিবিহীন পাপী;
তোমার শ্রীচরণ অর্চণ করিতে মনন, দেহ প্রাণ পদে সঁপি হে।

৩। এসে হও অধিষ্ঠিত হে ঈশ্বর সুত; কৃপা করি নিজ গুণে
কর বাসনা পূরণ, দেও দরশন, অধম পাতকী জনে হে।

৪। তোমার জিন আত্মাদানে, কর সর্বজনে, একচিত্ত একমনা;
করি আত্মসমর্পণ, পূজিব চরণ; করিব হে আরাধনা হে।

৫। মোরা বাক্য-কায়-মনে, লুটাব চরণে, চির-জীবনেরি মত,
প্রভু শুন হে বিনতি, বিরত শকতি, কর কৃপা দৃষ্টিপাত হে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


______________________________________________________________

(৯)
আজি গানে গানে প্রচারিব প্রভু, তোমারই সুসমাচার
সে গানের সুর ভাসিয়া চলিবে দেশান্তরের পর
বিশ্ব ভূবন শুনিবে সে গান কন্ঠ মিলবে আর দেশান্তরের পার।

তব জনমের মহান বারতা, দিকে দিকে আজ ঘুঁচবে জড়তা
যে এসেছ, হে মুক্তিদাতা, ঘুঁচাতে জড়তা
তুমি যে এসেছ, হে মুক্তিদাতা, ঘুঁচাতে পাপের ভার দেশান্তরের পার।

সুরে ছন্দে রচিব, হে নাথ, তোমারি মহা প্রেম-গাঁথা
সে মহা প্রেমের বাঁশি যে আজিকে জুড়াবে দুঃখ ব্যাথা।
গানে গানে মোরা প্রচারিব, প্রভু, তব জনমের সুসমাচার
বিশ্বভূবন শুনিবে সে গান কন্ঠ মিলাবে আর দেশান্তরের পার।
-ভক্তি সাহা


______________________________________________________________

(১০)
আজ এই কালনিশি ভোরে-
স্বপনে শুনেছি মধুর মঙ্গল-ধ্বনি-আকাশ জুড়ে।

১। ডুবেছে চন্দ্র তারা, আকাশে আঁধার ভরা চেতনহারা
প্রাণী নিঃশব্দ সংসারে।
বেজে উঠল দূতের বাণী মধুমাখা সুরে,
“তোরা জেগে উঠে বস জগদ্বাসী দেখবি যদি নয়ন ভরে।”

২। চেয়ে দেখ মেলে নয়ন, ওঠে ঐ ত্রাণের মতন,
ভেসে গেল ত্রিভূবন আলোকের জোয়ারে।
খুলে গেছে সোনার দুয়ার আনন্দ নগরে
নরের সাধনের ধন ঈশ্বর নন্দন এসেছে আজ মর্তপুরে।

৩। আনন্দে হয়ে মত্ত, চলেছে পথিক যত
দেখিতে নবজাত ঈশ্বর কুমারে
দায়ুদ নগরে বৈৎলেহেমের গোশালার ভিতরে
ঐ দেখ ফুটেছে সেই সোনার পদ্মরূপে ত্রিলোক আলো করে।

৪। ধন্য আজ এ ধরনী, ধন্য সেই গুণমণি
ধন্য তাঁর প্রেম তরণী সংসার পারাবারে।
পার হয়ে সব পাপী তাপী যাবে, অমরপুরে হবে নামের গুণে
শমন দমন, দুঃখ-তাপ পলাবে দূরে।

৫। “জয় যীশু যীশু” বলে, আয় মোরা যাই সকলে
তাঁহার সেই চরণতলে পূজিতে তাঁহারে!
“জয় যীশু, জয় যীশু” বল সবে উচ্চঃস্বরে, কর আনন্দ গান
গাও যীশু নামে, বল ঐ নাম বদন ভরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


__________________________________________________________________

(১১)
আজ এই নিশি ভোরে একবার ডাক দেরে মন সেই গুণনিধি
বদন ভরে ডাক দেখি তায় আজ একবার ডাকরে হৃদয় ভরে।

১। হল যখন নিশি আঁধার, আমি হারালাম তা পেলাম না আর
হৃদয় রতন আমার;
ভোরের বেলায় দুঃস্বপনে আমি দেখছিলেম তাঁরে।

২। এবার আঁধার কেটে গেছে, একবার ডাক দেখি যে কোথায় আছে
এই গজৎ মাঝে;
দয়া যদি করে সেজন, দেখা দিলে দিতে পারে।

৩। দেখা যদি না দেয়-সেজন, ও তোর জীবনের আর কি প্রয়োজন
মিছে সব আয়োজন;
একবার দেখা পেলে তাঁরে জীবন সফল এ সংসারে।

৪। বদন ভরে ডাক দেখি-তায়, একবার খুঁজে দেখ সে কোথায় আছে 
আজ এই প্রভাত সময়;
কি জানি সে খুঁজে তোর কাছে তোর হৃদয় মন্দিরে।

৫। স্বর্গের বিভব ত্যাজ্য করি, ভবে এসেছে সেই ত্রাণ-কান্ডারী
নরের দুঃখ হারী;
ঐ শুন কার ঐ মধুর ধ্বনি, কে ঐ ডাকিছে তোমারে।

৬। ডাক যারে হৃদয়ে তুমি তোমার হৃদয়ের সেই অন্তযামী
সেই জগৎ স্বামী;
তুমি যারে খুঁজে বেড়াও সেজন খুঁজিছে তোমারে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_________________________________________________________________


(১২)
আজ এই প্রভাত কালেে
ঐ যে কে কাঁদে ঐ উদ্যান মাঝে- যীশু যীশু বলে।

১। ঐ যে শুনি কে কাঁদে ঐ পাগলাপারা
তাঁর কাঁদনে দিচ্ছে সাড়া কোকিলে
শুনে আকাশে প্রভাতি তারা ভাসে চক্ষের জলে।

২। ঐ যে দেখি পূর্ব আকাশে দিল দেখা
নিশি ভোরের সোনার রেখা সকালে
নারী কবর পাশে কাঁদে একা পড়ে ভূমিতলে।

৩। ঐ যে বসে প্রভু যীশুর কবর ধারে
কবরে না পেয়ে তারে অকালে,
বুঝি মরিয়মের বক্ষ পুড়ে শোকের অনল জ্বলে।

৪। ওগো নারী মুছে ফেল নয়নের জল
নিভে যাক ঐ শোকের অনল একালে,
ছেড়ে কবর উঠে গেছেন দয়াল দেখবি সকলে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_________________________________________________________________

(১৩)
আলইয়া-ঢিমে তেতালা
আজি- স্বাগতঃ স্বাগতঃ শুভদিনে
বন্দে প্রেমানন্দে বসুন্ধরা ঐ শ্রীচরণ অরবিন্দে;
বিশাল এ ব্রহ্মান্ডে মত্ত উল্লাসে আনন্দ গানে।

১। বিচিত্র বাদ্য ধ্বনি ত্রিবিদ তোরণ দ্বারে
ঝংকারে সুবর্ণ বীণা স্বর্গীয় দূতের করে
যীশু নামে মহাগীতি উঠিতেছে ত্রিভূবনে।

২। গোলক আলোয় ত্যাজি বিলাইতে মুক্তিধন
জন্ম নিলে ভূমন্ডলে যীশু ঈশ্বর নন্দন,
প্রণমে চরণাম্বুজে দীনহীনে এই অভাজনে
হও তুমি অধিষ্ঠিত দীনের হৃদি ভবনে।
- প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৫/৮/১৯৪৭ খ্রীঃ)


_________________________________________________________________

(১৪)
মিশ্র খাম্বাজ-ঢিমে তেতালা

আজি সকাতরে ডাকিতে তোমায়-দয়াময়
শ্রান্ত-ক্লান্ত এ তনু ব্যাথা জর জর
বিষাক্ত বিষাদ কাঁটা ফুটেছে হৃদয়ে।

১। পথ হারা, সাথী হারা, দিশেহারা অন্ধকারে
গহন কাননে আমি বড় নিরুপায়।

২। এ সঙ্কট কালে তুমি যীশু বিপদ ভঞ্জন
অধমে তারিতে প্রভু, হও এসে উদয়।

৩। অন্ধকারে আলো তুমি, নিরাশ জনের আশা
নিজ গুণে দীনহীনে- তারো অসময়।


_________________________________________________________________

(১৫)
গারা- কাওয়ালী

আমি ‘যীশু যীশু’ বলে যবে ডাকি তোমায়
তুমি সাড়া দিও প্রাণে, ওহে দয়াময়।

১। দিও তোমার পাদপদ্ম, হে মম পরমারাধ্য
(আমার) শুদ্ধ হয় যেন চিত্ত পাদ ধূলায়।

২। তোমার শ্রীমুখে জ্যোতি, দেখিতে দিও শকতি
(মনের) সন্দেহ ভীতি যেন দূরে পলায়।

৩। বায়ু বিকম্পিত নল, সম এ চিত্ত চঞ্চল
(প্রভু) দিও প্রাণে বল তোমার সেবায়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_________________________________________________________________

(১৬)

আমি করবো কেবল তোমার গুণগান, বসে দিনরাতে
সকাল যাবে দুপুর যাবে, বিকেল যাবে গীতে।

১। সন্ধ্যা বেলায় তারায় তারায় আকাশ ছেয়ে যাবে
আগা গোড়ায় আঁধার লাগবে ধরায়।
তোমার নামের প্রসংসা গান করব আকাশ পথে।

২। গভীর হবে নিশিথিনী, তখন ঘুমাবে জগতের প্রাণে
ওহে ত্রানমনি নীরব, নিথর কালে, নিশি উঠবে মেতে।

৩। কেটে যাবে কালনিশি তখন কোকিল ডাকে কুঞ্জে বসি
বাঁজবে ভোরের বাঁশি
তোমার নামের প্রসংসা গান, আমি করব সেই প্রভা।ে

৪। সুখে দুঃখে সারা জীবন, তোমার গুণগানে করব যাপন
আমার এই আকঞ্চন,
(শেষে) ঐ নাম গেয়ে যাব গোলক ধামের পথে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৭)

আমি দেখে এলাম গো, সেই নরোত্তম- গেৎশিমানী বাগানে
প্রভু জেগে আছেন একা, যখন জাগে না কেউ ভূবনে।

১। জগৎ সংসার আঁধার মগন, জগৎবাসী ঘুমে অচেতন
একা জেগে আছেন ঈশ্বর নন্দন, নিদ্রা নাই তাঁর নয়নে।

২। সোনার অঙ্গ কাঁপে থর থর, ঘর্মধারা বহে নিরন্তর
দেখি ভূলুণ্ঠিত ঈশ্বর কুমার, শয়ান ধূলি শয়নে।

৩। বন্ধু কে নাই রে নিকটে, দীনবন্ধুর বিষম সঙ্কেটে
হায়রে এ অঘটন কেন ঘটে, সৃষ্টিকর্তার জীবনে।

৪। বাঁচাইতে পাপী নারী-নর, জগতের পাপ লয়ে শিরোপর
আজি ব্যাকুল হলেন ঈশ্বর কুমার, মুক্তির পথ অন্বেষণে।

৫। মরণ তিনি করেছেন বরণ, বাঁচাইতে পাপী নরগণ;
এবার পাবে এই বিম্ব ভূবন, জীবন তাঁহার মরণে।
প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯১৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৮)

আমি আর সইতে পারি না
আমার ত্রান নাথ আজ ক্রুশেতে।

১। পথে লোক যাচ্ছে সারি সারি হে
তারা দেখিয়া কেউ দেখেনা।

২। নিষ্ঠুর সেনাগণে বর্শা হানে হে
তারা কারো বারণ শোনে না।

৩। প্রভুর পিপাসা হয়েছে ভারী হে
একটু জল চেয়ে তা পেলেন না।

৪। খেদে পর্বতগণ বিদীর্ণ হইল হে
হেরে ত্রাণনাথের যাতনা।

৫। যীশু তোমার জন্য এত সহিলেন হে
তোমার কঠিন মন কি গলে না।

-বিন্দুনাথ সরকার ও কৈলাস চন্দ্র সরকার (১৮৮৬ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৯)

আমি দুঃখে সুখে সদা তাঁরই মুখ চেয়ে রই
এ সংসারে কেবা আমার প্রিয় যীশু বই।

১। দুঃখের সময় হলে, তাঁরই কাছে যাই চলে
চক্ষু দুটি মুছে দিলে, সবই ভুলে রই।

২। হয়ে সুখী সুখকালে, ডাকি তাঁরে যীশু বলে
মনের কথা তাঁরে বলে, আরও সুখী হই।

৩। যীশু আমার সুখে সুখী, যীশু আমার দুঃখে দুঃখী
যীশুর কাছে যত থাকি, তত সুখ পাই।


_______________________________________________________________________

(২০)

১। আমি তোমার নাথ আছি চিরকাল, তোমা ছাড়া কারো নই
থাকি বিশ্বাসে তব সন্নিধান বাসনা এ নিয়তই।

ধূয়া- আমায় লহ, লহ, লহ যীশু হে, ক্রুশের আরও সন্নিধান
দেহ আমার আমায়, আমায় প্রভু হে তব কুক্ষিদেশে স্থান।

২। অনুগ্রহ রূপ তৈলে আমারে, অভিষিক্ত কর নাথ
তোমার পবিত্র পরিচর্যাতে থাকি যেন দিন ও রাত।

৩। প্রার্থনাতে পাই কত আনন্দ, যখন শুনি তব রব
প্রাণের বন্ধু প্রায় শুনেছেন সদাই আমার কাতরোক্তি সব।

৪। তব সুগভীর প্রেমের মহিমা বোঝে সাধ্য আছে কার?
বুদ্ধির অতীত উচ্চ স্বর্গসুখ, বর্ণনা সাহিক তার।

৫। যবে যাব নাথ স্বর্গ-কাননে, মৃত্যু নদীর পরপার
তখন বুঝিব প্রেমের মহাত্ম, স্বর্গসুখ কি চমৎকার।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২১)

আমার দেখতে দেখতে ফুরাল রে দিন
যাবার সময় হইল।
ঐ দেখ সূর্য বসে পাটে, বুঝি সন্ধ্যা হয়ে এল।

১। বোঝা বন্ধন যত আছে, সে সব ছাড়তে হবে সকল মিছে
সময় এল কাছে
কে আছে নিকটে আমার, তোমরা আমার সঙ্গে চল।

২। কে যাবি ভাই আমার সাথে, নইলে একলা আমার হবে যেতে
আজ এই আধাঁর রাতে
পরাণ আমার কাঁপে ডরে, তোমরা যীশু যীশু বল।

৩। সাথের সাথী আছে সেজন, যেজন আমার জন্য দিল জীবন
সইল দারুণ মরণ
এ জীবনের দুঃখ সুখে, সেজন আমার সঙ্গে ছিল।

৪। আজ আমার যাবার সময়, আমার কাছে আছে সেই দয়াময়
সঙ্গে যাবে নিশ্চয়
নিয়ে যাবে হাতে ধরে, পথের আধাঁর করে আলো।

৫। যীশু যীশু যীশু বলে, তোমরা গাও সকলে বাহু তুলে
আমার যাবার কালে
যাবার কালের শেষ নমস্কার, তোমরা সবার কাছে বলো।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২২)
(ভাটিয়ালী-ঠুংরী)

আমার জুড়াল প্রাণ এসে যীশুর পায়
এসে দয়াল যীশুর শ্রীচরণ তলে, আমার ঘুঁচল ভবের ভয়।
(এসে দয়াল যীশুর চরণতলে)।

১। ঐ চরনে নাই রে দুঃখ-ক্লেশ, নাইরে ভবের জ্বালা পাপ অশান্তির লেশ
বুঝি দুগ্ধ মধু প্রবাহী সেই দেশ, আছে ঐ চরণ তলায়।
(ও সেই দুগ্ধ মুধু প্রবাহী দেশ)।

২। মনে আমি করেছি মনন, প্রভুর ঐ চরণে থাকব সর্বক্ষণ
আমার এই পাপ দেহে যাবৎ রয় জীবন, রব ঐ চরণ সেবায়।
(দেহে যতদিন মোর জীবন আছে)।

৩। সময় যেদিন ফুরাবে আমার, সেদিন যেতে হবে ছেড়ে এ সংসার
আমি হয়ে যাব মৃত্যু নদী পার, যীশুর ঐ চরণ নৌকায়।
(আমি মৃত্যু নদী পাড়ি দিব)।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৩)

আমার হৃদয় মাঝে, সকাল সাঁঝে কে যেন কি কয়
আমার উতলা হৃদয়।

১। বলে, ‘আমি ইস্রায়েল কূলের প্রহরী, কি বিদা কি বিভাবরী
আছি জেগে যগি যুগান্তর ধরি, আশ্রিতের পাহারায়।

২। ঐ যে শুনি- ‘নিদ্রা নাই দু’চক্ষে আমার, দুই নয়নে নাই তন্দ্রাভার
জাগি দিবা-নিশি পাশে তোমার, তোমার পাশের ছায়ায়।’

৩। ঐ যে শুনি, ‘রক্ষা করি তোমার জীবন অমঙ্গল করি নিবারণ
আমার চিরদিনের এই জাগরণ, ভালসেবে তোমায়।’

৪। ঐ যে, শুনি, ‘জন্মদিনে আর মরণের কাল, দুঃখের দিন আর সম্পদের কাল
আমি সকাল বিকাল-সন্ধ্যা সকাল, চিরকালের সহায়।’
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৪)

আমার কেটে গেছে মনের অন্ধকার- যীশু নামের বলেে
আঁধার কেটে যায়, ক্ষুধা মিটে যায়, যীশু নামের বলে।

১। মনের আঁধার যায় গো কেটে ডাক্‌লে ঐ নাম অকপটে
মনে আলো ওঠে জ্বলে,
যেমন নিশির আঁধার থাকে না আর হে
একবার ভানু দেখা দিলে।

২। নামের রসে ক্ষুধা ঘোঁচে, শুষ্ক হৃদয় সাগর মাঝে
মহা আনন্দের ঢেউ খেলে
যখন ডাকি ঐ নাম, বৈকুণ্ঠ ধাম হে, নেমে আসে ধরাতলে।

৩। নামে নামে আসে স্বর্গ, ধর্ম, অর্থ, চতুবর্গ
সুফল যীশু নামেই ফলে
তোমরা গাও যীশুর জয়, যাদের হৃদয় হে
সদ্য ত্রিতাপ জ্বালায় জ্বলে।

৪। ঘোঁচে নামে সকল জ্বালা, শান্তি, সুখ- আনন্দের মেলা
মেলা হৃদয়-মাঝে মেলো।
যীশু নামের মতন পরম রতন হে
আর কি আছে ভূমন্ডলে।

৫। যীশু নামে মেলে মুক্তি, ধর্ম শাস্ত্রে শুনি উক্তি
যত সাধু জনে বলে
যীশু নামের বলে মুক্তি মিলে হে
ঐ নাম গাব হৃদয় খুলে।

৬। যীশু নামে বাঁধা সে জন, যার নামে যায় ভবের বন্ধন
আর এই পাপের বন্ধন খোলে
তোমরা গাও যীশুর জয় ব্রহ্মাময় হে
যত নরনারী মিলে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯৪৩ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২৫)

আমার প্রান কাঁদে তাঁর তরে, বড় ভালবাসি গো তাঁরে
তাঁরে রাখব আমার অন্তরে (যত্ন করে, ত্রাণেশ্বরে)।

১। যেদিন তাঁরে দেখেছিলাম গো, দারুণ ক্রুশের উপরে
সেদিন আমার মন ভুলেছিল গো
ঐ রূপ জেগেছে মোর অন্তরে।
(নগরবাসী, দেখ আসি)।

২। পাপীর কারণ যীশুর মরণ গো, দেখলাম ক্রুশের উপরে গো
আছেন বর্শাতে বিধান ত্রাণনাথ, রক্ত বিন্দু, ঝরে গো!
(পাপ ধু’তে, কুক্ষি হ’তে)।

৩। প্রেম করে পাপীর তরে গো, প্রাণ দিলেন ক্রুশো’ পরে গো
এমন প্রেম আর কে করেছে গো
(নয়ন ভরে দেখব তারে)।

৪। যীশুর প্রেম অনুপম গো, এমন মিলবে না সংসারে গো
আমি গাব যীশুর প্রেম গাঁথা গো
(যীশুর প্রেমে, পাগল হয়ে)।
-সূর্য কুমার সরকার


_______________________________________________________________________

(২৬)

আমার যত আশা, যত ভরসা, রাখি ঐ চরণে
যত কথা, যত ব্যথা, সদা জাগে আমার মনে।

১। যত আশা বেড়ায় ঘুরে, আমার অন্তরের এই অন্ধকারে
সারা হৃদয় জুড়ে
বলিতে মোর নাই শকতি, আমি বলিব কেমনে?

২। জাগে প্রাণে যত কথা, আমার হৃদয়ের এই গোপন ব্যাথা
ওহে জগৎত্রাতা
কারে জানাই কে বুঝিবে, আমার কে আছে ভূবনে।

৩। একবার যদি পাই দরশন, আমি জানাব এই মনের বেদন
মনে আছে মনন
এসে যদি বসো তুমি, আমার হৃদয় পদ্মাসনে।

৪। শুভ সময় এল আমার, আমার খুলে গেছে মনের দুয়ার
পরশ পেয়ে তোমার
পরশ দিলে দাও দরশন, আজ আর থেকো না গোপনে।

৫। থেকো না লুকায়ে তুমি, তুমি দীনহীনের আশা ভূমি
আমার অন্তর্যামি
পুরাও দীনহীনের আশা, আশা পারাও নিজ গুণে।

৬। খুলে দও এই জিহ্বা আমার, আমি বলিব যা আছে বলার
ঐ পাদপদ্মে তোমার
বোবা জিহ্বায় ফুটুক কথা, দয়াল তোমার পরশনে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৭)

আনন্দ ধরে না মনে
প্রিয় নাথের প্রেমালাপনে,
(মোরা) যীশুর প্রেমে বাদাম তুলে চলে যাব সিয়োনে।

১। (শুন) শুভ সমাচার, (যীশু) খুলে স্বর্গ-দ্বার
জীবন-মুকুট হস্তে লয়ে ডাকেন বারে বার,
(ওহে) যুদ্ধেতে বিজয়ী ভক্ত, স্বর্গ
 তোমার কারণে।

২। (স্বর্গ) পিতার ভবন, (অসংখ্য) সাধু দূতগণ
নাচিছে গাহিছে সদা প্রফুল্ল বদন
(পিতা) আব্রাহাম ও লাসার আছেন, যিহুদা নাই সেখানে

৩। (আছে) জীবন-বৃক্ষের ফল, (আর) শান্তি-নদীর জল
আহার পানে তৃপ্ত সব ভকতের দল
(আমরা) তাহাদের সঙ্গে রব, চেয়ে যীশুর মুখপানে।

-মধুসূদন সরকার। গোপালগঞ্জ (১৮৯৫ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২৮)

আমার জীবন প্রভু, সঁপি তব পায়
আমি তোমারি ধন তোমায় দিয়া, জুড়াই আমার হৃদয়।

১। লহ মম অভিমান, লহ মম প্রিয় মান গো-
তুমি লহ মম দিব্য জ্ঞান, প্রভু তোমারি সেবায়।

২। লহ মম উচ্চ পদ, লহ মম জাতি মদ গো
প্রভু লহ মম হস্তপদ, আমার চক্ষু কর্ণদ্বয়।

৩। লহ মম ধন জন, লহ মম পরিজন গো
তুমি লহ মম প্রাণধন, প্রভু বিনতি তোমায়।

৪। লহ মম ভালবাসা, লহ মম উচ্চ আশা গো
তুমি লহ সুখের লালসা, আশা যত এ ধরায়।

৫। আমার বলতে যাহা আছে, সকল দিলাম তোমার কাছে
পাগল প্রসাদের এই বাঞ্ছা আছে, রেখ শ্রীচরণ তলায়।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(২৯)
(সুরঃ ভৈরবী)

আয়না প্রেমের খেলা খেলি
মিলি সেবকদের দলে
সে খেলা খেলিলে
জীবনের মোক্ষ ফল ফলে। --- ঐ

১। যে খেলায় নাই হিংসা-দ্বেষ
যে খেলায় নাই কলুষিত
হবে মহাভাবের সমাবেশ
ভাসি নয়ন জলে। ঐ

২। হবে প্রেমের কোলাকুলি
আত্মিক সঙ্কীর্তনে মিলি
এসো জয় যীশু জয় বলি
মনরে আপনা পর ভুলি। ঐ

৩। গাহি প্রভুর ধন্যবাদ গান
হৃদয় বীনায় মিশায়ে তান
সঁপে দেই আজ মন প্রাণ
প্রভুর রাঙ্গা চরণ তলে। ঐ

৪। মিছা মায়ায় যত্ন হলে গেল রে দিন মিছা বয়ে
কি হবে অসারে চিত্ত নিয়ে
জনম গেল বিফলে। ঐ

৫। পাগল একি হলো ভবের খেলা বুঝি
সাঙ্গ হলো শেষের খেলা
জয় যীশু বল দুই বাহু তুলে।
-পিতর বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৩০)

আমার এই বাসনা, চরণ সাধনা করিব যতনে
আমি দিবা নিশি ধ্যানে বসিয়ে, চরণ পূজিব যতনে।

১। নয়ন জলে ধুয়ে চরন সাজাইব মনের মতন
বসে সুগন্ধি চন্দনেেআমি ঐ চরণে সঁপে দিলাম, আমার যা আছে ভূবনে।

২। কি কব তাঁর দয়ার কথা কতই ভাবে ঘুঁচায় ব্যাথা
(আমার) সেই রূপ স্মরণে
ও তাঁর প্রেম কাহিনী দিন যামিনী রে আমি ভুলিব কেমনে।

৩। ঐ চরণে শান্তি নদী বহিতেছে নিরবধি আমি শুনেছি শ্রবণে
আমি সেই নদীতে ডুবে রব রে, সদা জীবনে মরণে।

৪। সে জন ভবের জীবন বৃক্ষ, তাঁহার পাতায় হয় আরোগ্য
ব্যাধি হলে সাধুজনে, আমি লতা হয়ে জড়িয়ে রব রে, সুফল ফলিবে জীবনে।

৫। দুঃখে কিম্বা সুখে রাখ কাছে কিম্বা দূরে থাক
আমার এই বাসনা মনে
তুমি যেভাবে সেভাবে রাখ রে, চরণ পাই যেন অন্তিমে।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(৩১)

আমার ভগ্ন হিয়ার মগ্ন ব্যাথা গো
(তুমি) দূর করে দাও হে দয়াল
তোমার মধুর শান্তি প্রেম-প্রীতিতে
আজি শান্ত কর এ হৃদয়।

১। আমার জীবন পথ যে অন্ধকারময় গো
আমি কোন্‌ পথে যাই, কার কাছে কই
দয়াল যীশু গো
তোমার জীবন জ্যোতির আলো নিয়ে গো
আমার পথ করে দাও আলোময়।

২। আমার ভগ্নতরী পাপে ভারী গো
আমি বইতে নারি, ভয়ে মরি দয়াল যীশু গো
তোমার অসীম শক্তি প্রেম বলে গো
আমার হাল ধরে নিয়ে দাও অভয়।

৩। আমায় আর কত দিন ভবের মাঝে গো
তোমার কোন বা কাজে, কেমন সাজে
রাখবে দয়াল গো
দিও পদছায়া, ক্রুশের মায়া গো
আমার এইভাবে যেন কাটে কাল।
-ভারত বিশ্বাস


_______________________________________________________________________

(৩২)
আমার জীবন সন্ধ্যা হয়ে এল খুলতে হল নাও
তোমার প্রেম ডোরে বেঁধে মোরে
যথা ইচ্ছা তথা নিয়ে যাও।

১। ভব নদীর তুফান ভারি তাইতে আমি ভয়ে মরি ওহে দয়াময়
তুমি নিজগুণে নিও পারে, চরণ খানি আমায় দাও।

২। আমার একটু জীর্ণ তরী, পাপভারের বোঝায় ভারী কি করি উপায়
আমি বিপদে পড়িয়া ডাকি দেখা তুমি আমাদয় দাও।

৩। তাই তোমার নাম ভরসা করি অকূলে ভাসাইলাম তরী ওহে দয়ায়
তুমি অনুগ্রহ করে মোরে পারে এবার নিয়ে যাও।
-আনন্দ লাল বাড়ৈ (ইন্দুরকানী)


_______________________________________________________________________


(৩৩)
আসবেন প্রভু মেঘরথে
আবার ফিরে ধরাতলে।
মহাতূরি ধ্বনিসহ
পাঠাবেন দূত দলে দলে।

১। রবি শশী গ্রহ তারা
নভে হবে জ্যোতি হারা
বিলাপকারী মানবেরা
দেখবে তখন কৌতুহলে।

২। হানাহানি হিংসা দ্বেষে
ভরে যাবে ভূবন খানি
মহামারী ভূকম্পনে
ধ্বংস হবে জগৎ জানি।

৩। পাপী তাপী ত্রানকামী
হওগো প্রভুর অনুগামী
তারই আগমনের তরে
জেগে থাক প্রতিপলে।
-মানিক নাথ


_______________________________________________________________________

(৩৪)
আমার জীবন পথের আলো যীশু, সাথে সাথে চল।
গহন বনে একলা যেতে, পথ যে না পাই কোন মতে
আমার জীবন পথ দর্শক যীশু, পথ দেখিয়ে চল।

১। সাথীরা সব যায় যে ফেলে আঁধার ঘিরে এল
ব্যথার ব্যথী যীশু এস, নইলে এ প্রাণ গেল
আমার জীবন পথের সম্বল যীশু; হাত ধরে নিয়ে চল।

২। জীবন নদীর তুফান ঝড়ে হাল ভেঙ্গে যায় পাল যে ছেঁড়ে
যীশু মাঝি বস হালে, নইলে তরী ডুবলো
আমার জীবন তরীর মাঝি যীশু হাল ধরে নিয়ে চল।
-নিরোধ কুমার বিশ্বাস


_______________________________________________________________________

(৩৫)
আমার মন পাগেলা, বুঝ মানেনা, ঝাঁপ দিয়েছি রূপ সাগরে
পেয়ে মনের মানুষ হয়ে বেহুঁশ (আমি) আছি বাঁধা তাঁর প্রেমডোরে।

১। দয়াল যীশুর রূপের আভায় মোরে কখন ডুবায় কখন ভাসায়
আমার কখন হাসায় কখন কাঁদায়, কখন ভাসায় আঁখি নীরে।

২। চেয়ে থাকি মুখপানে প্রভু যীশুর চরণ দ্যানে
আমার জুড়াই জ্বালা, জ্বলে প্রাণে কভু চরণ বুকে ধরে।

৩। সঁপে দিলাম মান প্রাণ (প্রভুর) যুগল পদে প্রাণধন
যেন ঐ রূপেতে চিরদিন (আমি) মজে থাকি এ সংসারে।

৪। ঐ রূপেতে মন মজিল, দীনহীনে পাগল হল
একবার প্রেমানন্দে যীশু বল (তোমার) ভয় কি আছে এ সংসারে।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(৩৬)
আমার এই যাতনা প্রাণে সয়না
প্রভু সহিব কেমনেেএখন ত্রেতার জ্বালায় জ্বলে মরলাম রে
জ্বলছি পাপের আগুনে।

১। স্বার্থের লোভে আমার জীবন
মিথ্যা ফাঁকি আর প্রলোভন আছি বিলাস ভবনে
আমি রঙ্গরস আর বিলাসিতায় রে,
রয়েছি তোমা বিহনে রে দয়াল তোমা বিহনে।

২। ভুলিয়াছি সংসারের মায়ায়
ত্যাগ পত্র দিয়াছি তোমায় আমার এ ভ্রষ্ট জীবনে
হয়ে স্বামীহারা পথ ছাড়া রে
ঘরি তাই অশ্রু নয়নে রে ভাসি অশ্রু নয়নে।

৩। তুমি বিশ্বের আশা ভূমি
জঘণ্য পাতকী আমি আদি এ ভূবনে
দয়াল, আশাহীনের আশা পুরাও রে
আছে যা বাসনা পরাণে।

৪। ভিখারী আজ তোমার দুয়ারে
অধম যোগেশ বলে মিনতি করে সজল নয়নে
প্রভু ভিখারীর এই বাঞ্ছা পুরাও রে
আশ্রয় দিয়ে শ্রীচরণে রে দয়াল, আশ্রয় দিয়ে শ্রীচরণে।
- যোগেশ চন্দ্র হালদার


_______________________________________________________________________

(৩৭)

আমার মনের ব্যথা কেউ জানে না
ফল ধরে না সোনার গাছে।
দয়াল যীশু বিনে সুফল হয় না,
এ জীবনে সকল মিছে।

১। ফলের আশায় কত লোকে, গাছের দিকে চেয়ে থাকে
গাছে ফল না দেখে মনের দুঃখে
মলিন মুখে যায় গো পিছে।

২। পত্র-পুষ্প বড়ই শোভা, আড়ম্বরে মনোলোভা
আরে হিংসা নিন্দা ছাড়ায় আভা
অংকারের বাও লেগেছে।

৩। গাছে যদি সুফল হইত ক্ষুধিত জনের প্রাণ জুড়াইত
এসে কত পথিক বসে রইত
দিবানিশি গাছের কাছে।

৪। বলে গেছেন যাবার কালে, মালিক একদিন আসবে মূলে
গাছে ফল না পেলে ক্ষুধার কালে
বলবে কুঠার লাগান আছে।

৫। তুমি লতা, আমি শাখা রেখ নাথ, তোমার গাঁথা
যেন সুফল পেয়ে গহত্রাতার
মনে ব্যাথা যায় গো ঘুঁচে।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(৩৮)
সুরঃ বাজাও গুপী যন্ত্রর

আমার সোনার অঙ্গ মলিন হলরে ধরে যায় না রাখা
নাইরে রূপ লাবণ্যের রেখা
ধরে যায় না রাখা।

১। ভেবে ছিলাম এমনিভাবে আমার
সারা জনম কেটে যাবে
সাধের জোয়ার রবে।
এখন দেখি ভাটির টানে মেরুদণ্ড বাঁধন
ধরে যায় না রাখা।

২। কত যতন করেছিলাম কত সুগন্ধি এই অঙ্গে
মাখালাম মধুর খাবার খেলাম
কাল চুলে তৈরী কাটা এখন সবই দেখি সাদা
ধরে যায়না রাখা।

৩। যদি এক রূপসী তাকে পরাণ দিয়ে ভালবাসি
সংসার পেতে বসি
সংসারেতে সুখ হলো না
দয়াল যীশু নাই দেখা
ধরে যায় না রাখা।
-যোগেন সেন


_______________________________________________________________________

(৩৯)
বাউলের- সুর

আনন্দে বন্দি দীনবন্ধু, তোমার রাঙ্গা পায়
আমি গা’ব তোমার ঐ যীশু নাম আমার দেখে যাবৎ জীবন রয়।

১। দিয়ে দেখা দুঃখের দুর্দিনে, তুমি করলে উদ্ধার এ অধীনে, আপন গুণে;
তুলে বসালে, এই কাঙ্গালে তোমার চেরণে।
(আমি) ভুলিব না এই করুণা কভু, ভুলিব কেমনে হায়!

২। এই ভিক্ষা আজ মাগে দিনহীন, তোমার ঐ পাদপদ্মে চিত্ত যেন নিত্য থাকে লীন
করি আকিঞ্চন, ওহে ত্রাণঘন, মনে নিশিদিন।
(আমার) ফুরায়ে যা’ক সকল আশা যেন এই আনন্দ না ফুরায়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৪০)

আনন্দ গান গাব আর তোমার নামের জয়
ওহে পিতা দয়াময় গো
গাব মোরা দলে দলে, নেচে নেচে তালে তালে, ঘুরে জগৎময়
এই ভূমণ্ডল পূর্ণ হবে তোমার প্রশংসায় গো পিতা।

১। তোমার মত কেহ নাই আর স্বর্গ-মর্ত মাঝে
সারা সৃষ্টি ব্যাপিয়া তোমার মহিমা বিরাজে
তুমি কেবল তোমার মুখের বাক্যে, স্বর্গ-মর্ত অন্তরীক্ষে
সৃষ্টি করলে হায়।
পিতা আব্রাহাম ধন্য হল তোমার করুণায়, গো পিতা।

২। মোদের পিতৃকূল বিশদ দেশে দুঃখে পড়ে কাঁদে
ফেরৌণ চক্রান্ত করে তাদের ফেলেছিল ফাঁদে
তুমি মোশিকে পাঠাইয়া দিলে, বাঁচাতে ইস্রায়েল কূলে
সেই দুঃখের সময়।
শেষে ইস্রায়েল দুগ্ধ-মধু-প্রবাহী দেশ পায় গো মধুর।

৩। দাসত্বে আছি মোরা পরের অধীন হয়ে
মোরা সুকের সুদিন আনব আবার তোমার নামটি গেয়ে,
তুমি পাঠাবে ত্রাণকর্তা তোমার, এই কনান দেশ হবে আবার
সুখেরি আলয়,
যখন এই দেশে হবেন এসে মশীহ উদয় গো হবেন।     
- প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৪১)

আনন্দে মাত সবে জয় যীশু জয় বলে
যীশু নাম কর সঙ্কীর্তণ কর গুণগান দুই বাহুতুলে।

১। যার চরণ পায় না ধ্যানে, যোগী আর ঋষি মুণিগণে
সেই যীশু আপন গুণে এসে দেখা দিলেন পাপীজনে।

২। যাহার যা ছিল মনে তিনি করেছেন পূরণ
আনন্দে হইয়া মগন সব লুটাও তাঁর শ্রীচরণ তলে।

৩। এসেছে তার আশীর্বাদ মিটাতে সকলের সাধ
     দুঃখের রাত হয়েছে প্রভাত, এল শুভক্ষণ এই ভূমন্ডলে।

৪। যাব সবে দেশ বিদেশে মনের আনন্দে ভেসে
বলবো সবার সকালে তোরা যীশুর কাছে আয় সকলে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৪২)
আয় মন চল যাই সেই নিত্যানন্দ ধামে
যথা শান্তি নদী উথলিছে সদা যীশুর নামে।
(আনন্দের আর সীমা নাই রে)

১। তথা মূর্তিমান ত্রাণকর্তা পিতা যার বামে
(নয়নে হেরিব সকলে)

২। তাঁর প্রেক বিদ্ধ হস্ত পদ মোরা হেরিব গো প্রেমে
(প্রেম ধারা ফেলে নয়নে)

৩। সব দুঃখ-তাপ ভুলে গিয়ে মোরা থাকিব আরামে
(আনন্দের দিন কবে হবে রে)

৪। ঐ যে পাপের জ্বালা না রহিবে সে আনন্দ ধামে
(চির সুখে সুখী হবে গো)

৫। মোরা শমন ভয়ে ভীত নাহি হইব সেখানে
(শন ভয়ে দূরে যাবে গো)

৬। তথা সদানন্দে রব মোরা যীশুর গুণ গানে
(যীশু মোদের সঙ্গে থাকবেন গো)।
-বিন্দুনাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(৪৩)
বাউলের সুর-একতালা

আয় চলে আয়, দিন বয়ে যায়, যাবে যদি নিত্য ভবনে
সংসার অসার, কেন ভুলে আছ মায়া বন্ধনে?

১। বুঝে দেখ ভাই সকলি অনিত্য
যীশু খ্রীষ্ট স্বয়ং সনাতন সত্য
সেই নামে, অধমে, ভবে শান্তি পায় ইহ জীবনে।

২। ভীষণ মরণ সতত নিকটে
পদে পদে তোমায় ঘেরে হে সঙ্কেটে
বিপদে, আবাধে, পাপী নিরাপদ হয় চরণ স্মরণে।

৩। ধর ধর ভাই যীশু প্রাণকান্ত
নিরাপদ হবে জীবন অন্তে,
মরণ ভয়, নাই সেথায়, হবে নিত্য সুখে সুখী সেখানে।

-রাজচন্দ্র সরকার ও ফুলসাহা বিশ্বাস (১৮৮৬ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________


(৪৪)

আঁধার ধরণী তিমির বরণী রজনী নামিল দিবা দ্বিপ্রহরে
শত চক্ষু মেলি তারকা মন্ডলী রচিত চাহিয়া ক্রুশের উপরে।

১। ক্রুশে বিদ্ধ যীশু ঈশ্বর নন্দন অমূল্য জীবন দেন বিসর্জন
পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিতে সাধন দিতে মুক্তি ধন পাপী নারী-নরে।

২। নামিছে নয়নে মৃত্যুর আঁধার, উঠিছে গগনে তার আর্ত স্বর
উদয় হও আসি পিতা দয়াধার অসময়ে তুমি ত্যাজনা আমারে।

৩। ভূকম্পনে ফাটে ভূদরের চূড়া থর থর কাঁপে বসুন্ধরা
বিদীর্ণ কবরে জেগে উঠে মরা বিপর্যস্ত সৃষ্টি যীশুর মৃত্যুরে।


_______________________________________________________________________

(৪৫) 

আসিতেছেন ঈশ্বর নন্দন চড়ি মেঘরথে সদলে
সবে প্রস্তুত হও, প্রস্তুত হও, প্রস্তুত হও তোমরা সকলে।

১। হবে ভীষণ তুরীর ধ্বনি, জেগে উঠবে সব মৃত প্রাণী
রূপান্তর হবে এ ধরণী শয়তান বন্ধিবে শৃঙ্খলে।

২। মহামারী যুদ্ধ হচ্ছে, দুর্ভিক্ষে লোক মারা যাচ্ছে
মহা ভূমিকম্প দেখা দিচ্ছে জ্যান্ত পাচ্ছে সকলে।

৩। উঠ উঠ, জেগে থাক, ঘুমাইবার আর সময় নাইকো
সবে এক দৃষ্টে চেয়ে থাক, বিশ্বাস বাহু তুলে।

৪। নির্বুদ্ধির মতন হয়ে, ধন সম্পত্তি টাকা পেয়ে
এখন রয়েছ মায়ায় ভুলে উত্তর দিবে কি বলে।

৫। যে জন ধর্মের ছদ্মবেশী জগতের সুখ অভিলাসী
সেও হবে নিশ্চয় দোষী, শ্রীযীশুর বিচারকালে।
৬। সুবুদ্ধির মত হয়ে, প্রার্থনায় থাক জাগিয়ে
যেন হৃদয়ের নাথ হৃদয়ে আসিয়ে প্রস্তুত দেখেন সকলে।

৭। বিশ্বস্ত যে দাস হইবে, পাঁচ তোরায় সে দশ করিবে
যীশুর অক্ষয় মুকুট মাথায় নিয়ে বসাবেন নিয়ে কোলে।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(৪৬)
বেহাগ মিশ্র-কাওয়ালী (কর্ণাটি)

আহা কি মধুর তবে প্রেম পরশ
যীশু মম, প্রিয়তম, পরমেশ, হৃদয়েশ।

১। তোমারে কবিহ মনের কথা, তোমারে জানাব প্রাণেরি ব্যথা
যীশু মম, প্রিয়তম, পরমেশ, হৃদয়েশ।

২। কে আর নাশিবে শোক তাপ মম, শান্ত্বনা করিবে তোমারি সম
যীশু মম, প্রিয়তম, পরমেশ, হৃদয়েশ।

৩। বিপদে-আপদে তোমারেই ডাকি, সতত চরণে তাই পড়ে থাকি
যীশু মম, প্রিয়তম, পরমেশ, হৃদয়েশ।

৪। পার্থিব বান্ধব সবে যায় চলে, তুমি নাহি যাও কভু একাকী ফেলে
যীশু মম, প্রিয়তম, পরমেশ, হৃদয়েশ।
-আলাউদ্দিন খাঁন   
_______________________________________________________________________


(৪৭)
উদয় হও এই হৃদয় মাঝে, একবার ঐ রূপ দেখি নয়ন ভরে হে

১। এস ত্রাতার মূর্তি ধরে, তুমি বিদ্ধ আছ ক্রুশোপরে হে
তোমার মস্তকে, কন্টকে, রক্তধারা ঝরে হে।

২। শ্রীমুখ তোমার রক্তে মাখা, মুখে প্রহার চিহ্ন আছে আঁকা হে
মুখে বিনতি, অগতি, পাপীগণের তরে হে।

৩। দুই হাত তুমি বিস্তার করে, বুঝি ডাকিতেছে পাপী নরে হে
দুই হাত বাড়ায়ে, দাঁড়ায়ে, আছ ক্রুশোপরে হে।

৪। কোন পাষাণ্ড দয়া শূণ্য, তোমার বক্ষ করেছে বিদীর্ণ হে
ঝরে রক্ত-জল, অবিরল, দর দর ধারে হে।

৫। প্রেকে বিদ্ধ ঐ শ্রীচরণ, আমি হৃদ-মন্দিরে করব ধারণ হে
রব চিরকাল, হে দয়াল, ঐ চরণে পড়ে হে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৪৮)

একবার ডাক দে রে মন সেই গুণ নিধি
আজ এই নিশি ভোরে
বদন ভরে ডাক দেখি তায় আজ, একবার ডাকরে হৃদয় ভরে।

১। হল যখন নিশি আঁধার, আমি হারালাম তা পেলাম না আর
আর হৃদয় রতন আমার;
ভোরের বেলায় দুঃস্বপনে আমি দেখেছিলাম তাঁরে।

২। একবার আঁধার কেটে গেছে, একবার ডাক দেখি সে কোথায় আছে
এই জগৎ মাঝে;
দয়া যদি করে সেজন, দেখা দিলে দিতে পারে।

৩। দেখা যদি না দেয় সেজন, ও তোর জীবন আর কি প্রয়োজন
মিছে সব আয়োজন;
একবার দেখা পেলে তাঁরে, জীবন সফল এ সংসারে।

৪। বদন ভরে ডাক দেখি তায়, একবার খুঁজে দেখ সে আছে কোথায়
আজ এই প্রভাত সময়;
কি জানি সে খুঁজে তোরে, আছে তোর হৃদয় মন্দিরে।

৫। স্বর্গের বৈভব ত্যাজ্য করি, ভবে এসেছেন এই ত্রাণ কাণ্ডারী
নরের দুখ হারী;
ঐ শুন তাঁর ঐ মধুর ধ্বনি কে ঐ ডাকিছে তোমারে।

৬। ডাক যারে হৃদয়ে তুমি তোমার অন্তরের সেই অন্তর্যামি
সেই জগৎ স্বামী;
তুমি যারে খুঁজে বেড়াও, সেজন খুঁজিছে তোমারে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৪৯)

এ অন্ধকার যাবে কেটে
নিশি আঁধার রবে না আর দিনের আলো উঠবে ফুটে।

১। সন্ধ্যা হলেই আসে আঁধার, ছায়ায় ঢাকে জগৎ সংসার
দিনের আলো আসে আবার, যখন সূর্য ওঠে।

২। পাখি জেগে গান গেয়ে যায়, বলো সবে “জয় যীশু জয়”
এ দেখ ঐ সূর্য উদয়, পূর্ব দিকে ঐ আকাশপটে।
৩। যে প্রহরী দিনে-রাতে, থাকে সদা তেমার সাথে
যে ভাবনা ভয় জাগে চিতে, বল খুলে তাঁর নিকটে।

৪। কেটে যাবে মনের আঁধার, আশঙ্কা ভয় রবে না আর
দেখবে তুমি কি শক্তি তাঁর, কি মহিমা ভবে ঘটে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (২০/০৩/১৯৪৮ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৫০)
(ভাটিয়ালী-ঠুংরী)

এমন মধু মাখা ঐ যীশুর নাম
ঐ নাম বল মহানন্দে নিশি ভোরে।
হবে রসনা পবিত্র, শুদ্ধ হবে চিত্ত
কেবল মাত্র ঐ নামের জোরে।

১। কতকাল তোর গেছে অমনি, এমনি সুখের দিন-যামিনী।
কত সুখের নিশি ভোর, কেটে গেছে তোর
আছিলি বিভোর ঘুমের ঘোরে।

২। গেছে সেদিন দিয়া ফাঁকি, বেশী দিন আর নািইরে বাকী
আছে বাকী যে কয় দিন, সেই দিনের একদিন
মুক্তির শুভ দিন এসেছেরে।

৩। জেগে উঠ যীশু নাম বলে, মনের দুয়ার দেওরে খুলে
দেখ, রাজ রাজেশ্বর, ঈশ্বর কুমার
দাঁড়ায়ে তোমার গৃহ দ্বারে।

৪। মুক্তি ধন সে নিয়া হাতে, আছে তোমার অপেক্ষাতে
মায়া ঘুমে অচেতন ছিলেরে যখন
ডেকেছে তখন বারে বারে।

৫। জেগে উঠ যীশু নাম বলে, মনের দুয়ার দেওরে খুলে
দেখ, রাজ রাজেশ্বর, ঈশ্বর কুমার
দাঁড়ায়ে তোমার গৃহ দ্বারে।

৪। মুক্তি ধন সে নিয়া হাতে, আছে তোমার অপেক্ষাতে
মায়া ঘুমে অচেতন ছিলিরে যখন
ডেকেছে তখন বারে বারে।

৫। নয়ন জলে ধোও তাঁর চরণ, হৃদয়ে লও করে বরণ
ও তোর হবে রে মোচন, এ ভবের বন্ধন
পাবি মুক্তির ধন যীশুর বরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৫১)
অভ্যর্থনা সঙ্গীত

 শুভ লগনে, মধুর মিলনে
কি সুর বাঁজিছে মনোবীণায়
স্বাগত অতিথি করিব আরতি
বাসনা হের মনে আমায়।

১। কি দিয়ে তোমায় করি সম্ভাষণ
নাহিকো মোদের রজত কাঞ্চন
মোরা ক্ষুদ্র অতি, লহ ভক্তি প্রীতি
নিঃস্ব হৃদয়ের উপহার।

২। ভকতি কুসুমে গাঁথিয়া এনেছি
কতনা যতনে চয়ন করেছি
প্রেম উদ্বোধনে প্রণমি চরণে
কণ্ঠে দানিব উপহার।
- সংরক্ষিতঃ পাগল নরেন্দ্রনাথ ঘরামী


_______________________________________________________________________


(৫২)
এত ভালবাসি যারে সে কেন কাঁদায় আমারে
আমি রাখিতে চাই হৃদে যারে গো সে কেন
দূরে যায় আমায় ছেড়ে।

১। যতনে আঁকি ছবি খান, নিশিদিন করি যাহার ধ্যান
সে থাকে কত ব্যবধানে।
দিয়ে কোন অজানা প্রণয়ের টান গো
টানিছে আমারে দেশ দেশান্তরে।

২। আবেশে গেলে ধরিতে সেজন লুকায় ত্বরিতে
পলক নাই পড়িতে
যেজন স্বপন ভাঙ্গা বিষাদ চিতে গো
শুধু অঝরে নয়ন ঝরে।

৩। না জানি কোন্‌ পেয়ে অপরাধ, সাধিছে
চির সুখে বাঁধ
ঢালিয়ে দিয়াছে বিষাদ
আমার মন হরিণে নিষ্ঠুর নিষাদ গো
বিধিছে বিরহের বিচ্ছেদ স্বরে।

৪। কাঁদাইয়া পায় যদি সে সুখ যত পারে
দেয় যেন সে দুঃখ
সইতে পারে যেন বুক
যদি দুঃখ ভারে ভাঙ্গে এ বুক গো
পাই যেন ভাঙ্গা বুকের মাঝারে।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(৫৩)

এই যীশু নাম কোথায় গেলে পাই
আমার বাবতে জনম গেল, সোনার অঙ্গ হইল ছাই।

১। চাইনা ধন, চাই না জন, চাইনা অঙ্গের আভরণ
আমি মোহ মায়ায় ভুলে রইলাম
আশায় আশায় দিন কাটাইলাম।

২। আর যীশু নাম আছে দেশ বিদেশে
পাইল তারে তালাস করে
আমি কোন সাধনে, পাব তারে
বলে দেও মোর সাধু ভাই।

৩। আর দয়াল প্রভু ডেকে বলে
হইল নাতো হবার কালে
আমার অকুলের কূল ও দয়াল গুরুরে
কোথায় গেলে তোমার সন্ধান পাই।

৪। আমি সাধন ভজন জানিনা রে
কোন ভজনে পাব তোরে
অধম পাগল বলে প্রাণের দয়াল
ঐ চরণে দেও ঠাঁই।
-মতিলাল মন্ডল


_______________________________________________________________________

(৫৪)

এস পাপী আমার নিকটে, আমি শান্তি দিব
পাপের যাতনা যাবে, অমৃত জল পান করাব।

১। ওহে নর পরিশ্রান্ত, পাপ ভারে ভারাক্রান্ত
সুখী হইবে নিতান্ত, আমি তব সঙ্গে র’ব।

২। ওহে পাপী ফির ফির, কেন পাপে জ্বলে মর?
আসিছে দিন ভয়ঙ্কর, কে সহায় হইবে তব?

৩। পাপেতে হইয়া রত, জীয়ন্তে হয়েছ মৃত
হও পাপী পরিষ্কৃত, তোমার বোঝা আমি লব।

৪। আমি সত্য ও জীবন, আমি স্বরগের সোপান
আমাতে কর গমন, পিতার বাটি লয়ে যাব।
-মধুসূদন সরকার (১৮৯৬ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৫৫)
ঝিঝিট-ঠুংরী

একবার ভেবে দেখলিনে তোর উপায় হবে কি? (পাতকী)

১। তোরে দেখে নিরুপায়, সেই পরম দয়াময়
কৃপ করি পাঠাইলেন আপন তনয়
এখন যীশু খ্রীষ্ট পাপীর বন্ধু, স্বর্গে যাবার ভাবনা কি।

২। সেই যীশু দয়াবান, তোরে করিবারে ত্রাণ
ক্রুশোপরি ত্যাজিলেন আপনার পরাণ
এখন বিশ্বাস করে চলে এস, যীশু বৈ আর উপায় কি?
- প্রেমচাঁদ নাথ (১৮৯৬ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৫৬)

ঐ যীশু না বলরে মন
বল একবার বদন ভরে।
নামে তাপিত অঙ্গ শীতল হবে
জুড়াবে দগ্ধ এ জীবন।

১। আম ধর্ম নাম কর্ম
রসিক ভক্ত জানে মর্ম
বিশ্বাস ভক্তি নিত্য কর্ম
জীবে দয়া করে সে জন।

২। নাম সিন্ধু প্রেমে রসে
ভক্ত সুজন ডুবে আছে
মাতোয়ারা হয় নিমিষে
নামের মধু করিছে পান।

৩। যীশু নামে আছে শক্তি
কাম গন্ধহীন প্রেমপিরিতি
বিশ্বাস প্রেমে দিলে ভক্তি
প্রকাশিবে সেই দয়াময়।

৪। যশিু নাম প্রেম ও স্রোতে
পাপ তৃণ যাবে ভেসে
হৃদমন্দিরে চিত্তপটে
উঠবে ফুটে যীশু ছবিখান।

৫। যীশু নামে আছে শক্তি
বিশ্বাস করলে পাবে মুক্তি
ক্রুশ কাঠে মহাশক্তি
মহামুক্তি যীশু দয়াময়।

৬। ভেবে বলে পাগল শ্যামল
বৃথাই গেল মানব জনম
ভক্তি বিশ্বাস নামে প্রেমে
দিন থাকিতে যীশু বল।
-পাগল শ্যামল


_______________________________________________________________________

(৫৭)

এসে দাঁড়াও, আমার সম্মুখে
তাপিত জীবন শীতল করিব
তোমার ভূবন, মোহন রূপ দেখে।

১। এস নেমে, স্বর্গ হ’তে, দাঁড়াও এসে পৃথিবীতে
পৃথিবী ঐ চরণপাতে, উঠুক শিহরিয়া পূলকে।

২। রোমাঞ্চিত এই ধরাতলে, যীশু তোমার চরণতলে,
স্বর্গের কুসুম দলে দলে, উঠুক ফুটিয়া লাখে লাখে।

৩।দাঁড়াও আমার আঁখির আগে, তোমার রূপের পরশ লেগে
নূতন সৃষ্টি উঠুক গেজে- আমার দিশেহারা দুই চোখে।

৪। চির সুন্দর, পরমধন্য, স্বর্গ-মর্তে অগ্রগণ্য
তুমি ত্রিলোকের বরেণ্য, তোমার তুল্য নাই আর ত্রিলোকে।

৫। যে পেয়েছে তোমার দেখা, যীশু হে পাতকীর সখা,
ধন্য জীবন, স্বার্থক শিক্ষা, সুখী সে অপার্থিব সুখে।


-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯৪২ খ্রিঃ)


_______________________________________________________________________

 (৫৮)
এস সোনার দেশে, রণবেশে, সুখের দেশে চলে যাই।
(মোরা) দরিয়া মাঝারে, তুফানে কি ঝড়ে,
বাদলে, ভয় করি না ভাই।

১। প্রেমের বাদামে, যীশু বন্ধুর নামে
হেলে দুলে মোরা বৈঠা বাই;
(তুলে) জয়েরি পাতাকা, যীশু নাম আঁকা
বাঁজিতয়ে ডঙ্কা চলেছি তাই।

২। উজানে কি বামে, অতি প্রাণপণে
পাড়ি দিয়ে পিছে নাহি চাই
(মোরা) চলেছি যাত্রী, অন্ধকার রাত্রি
নরক ভয় এড়ায়ে ভাই।

৩। দেখ গো চাহিয়া পরাণ ভরিয়া
সোনার ঘাটে আলোটি ভাই
(মোরা) ঘন বৈঠা ফেলে, হাল্লেলুইয়া বলে
সিয়োন ঘাটে নাও লাগাই।
-শশীভূষণ পন্ডিত


_______________________________________________________________________

(৫৯)

এস হৃদি কাননে শুভ লগনে
তৃষিত তাপিত চিত তোমা বিহনে।

১। শুকাল নিকুঞ্জলতা শুষ্ক কুসুম ঝরে হেথা
কোকিলার বাসন্তি গাঁথা, নীরব হৃদি কাননে;
বারেক এসে প্রাণকান্তে হৃদে বাহও মধুর বসন্ত
মম বিদপু কুঞ্জে হবে শান্ত তোমার পরশ ফাগুনে।

২। বহায়ে প্রেম সদয়-লীলে, হৃদি পদ্মশতদলে মধুসহ মধুপদদলে
মাতুক তব গুণগানে তব রুপ জ্যোৎস্না ঝলক পেয়ে কুঞ্জ
হল আলোকে উদ্ভাসিত দ্যুলোক ভুলোক হৃদি গগনে।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(৬০)

এক স্রোতঃ আছে শোণিতের
তায় পাপী ডুবিলে
যায় সব কলঙ্ক পাতকের
সেই স্রোত ইম্মানুয়েলে।

ধূয়াঃ মোর বিশ্বাস-যীশু ক্রুশেতে
করিলেন রক্ত দান
পাপী যে আমি শোণিতে
পাই যেন পরিত্রাণ।

১। সেই স্রোত দেখি, দস্যু মন
মরণে শান্তি পায়,
হইলে মোর সেই পাপ জীবন
পবিত্র হব তায়।

২। শোণিতের শক্তি, ‘হত মেষ’
ফুরায় না কিছুতে-
যাবঃ হয় শেষ ভক্তির প্রবেশ
স্বর্গ মন্ডলীতে।

৩। সেই স্রোতঃ হেরি বিশ্বাসে
তুলেছি প্রেমের গান
আজীবন গাইব হরষে
তোমারই কৃত ত্রাণ।

৪। যাক্‌ এই নিস্তেজ রসনা
বাক্‌শূণ্য কবরে
তুলব সেই গান, এই বাসনা
স্বর্গে মধুর স্বরে।
- ডব্লিউ, কেরি (১৯১১ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৬১)

 এস নাথ মোহন সাজে-সভা মাঝে
মোরা দীনহীন সব, মানস-পূজিব তব-পদ-সরোজে।

১। ওহে পিতা দয়াবান, কর সবে বিশ্বাস দান
আশীষ প্রদানে তোষ প্রতিজনে এই ক্ষণে।

২। এস যীশু দয়া করে, অধিষ্ঠিত
কর ত্রামণি দীনজনে।

৩। বহু আত্মন তুমি বহ, সবার অন্তরে বহ
নর-নরী যত কর পুনর্জাত মৃত জনে।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (শ্রীরামপুরের গীত)


_______________________________________________________________________

(৬২)

এস হে স্বর্গীয় আত্মা, এস অগ্নিময় রূপ ধরি
অধিষ্ঠিত হও তুমি, আমা-সবার মস্তকোপরি
কর এ গৃহ আলোকিত, পুলকিত, কর সবার হৃদয় উদ্দীপিত।

১। এস তুমি আজি শুভ দিনে
অধিষ্ঠিত হও সবার প্রাণে
সুপ্ত মৃত সর্ব জনে, কর জাগ্রত, কর সঞ্জীবিত।

২। অগ্নিশিখারূপে তুমি, কর প্রবেশ এ হৃদয় প্রদেশে
দগ্ধ করি রুদ্ধ দুয়ার, তব জলন্ত, দীপ্ত পরশে
ছলনা কুবাসনা যত, পাপশত কর তব তেজে ধ্বংস ভস্মীভূত।

৩। যুগান্তে অন্তিম দিনে, সৃষ্টি ধ্বংস হবে অগ্নি বহে
নূতন সৃষ্টি পূর্ণ হবে, তব স্বর্গীয় পূণ্য প্রবাহে
আসুক সেদিন এ জীবনে, অদ্য দিনে
হউক নূতন সে সৃষ্টি আর্বিভূত।

৪। যীশু গুণগাঁথা গানে, দেহে জাগায়ে নূতন শক্তি
ভক্তিবিহীন এ পরাণে, তুমি ভিতর স্বর্গীয় ভক্তি
যীশুর নাম কীর্তনে এ ভূবনে হবে
মুক্তির মলয় প্রবাহিত।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৬৩)
খাম্বাজ-কাওয়ালী

এসেছ তুমি, পতিত মানব শিশুর বেশে!

১। আকাশে প্রভাতী তারা, চেয়ে আছে পলকহারা
তব মুখ দরশন আশে।

২। ঐ যে শুনি বীণা ধ্বনি, স্বর্গীয় দূতবাহিনী
তব কীর্তি  ঘোষিছে আকাশে।

৩। আসিতেছে রাখালেরা, প্রেমানন্দে আত্মহারা
লুটাইতে পদ পাশে।

৪। পূর্ব দেশী পন্ডিতেরা, আসিতেছে করি ত্বরা
খুঁজিয়া তোমারে দেশে দেশে।

৫। নিরানন্দ প্রাণে মম, এস তুমি প্রিয়তম
এসে একবার দেখা দেও এই দাসে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৬৪)
পরজ-কালাংড়া-জৎ

এসেছ, এসেছ তুমি জিনিয়া মরণে
সর্বজয়ী হে মহারাজ, তোমার তুল্য কে ভূবনে।

১। বিনাশিতে তোমার জীবন যাদের মনে ছিল মনন
কঠিন পরাণে যারা বাধিল তোমায়
ক্ষমা দানে যে সবারে করিয়াছ জয়
চাহিয়াছ তাদের তরে ক্ষমা পিতার সন্নিধানে।

২। পাষান্ড পাতকী জনে, করেছ জয় প্রেম গুণে
ত্রাসিত ভয়ার্ত জনে দিয়াছ অভয়
দেখাইয়াছ ভ্রান্ত জনে, ত্রাণেরি উপায়
অশান্ত জনের চিত্ত করেছ জয় শান্তিদানে।

৩। কালান্তক শমনে জয়, করিয়াছ যে মৃতুঞ্জয়
উৎসর্গ করিয়া ক্রুশে আপন জীবন
কৃতান্ত আলয়ে তুমি করেছ ভ্রমণ
করিয়াছ মরণে জয় আপন জীবন দানে।
- প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৬৫)
ভৈরবী-কাহারবা

ঐ যে পোহায় কাল নিশি, এস হে যীশু মশীহ, তোর অন্তরে
প্রাণে মোর নিশি ভোর হ’বে তুমি এলে হৃদয় পুরে।

১। সকল আঁধার যাবে কেটে, স্বর্গের আলো উঠবে ফুটে
প্রভু যীশু তোমার বরে
এস আজ, মহারাজ, এস হৃদয় আমার আলো করে।

২। আমার সুখের নিদ্রা লাগি, প্রভু তুমি ছিলে জাগি
সারা নিশি মোর শিয়রে
শ্রীচরণ দরশন আমি করতে চাই এই নিশি ভোরে।

৩। তোমার সেবা সকল কাজে, করিতে এই জগৎ মাঝে
প্রভু তুমি শিখাও মোরে
দিন যায় দয়াময়, প্রভু, যেন তোমার সেবার তরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৬৬)
ভৈরবী-কাওয়ালী

ঐ শ্রীচরণ করি স্মরণ
যে চরণে পেয়ে আশ্রয়, জুড়াল এ দগ্ধ জীবন।

১। যে চরণে রেখে মাথা, ভুলেছি এই ভবের ব্যথা
যে চরণ পেরেকে গাঁথা ছিল ক্রুশে পাপীর কারণ।

২। যে চরণে দীনহীনে, দিয়াছ স্থান এ জীবনে
জীবনান্তে সেই চরণে, রেখ দাসে, এই নিবেদন।
- প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৬৭)

এ পোহাল-তামসী নিশি
তরুণ তপন উদয়, তবে জন্ম নিলেন যীশু মশীহ্‌!

১। সোনার বীণা নিয়া করে, আনন্দ নগরের দ্বারে
গাহিতেছে বারে বারে, মঙ্গল সঙ্গীত স্বর্গবাসী।

২। জগৎময় পড়েছে সাড়া, রাখালেরা, পন্তিতেরা
বৈৎলেহেমে আসে ত্বরা, হেরিতে তাঁর মুখ শশী।

৩। হৃদয় বীণার তারে মম, বেঁজে উঠুক যীশু নাম
অনুপম সুধাসম, পাপ, অমঙ্গল-তমোনাশী।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৬৮)

ঐ দেখ সোনার মানুষ নর কূলে
ঐ দেখ প্রেমের মানুষ ভবে এসেছে রে
ঐ দেখ নয়ন মেলিয়া, অদূরে চাহিয়া
দ্বারেতে দাঁড়ায়ে রয়েছে রে।

১। প্রেমধারা বয় নয়নে, মধুর কথা কয় বদনে
ও তার রূপের আভায় জগৎ ভুলায়
পরাণ জুড়ায় নিমিষে রে।

২। প্রেমডালি মাথায় করে, কাঙ্গাল বেশে ঘরে ঘরে
বন্ধু দুয়ারে দুয়ারে অতীব কাতরে
প্রেমধন লয়ে, সাধিছে রে।

৩। যাবেরে দুঃখ ভয় ভাবনা, পাবিরে সুখ শোক শান্ত্বনা
মানুষ ধরিলে আবেগে প্রেমের সোহাগে
পরম সুখে রহিবে রে।
- প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৬৯)

ঐ শুনা যায় ওপারের গান, সঙ্গীত ধ্বনি অমরপুরে
স্বর্গের দূতের বীণায় তান উঠেছে ভাই, মধুর যীশুর নামে আকাশ জুড়ে।

১। ছেড়ে ভবের কোলাহল, মুখে বল যীশু নাম বল
সুরধ্বনীর ধারায় বেগে ছুটুক দুই নয়নের জল
মনের আনন্দে আজ গাওরে ঐ নাম ভাই
একবার মিশায়ে ওপারের সুরে।

২। বুঝি ঐ সেইড সোনার রথ, আলো করে আকাশ পথ
আসিতেছেন ঈশ্বর নন্দন, শত স্বর্গ দূতের সাথে
এবার ঘুঁচে যাবে ভব-যন্ত্রণা ভাই, যদি উদয় হন মন-মন্দিরে।

৩। ধয়ে দেহ-আত্মা-মন, একবার কর আয়োজন
সাজায়ে সেই মন-মন্দিরে তাঁরে কর অভ্যর্থন
তোমার ঘরের জঞ্জাল দূর করে দেও ভাই
সোনার আসন পাত হৃদয় জুড়ে।

৪। লয়ে প্রফুল্ল হৃদয়, মুখে বল যীশুর জয়
উধ্বমুখে করজোড়ে থাক তাঁহার অপেক্ষায়
ও তাঁর মুখের কথা পেয়েছি রে ভাই
থাকবেন স্বর্গ ছেড়ে তোমার ঘরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৭০)

ওকি আনন্দ গান আকাশ পথে, জাগ জাগ যত নর নারী।
একি এল শুভক্ষণ, জাগো সর্বজন, জাগো মোহ নিদ্রা পরিহরি।

১। সপ্তস্বরা বীণার তারে, কি রাগিণী আকাশ জুড়ে
ঝঙ্কারিছে বীণার তারে, কি রাগিণী আকাশ জুড়ে
ঝঙ্কারিছ বারে বারে মন প্রাণ চিত্তহারী
গাহে সুর পূরবাসী, পাপ তমোনাশী
ত্রাণশশী উদায় মর্তপুরী।
অন্তরাঃ শঙ্কা নাই! নাই! নাই!
এলেন গোলক হতে ভবলোকে
গোলকের গোঁসাই।

২। এলেন যীশু নামে জগদীষ্ট, পুরাতে নরের অভীষ্ট
যীশুন খ্রীষ্ট নামের তূল্য নাই।
পাবে নষ্ট মতি ভ্রষ্ঠজনে, তাঁর চরণে ঠাঁই।
সদা তব ভয়ে ব্যাকুল যারা, চিরন্তন বয় চটক্ষে ধারা
অন্তরে অশান্তির অন্ত নােই
এলেন সে অশান্তে শান্তি দিতে, ঘুচাতে বালাই।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৭১)

ওগো মহানুগৃহীতে
ধন্য তুমি নারীকুলে, তোমার তুল্য কে জগতে।

১। জগৎ পিতার মনের মনন, করবে তুমি গর্ভে ধারণ ঈশ্বরসূতে।
তবে তাঁর আগমন হবে পাতকী তারিতে
তিনি করবেন মুক্ত পাপাসন্কত; দুরাশয় পতিতে।

২। দুঃখ তাপের হবে বিরাম, দেখা দিবে আনন্দ ধাম- এই পৃথিবীতে
চিরস্থায়ী আসন তাঁহার মানবের চিতে।
হবে সুখে ভরা বসুন্ধরা, তাঁহার আশীর্বাদে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৭২)

ওহে ক্ষুদ্র মেষ-পাল, ভেবে ব্যাকুল হইও না
তোমার রাজ্যটি দিতে, পিতার আছে বাসনা।

১। যেই সব দুঃখ তোমার, তাতে পিতার প্রেম ব্যবহার
করিতে তোমায় পরিষ্কার, ঘটেছে এ সব ঘটনা।

২। জেনো আমি কোণের পাথর, তুমি গাঁথা তাহার উপর
বহুক বন্যা মহা ঝড়, তবু তুমি নড়িবে না।

৩। দুষ্টদের যে মন্ত্রণা, পিতার সব আছে জানা
ঘটুক নাকো যে ঘটনা, মঙ্গল বই কিছুই হবে না।

৪। মাতাও ভুলিতে পারে, গুগ্ধপায়ী স্বশিশুরে
নাম লেখা পিতার করে, তিনি কখনো ভুলেন না।
-মধুসুদন সরকার (১৮৯৬খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৭৩)

ওরে আমি কাল কাটালেম বৃধা আশে
ভবের হাটে মায়ার দোকান
নিয়ে মহাজনের পূঁজিপাটা, শুধু খাটনীটা রাতদিনে;
দিয়ে নিজের তফিল পরের হাতে পড়লেম লোকসানে।

১। সকাল বেলা দোকান পেতে খরিদ্দারের অপেক্ষাতে চেয়ে আছি
আশা পথে; বেচা-কেনার বাসনা মনে
আমার সকাল দিয়ে বিকাল এল, কেউ এল না এই দোকান পানে-
শেষে সন্ধ্যাবেলা হাজির হল (এসে) খদ্দের ছয় জনে।

২। বেসাতি করিবার ছলে, মিষ্টি বাক্য কতই বলে, নকল দেখায়
আসল বলে, মন ভুলিল আসল না চিনে।
শেষে রাত দুপুরে ছয়জন মিলে তারা সিঁধ কাটে ঘরের পিছনে
আমার ধনরত্ন সব করল চুরি, দুই চোখের সামনে।

৩। বাণিজ্যের সেই অমূল্য ধন, ছয় বেটা করছে হরণ
শণ্য হাতে আমি এখন সংসারের গভীর অরণ্যে
আমি পাব কি তা আর কি ফিরে , ও যা, হারাইয়াছি জীবনে
আমার আশার তরী ডুবল এখন আকুল তুফানে।

৪। হারা হলেম লাভে মূলে কি বলিব (প্রভু) হিসাব চাইলে
পরাণ কাঁন্দে স্মরণ হলে, জীবন-মরণ সমান সামনে
কাঙ্গাল প্রসাদ বলে শেষের দিনে, দেখে খালি সিন্দুক মহাজনে
এসে তালা দিবে কবাট ঠেলে সাধের দোকানে।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(৭৪)
ভাটিয়ালী
(সুরঃ লাল চান বালা)

ওপারে হতে যাঁরা ভবে এসেছিল তাঁরা
চলে গোলো যে যাঁর আপন দেশে।
ও আমি একা বসে আছি ঘাটে।।

১। এসেছিল মথুরা আর প্রিয়নাথ
অকেোল ঝরে গেলো হতে না প্রভাত
কি হতে কি হয়ে গেলো, কে কোথায় চলে গেলো
খুঁজে না পাই মাথা কুঁটে।।

২। এসেছিল প্রসাদ, যাব আর রাজাই
অনেকের নাম মনে আছে অনেকের নাম নাই।
ভাসায়ে গিয়াছে ভেলা সাধুর মেলা
চলে গেছে পরপারের ঘাটে।

৩। কত পাগল েএসেছিল নামেতে পাগল
যাদের স্মরণে আজ চোখে আসে জল।
তাদের স্মৃতি বক্ষে ধরে সেবকগণ চলেছে ধীরে
জানি না কার ভাগ্যে রতন জোটে।

৪। সূর্য ডুবে যায় গোধূলী বেলা
আছি পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি একেলা
খেলার সাথী ছিল যারা
আমায় ফেলে গেছে তারা
যোহন কান্দে একা বসে ঘাটে।
-যোহন ফলিয়া


_______________________________________________________________________

(৭৫)

ও সেই অচীন দেশের দরদী বন্ধু, আমার পরাণ প্রিয়
সকলে যদি যায় গো ফেলে, সাথে করে মোরে নিও
আমি সর্বহারা রিক্ত পথিক সাথের সাথী তুমি হইও।

১। ও সেই অজানা দেশের দীঘল সে পথ আমার নাইকো চেনা
আমি পথ ভুলে তাই বারে বারে হারাই পথের নিশানা
আমি পথহারা পথিক পথ অজানা, পথের দিশা দিও।

২। কত যে ছিল আত্মীয়-বান্ধব সুহৃদ সখাজন
আমার অসময় দেখে, ফেলিয়া সবে করিছে পালায়ন
আমার হারণ ব্যাথায় ঝরিচে নয়ন, নিজে এসে মুছাইও।

৩। কত যে ব্যথা পেয়েছি অঙ্গে লেগেছে উছোট পায়
আমি কত বার পড়েছি আছাড় খেয়ে ধরণীর ধূলায়
তোমার স্নেহময় পরশ ব্যথিত হিয়ায় শ্রীকরে বুলাইও।

৪। একা যে আমি দাঁড়ায়ে পথের শেষের প্রান্তে
মিছে সারাটি জীবন করিলাম ভ্রমণ শুধায়ে কাঁদতে কাঁদতে
যদি না এল কাছে, কে প্রাণকান্তে, বারেক ফিরিয়া চাইও।

৫। আমি কোথায় বা ছিলাম, কোথায় বা এলাম যাইতে কোথা বাকী
ঐ যে ঘনায়ে এল জীবন গোধূলী, সকলে দিল ফাঁকি
পাগল প্রসাদ বলে বিনতি রাখি, শেষের দেখা দিও।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(৭৬)

কত ভালবাস- থেকে আড়ালে।
তোমায় ধ’রব বলে আশা করি, কেবল পাই না হাত বাড়ালে।

১। যখন ছিলাম মায়ের উদরে, ঘোর অন্ধকারময় কারাগারে হায় রে।
তুমি আহার দিয়ে বাতাস দিয়ে, তখন আমারে বাঁচালে।

২। যখন আমি ভূমিষ্ঠ হলেম, মায়ের কোমল কোলে আশ্রয় পেলেম, হায় রে।
মায়ের স্তনের রক্ত হে দয়াময়, তুমি ক্ষীর করে খাওয়ালে।

৩। বন্ধু-বান্ধব দারাসূত, প্রভু এসব কৌশল তোমারি তো হয় রে
ভবের ধন-ধান্য সহায় সম্বল পেলাম তোমার কৃপাবলে।

৪। তোমার দয়ায় সকল পেলাম, কেবল তোমায় একদিন না দেখিলাম, হায় রে।
তুমি কোথায় থাক, কেন এসে, আমি কাঁদলে কর কোলে।

৫। কাঁদলে বলে হতাশ হ’য়ে, এসে চক্ষের জল দেও মুছাইয়ে, হায় রে।
আবার কথা কয়ে প্রাণের মাঝে, কত উপদেশ দেও বলে।
-কাঙ্গাল হরিনাথ


_______________________________________________________________________

(৭৭)

 কত অপরূপ কার্য, যীশু করলেন এ জগতে।
সৃষ্টা হয়ে সৃষ্টরূপে, অবতার নর-দেহেতে।

১। অন্ধ-খঞ্জ-নুলা যত, আর যত ভূতাশ্রিত
কুষ্ঠরোগী কত শত, মুক্ত করলেন জিন বলেতে।

২। বোবা বধির যত ছিল, বল্‌তে শুনএত শক্তি পেল
পঞ্চ রুটির ভোজ হইল, খাইল পঞ্চ সহস্রেতে।

৩। সমুদ্রের জলোপরি, পদব্রজে গমন করি
ধমকে বায়ু নিবারি, শকতি দেখান জগতে।

৪। মৃতে জীবন দান করি, হইলেন মৃত্যুহারী
এ প্রকার ভুরি ভুরি লিখিত আছে শাস্ত্রেতে।
- বেণীমোহন বিশ্বাস (১৮৭৭ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৭৮)

করিতে তোমার আরতি নেহারী মোহন মূরতি
আমি করি হোম যত দিব তাহে অর্ঘ দেহ প্রাণ মন আহুতি।

১। করিয়া মোহিত চিত্ত কমল দলে চয়নিব কুসুম দিতে পদতলে
আরও অশ্রুসিক্ত ফুলর মালা গাঁথি
গলে পরাব হে মহান অতিথি।

২। লভিয়া দত্ত তব মধুর সঙ্গ- বিনাশী কলুষ হব পুত অঙ্গ
হলে ভবলীলা সাঙ্গ লয়ে প্রেম তরঙ্গ
তোমাতে লভিব সংহতি।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(৭৯)

করি চরণ তলে এই মিনতি, সুপথ দেখাও ভবের অন্ধকারে
হয়ে দিশে হারা, সঙ্গীকারা, মিছে কেবল মরি ঘুরে।

১। অন্ধকারে প্রদীপ শিখা, তোমার শ্রীমুখ ঐ যায় দেখা
কষিত কাঞ্চনের রেখা যেমন নিকষ পাথরে
যেন সদা ঐ রূপ জাগে প্রাণে, ধ্রুবতারা নিশিঘোরে।

২। যতদিন থাকি ভূবনে সুখে দুঃখে নিশিদিনে
দিও দেখা দীনহীনে, দয়াল করুণা করে;
দেখলে ঐ মুখ ভবের বিভীষিকা, থাকে নাকো পলায় দূরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৮০)

করলে সকল পাপ মোর ক্ষমা, ধুয়ে, দিলে মনের কালে
ঘুঁচাইয়াছ মনের আঁধার, তোমার প্রদীপ জ্বালি।

১। ছিল হৃদয় পাপের শশ্মান
তুমি করলে তারে এদন সমান
শুক্‌না ডালে ফুটাইয়াছ, সোনার কুসুমকলি।

২। যীশু ব’লে নাচে হৃদি আনন্দের আর নাই অবধি;
দিবানিশি সুখের নদী, উঠিছে উথলি।

৩। যীশু হে অগতির গতি, বস হৃদয় মাঝে আসন পাতি
গা’ব তোমার মধুর গীতি, প্রেমানন্দে গলি।


_______________________________________________________________________


(৮১)
বাউল-ভৈরবী-কাহারবা

কাঙ্গাল ডাকে, দ্বারে দাঁড়ায়ে
চরণ ধূলা পাবার আশে দয়াল, আছে দুই হাত বাড়ায়ে।

১। হৃদয় ভরা আছে ব্যথা, আছে প্রাণে কত কথা
বলব তোমার জগত্রাতা, ধরে ঐ শ্রীচরণ জড়ায়ে।

২। শুনেছি হে ঈশ্বর নন্দন, এলে দ্বারে দুঃখী যে জন
শূণ্য হাতে তারে কখন কখন তুমি দেওনা প্রভু ফিরায়ে।

৩। দিয়ে তারে চরণ তোমার, ঘুঁচাও যত অন্তরের ভার
দয়াল তোমার দয়ায় যায় তার প্রাণের সকল জ্বালা জুড়ায়ে।

৪। সেই আসাতে এসে দ্বারে, ডাকিতেছি বারেবারে
দেও দরশন দয়া করে, দাসে রাখ চরণ আশ্রয়ে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৮২)

কালা পানির জলে ভাসাইলাম সোনার নাও- সাঁঝের বেলা।

১। দূরে এই বিদেশে বন্ধূ হয়ে জীবন গেল কেটে
আমার পরমায়ু মিছা গেছে ভূতের বেগার খেটে।

২। শুনি রাজার হুকুম এসেছে আজ, যাব সোনার দেখে
তাই এই অকূলে ভাসাইলাম ভেলা শুভ দিনের শেষে।

৩। দেখি আঁধার হয়ে এল, আকাশ সাগরের জল কাল
এখন উঠত যদি গগনের চাঁদ জগৎ করে আলো।

৪। যদি দক্ষিণা বাতাসে বাদাম দিলে পরতাম তুলে
যদি তরঙ্গে তরিী চলত হেলে দুলে।

৫। যদি হাইল মাচার পর মাঝি, নৌকায় বসতো নিজে এসে
যদি নির্ভয়ে এই সোনার ভেলা দেখে যেত ভেসে।

৬। যদি মাঝির মুখের পানে চেয়ে টান দিতাম এই দাঁড়ে
তবে আর কি আমার শঙ্কা ছিল তুফানে কি ঝড়ে।

৭। যদি ওপারের সেই সোনার দেশের সোনার বন্দর খানি
একটু দেখা দিত পাছে পড়ে থাকত কালাপানি।

৮। সাঁঝের অন্ধকারে মাঝির মুখখান যেত যদি দেখা
সেই অকূলের কান্ডারী সাধূ ভক্ত জনের সখা।

৯। তবে ভব ভাবনা দূরে যেত, সোনার দেশের পথে
আমার দয়াল  ত্রাতা মধুর নামটি মুখে নিতে নিতে।

প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯১৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৮৩)
বাউলের সুর-আড়-খেম্‌টা

কান পেতে শোন; সেই নিমন্ত্রণ ওপারের ডাক এসেছে।
এই ভব সাগরে পাপীর তরে, ত্রাণের তরী ভেসেছে।

১। যত নষ্ট পতিত ভ্রষ্ট দুরাচার, যারা আশাহত, জীবন্মৃত, ভব সাগরের পার
যাদের নাই ভরসা, ত্রাণের আশা, মরণ পানে ছুটেছে।

২। তাদের মুক্তি দিতে ঈশ্বর নন্দন, দয়াল প্রভু যীশু ক্রুশোপরে, সয়েছেন মরণ;
করে প্রায়শ্চিত্ত করেন মুক্ত পাপী-তাপী যে আছে।

৩। তার সেই নামের তরী ভেসেছে জলে, যত পাপী তাপী, অপরাধী এই ভূমন্ডলে
চড়ে ত্রাণের সেই নায়, পার হয়ে যায়, কত জনে গিয়াছে।
৪। তোরা কে যাবি আয় ভব সাগরের পাড়; যীশু হাত বাড়ায়ে, ডাকেন তোরে আয়গো নারী নর
ঐ দেখ দিন বয়ে যায়, আয় চলে আয়, গোলকের দ্বার খুলেছে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৮৪)

কাঁদে ঊদ্যান দ্বারে কাঁদে হবা জননী
কাঁদে হবা জননী কাঁদে হবা জননী।

১। ভাসে নারী নয়নের জলে বসে একা তটিনীর কূলে
কাঁদে কোকিল বধু বকুল ডালে, শুনি সে ক্রন্দন ধ্বনি।

২। শুকায় লতা শুকাইল রে ফুল, পশু পাখী কাঁদিয়া আকুল
শুকায় নদী, শুকায় ওষধিকূল, ব্যাকুল যত পরাণী।

৩। লোভে মৃত্যু ঘটিল আমার, লোভের পাপে মজিল সংসার
হেরি চারিদিকে দুঃখ পারাবার দুঃখে ভরা মেদিনী।

৪। প্রহরী আজ করবে শ্রবণ, খোল দুয়ার খোলরে এখন
একবার দেখি ঊদ্যান ধরেছে কোন সাজ
আমি অভাগিনী এ জগৎ মাঝে, বিষাদে ঊন্মাদিনী।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯১৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(৮৫)

কান্দি একা একা নদীর কূলে
দেখি ঘাটে তরী নাই
আমার সঙ্গের সাথী ছিল যারা
কেহ আমার সঙ্গে আসে নাই।

১। হায় চারিদিকে আঁধার দেখি
সকলে দিয়াছে ফাঁকি,
কান্দি একা একা ঘোর আঁধার আমার
বন্ধু বান্ধব কেহ নাই।

২। হায় পাইয়া মায়ার সংসার
ভেবেছিলাম সবই আমার গো
আমি সব দিয়াছি তাদের জন্য
আমার হাতে কিছু রাখি নাই।

৩। ওপারের ঐ যাত্রী যারা একে একে
পার হয় তারা গো,
মাঝি কড়ি ছাড়া পার করে না
আমার হাতে েকানা কড়ি নাই।

৪। ভিক্ষার ঝুলি কাঁদে লয়ে
ঘুরি ভক্তি দ্বারে দ্বারে গো,
আমায় ভিক্ষা দিয়ে দেও পার করে
আমি এপারের মানুষ ওপারে যাই।

৫। যোহন কান্দে নিরবধি
পার কর হে দরদী গো
আমি সম্বল ছাড়া কাঙ্গাল একজন
আমার পারে যাবার সাধ্য নাই।
- যোহন ফলিয়া


_______________________________________________________________________

(৮৬)

লুম খাম্বাজ-ঢিমেতেতালা
কাঁদে মগ্‌দলিনী মেরী যীশুর চরণতলে
বিদীর্ণ হৃদয়ে ভেসে চক্ষের জলে।

১। আঃ মরি মরি! চরণ যুগল’পরি
ঝরে নেত্রবারি অবিরলে।

২। ভক্তবাঞ্ছিত পাদপদ্ম করি ধৌত
করিছে মার্জিত কেশজালে।

৩। জগত পানে চেয়ে স্বর্গদূতগণে
আনন্দে বাখানে প্রাণখুলে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৮৭)
ভাটিয়ালী-ঠুংরী

কালভেরী গিরিশিরে, ঝুলিতেছেন ক্রুশোপরে ঈশ্বরকুমার
ঐ যে রক্তাক্ত সেই সোনার তনু, রক্ত বহিতেছে দর দর
সিক্ত করি ক্রুশ কাষ্ঠ পর্বত শিখর।

১। মস্তক কন্টকমন্ডিত; ললাট তাঁর রুধিরাক্ত, স্তিমিত
দুইটি নেত্র, সোনার অঙ্গ কাঁপে থর থর।
দারুণ যাতনা জর্জর কণ্ঠে, তিনি করিতেছেন আর্তস্বর
“ক্ষম মোর এই শত্রুগণে, পিতা দয়াধার”।

২। যীশুর মরণের চিত্র, ধ্যান কর দিবা-রাত্র, মুক্তির পথ ঐ একমাত্র
অন্য পথ নাহি ভবে আর
তুমি তাঁর মরণে পাবে জীবন, কর আত্মোৎসর্গ পায়ে তাঁর
ঐ শোনিতে হবে ধৌত যত পাপ তোমার।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৮৮)

কারে কব, মনের বেদনা
জানে কেবল অন্তর্যামী ব্যাথা- সে বিনে কেউ জানে না।

১। কোথায় ছিলেম কোথায় এসে, ঘুরিতেছি দেশে দেশে
আবার কোথায় যাব ভেসে, মোরে কে দিবে তার ঠিকানা।

২। সাথের সাথী ছিল যারা তারা কেউ আর দেয় না সাড়া
কোথায় তারা কোথায় তারা, তাদের দেখাতো আর মেলে না।

৩। সাথের সাথী ঈশ্বর-নন্দন, একবার এসে দাও দরশন
দেখি তোমার চন্দ্রবদন, নইলে প্রাণে প্রবোধ মানে না।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(৮৯)

কবে আসবে আমার প্রাণ প্রিয়রে, নীলকাশের মেঘরথে
নূতন সাজে রাজার বেশে রে, হাজার দূতগণ সাথে রে।

১। আসি বলে গেছ চলে, এলে না আর ফিরে
আমি আশার বাতি জ্বেলে জাগি আসবে বাসরে
একা আমি আঁখি নীরে, মধুর বাসন্তী মিশিয়েরে।

২। সাজাইয়া ফুলের বাসর হৃদিকুঞ্জ তলে
আমি গেঁথেছিলাম প্রীতির মালা দুই নয়নের জলে
পরাতে প্রাণ প্রিয়ার গলেরে, আশা ছিল আমার চিতে।

৩। শুকাইয়া ফুলের কুঞ্জমালা হল বাসী
বাজিল না শিথিল বাসরে মিলনের বাঁশী
বুকে নিয়ে দুঃখ বাঁশী রে, কেবল ভাসি ব্যাথার স্রোতে।

৪। জনম গেল তোমার আশায় গো পরাণ প্রিয়
এবার হৃদ-কুঞ্জ করিয়া আলোক পুলকে আসিও
ব্যাথার অশ্রু মুছাইওরে, তোমার স্নেহ মাখা হাতে রে।

৫। নিভে যাবে আশার বাতি ডুবে যাবে বেলা
সাঙ্গ হবে এ সংসারের রঙ্গ-রসের খেলা
প্রসাদ বলে বিদায় বেলা রে, বারেক দাঁড়াইও আঁখির পাতে রে।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(৯০)
কানাড়া মিশ্র-একতালা

কি আনন্দ মহানন্দ স্বর্গের সুখ মনে করি
ইচ্ছা হয় যাই উড়ি পারাবতের পক্ষ ধরি।

১। শুন হে নরেশ্বর, ত্বরায় আমার নিস্তার কর
পাপিষ্ঠ সংসারের ভার, পরিশ্রম সইতে নারি।

২। কি আছে এ ভূ-মন্ডলে, সার করিব আপন ব’লে
ত্বরায়ে যাইব চলে, পাপ-পীড়া পরিহরি।

৩। তব পদার্পণের ধ্বনি, যখন কর্ণে শুনি
মম দুঃখ ঘুঁচবে তখনি, মৃত্যু রাজায় ভয় কি করি।

৪। বহুদিনের ইচ্ছা আমার, কেখিব শ্রীমুক তোমার
তুমি মম সুখের আধার, অনন্তকাল তোমায় হেরি।

৫। দেহের সহিত বিচ্ছেদ হবে, কি আপনার হেথা তবে
তব সহিত মিলন ক’রে প্রেমানন্দে সব পাসরি।

৬। বিচারের দিন ভয়ঙ্কর কম্পিত হয় কলেবর
তথাপি আত্মা আমার, ত্রাণেশ্বরের আশা করি।

৭। নগণ্যের আমি, অগ্রগণ্য কুপথগামী
বাঞ্ছনা ওহে জগৎস্বামী, গ্রহণ কর ক্ষমা করি।
-জন সরকার


_______________________________________________________________________

(৯১)

কি দিয়া পূজিব চরণ, কি আছে মোর উপহার
ভক্তি প্রীতি পুষ্পাঞ্জলি কিছুই নাই আমার।

১। তোমার দয়া অবিরত বরিষণ করে সতত
দিয়াছ প্রয়োজনমত, খুলিয়া করুণার দ্বার।

২। আমি পাপ ও জঘণ্য, তুমি হে করেছ গণ্য
ধন্য ধন্য তুমি ধন্য, করি প্রশংসা তোমার।

৩। তোমার দয়া করে স্মরণ, করি ধন্যবাদ আর গুণসঙ্কীর্তন
আমি কৃতজ্ঞতায় ঐ শ্রীচরণ, পূজিব তোমায়।

৪। তোমার তুল্য নাই এভাবে দীনহীনকে মুক্তি দিতে
যোগেশ বলে অধীনে রেখ চরণে তোমার।
-যোগেশ চন্দ্র হালদার


_______________________________________________________________________

(৯২)
সুর-ভাটিয়ালী

কিছু থাকবে না গোপন, সকল কিছু জানে একজন, লুকাইওনা মন।
পাপ ঢাকা দিলে উঠবে জ্বলে, জনমের মতন, জীবন ধ্বংসেরি কারণ।

১। অবনত হবে যখন পাপের স্বীকার আসবে তখন, ভগ্ন হবে অন্তঃকরণ
আর অনুতপ্ত হবে যখন, চূর্ণ হবে মন, দুয়ার খুলে যায় তখন।

২। আনন্দময় পতিত পাবন, হৃদাসনে বসবেন তখন, নিরানন্দ পলাবে তখন
গাবো প্রেমানন্দে জয় যীশু গান, ভরিয়া পরাণ, উর্ধে উঠে যাবে মন।

৩। অন্তরাত্মা গাবে যখন, যীশু নামের গুণসঙ্কীর্তন, উঁকি মেরে দেখবে দূতগণ,
আর কম্পিত হবে সিংহাসন, মিলে ভক্তগণ, করবে প্রেম আলিঙ্গন।
-জয়নাথ অধিকারী


_______________________________________________________________________

(৯৩)

কি দিয়া পূজিব চরণ যীশু, কি দিব তোমারে।
তোমার অপার দয়ায় হে দয়াময়, আমার প্রাণ নিয়াছ কেড়ে।

১। কি আছে তোমারে দিব, কি দিয়া ঐ ঋণ শুধিব, বসে ভাবি তাই অন্তরে;
তোমার অমূল্য এই দয়ার তুল্য, কিছু মিলে না সংসারে।

২। ছায়ার মত দিনে রাতে, থেকে সদা সাথে সাথে, মোরে বেঁধেছ প্রেমডোরে
মোরে শান্তিতে করেছ ফূর্ণ দয়াল, অশান্তির সংসারে।

৩। দুঃখ কষ্টের হয়েছে শেষ, মহানন্দে ভরেছে এ দেশ, যেন সুখের জোয়ারে
তোমার প্রেমের ধারা নেমে আসে সদা আমার এই অন্তরে।

৪। লহ মম ধন-জন, লহ মম দেহ-মন, যীশু তোমার সেবার তরে
যেন ইহকালে, পরকালে থাকি তোমার ঐ দুয়ারে।

৫। তোমার নামের প্রসংসা গান, গাব দিবানিশি দে দয়াবান, আমি গাব পরাণ ভরে
তুমি কাছে থেক, পায়ে রেখ সদা এ অধম পাপীরে।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(৯৪)

কি আর দিব শেষের স্মৃতি আজি আমার বিদায় এ বেলা
গানের ফুলে গেঁথে যাই মালা
আমার স্মরণে পড়িও গলে, ভুলতে বিচ্ছেদ জ্বালা।

১। গানের কুসুম করে আহরণ, কত করিয়া যতন
বিনা সূতে গাঁথলেম মালা তোমাদের কারণ
তোমার স্মৃতিপটে কর স্থাপন প্রীতির কুঞ্জের এ খেলা।

২। ফুল ছড়ানো বনে এ পথে, ছিল যারা মোর সাথে
কে কোথায় লুকাইয়া গেল অজানা পথে
বুঝি একলা আমার হবে যেতে, গোধূলীর শেষের বেলা।

৩। আজও যারা আছে মোর সাথী, নিও শেষের বিনতি
আসবে যখন আঁধার রাতি; জ্বালাই বাতি
তোমরা হইও আমার সাথের সাথী মিলাতে মিলন মেলা।

৪। চলার পথে সেই শেষের কালে, দাঁড়াব সাগরের কূলে
তোমরা ফাঁকি দিয়া যেওনা ফেলে
পাগল প্রসাদ বলে, দিও তুলে আসলে পাড়ের ভেলা।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(৯৫)
বাউলের সুর-খেমটা

কিছুই না রহুক প্রভু, কিছুই না রহুক
তোমার আমার মাঝে কিছুই না রহুক।

১। (আমার) দেখাও তব গৌরব, টান হে নিকটে তব
শুনাও তোমার প্রেমের রব, আর কিছুই না রহুক।

২। (আমি) যেন তোমার দৃদুস্বর শুনিতে পাই নিরন্তর
তাই জগতের কলম্বর, কিছুই না রহুক।

৩। (আমার) ভকতি-প্রীতি সম্বল, প্রার্থনা কি চক্ষুর জল
এ সবের অহঙ্কার কিছুই না রহুক।

৪। (মনে) সন্দেহ কি অবিশ্বাস, চিন্তা-ভীতি কিবা ত্রাস
আলস্য কি অবহেলা, কিছুই না রহুক।

৫। (তুমি) ধর গো আমার নয়ন, তব রূপ করাও দরশন
তোমার সৌন্দর্য বই আর, কিছুই না দেখুক।

৬। (তুমি) হও আমার উচ্চ আশা, হও আমার ভালবাসা
যীশু বই মোর ত্রিভূবনে, কিছুই না রহুক।
-বিন্দুনাথ সরকার (১৮৯৫ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

 (৯৬)
কীর্তন গান
কিবা শুভদিন যীশুর আগমন হইল আজি এ মর্ত্যপুরে
উল্লাস হইল সবের অন্তরে (ভাইরে)
আজি স্বর্গনাথ এলন স্বর্গ ছেড়ে।
পাপিষ্ঠ মানবে করিতে উদ্ধার জন্মিলেন ভবে ঈশ্বর কুমার
কী ব্যাপারে চমৎকার, তিনি জন্মিলেন মেরির উদরে
মোদের নর রূপ ধারণ করে (ভাইরে)
(ও) তাই অপার আনন্দ অন্তরে।
ঝোকঃ উদয় ঐ ত্রাণশশী নাম তাঁর যীশু মশীহ্‌
জন্মিয়াছিলেন মোশীহ্‌ বৈৎলেহমে।

১। রাখালগণ সংবাদ পেয়ে অমনি চলল ধেয়ে
গোশালায় দেখে তাঁরে আকুল প্রাণে।

২। অপূর্ব ঈশকুমার রূপের তাঁর নাই পারাবার
নয়ন না ফিরে তাঁহা যেবা নেহারে।

৩। মরিয়ম কোলে করে বসেছেন ত্রাণেশ্বরে
থাকিয়া রূপ নেহারে নয়ন ভরে।

হইল আনন্দ প্রাণে, আনন্দ প্রাণে
১। মোদের আনন্দের নাই পরিসীমা যীশুর জনমে।

২। চাচে ইংল্যান্ডবাসী আমেরিকা তাঁর জনমে

৩। এসো চেচে নেচে করি কীর্তন ভাই-ভগ্নিগণে।
কিবা শুভদিন
-সংগ্রহেঃ সত্যেন্দ্রনাথ ঢালী


_______________________________________________________________________

(৯৭)
ক্রুশেতে ঐ প্রেমের ছবি
পরাণ আমার কেড়ে নেয়
প্রভু যীশুর কুক্ষি হতে, ঐ যে জীবন নদী বয়ে যায়।

১। হয়েছি পাগল প্রেমেতে, পারি না ঐ প্রেম ভুলিতে
ডুবে যাই কালভেরী স্রোতে
(আমি) প্রেমে পাগল ক্রুশতলায়।

২। সর্বাঙ্গ তাঁর রুধিরাক্ত সিক্ত করি ক্রুশকাঠ
রক্ত ঝড়ে অবিরত (ঐ যে) সোনার অঙ্গ চলে যায়।

৩। কত নিন্দা বারে বারে, দিয়ে থুথু কোড়া মারে
নলের আঘাত কন্টক শিরে
(প্রভুর) বর্শাঘাতে প্রাণ যায়।

৪। কাঁটার মুকুট প্রভুর শিরে, হস্ত পদে রক্ত ঝড়ে
দারুণ যন্ত্রণা ভারে (প্রভু) আমার জন্য প্রাণ বিলায়।

৫। আমার তরে দিলেন প্রাণ, পেয়েছি তাই ক্রুশের জীবন
সদা থাকি ক্রুশারোপন
প্রভু যীশুর যুগল পায়।
-শশীভূষণ পন্ডিত


_______________________________________________________________________

(৯৮)
ঝিঁঝিট-আড়াঠেকা

ক্রুশের সৈনিক, তব এ ভাব কেমন
বহিতে চাহ না ক্রুশ, এ কি মহা বিড়ম্বন।

১। বিনা যুদ্ধে অকাতরে, ফুলশয্যায় শয়ন ক’রে
কে কবে স্বগপুরে, পেয়েছে জয়পত্র দান?

২। কাঁটার মুকুট না পরিলে, সুবর্ণ মুকুট ভালে
পায় কি কেউ কোন কালে, শুনিয়াছ কি কখন?

৩। ক্রুশের সৈনিক যারা নিজ রুধিরেতে তারা
করেছে প্লাবিত ধরা, হেসে দিয়াছে জীবন।

৪। যীশু-ক্রুশ পানে চেয়ে, ত্যাজ মান-লাজ-ভয়ে
নিজ ক্রুশ স্কন্ধে লয়ে, আনন্দে কর বহন।
- অমৃত লাল নাথ


_______________________________________________________________________

(৯৯)

কেন আজি অকারণে বেষে যায় নয়ণ!
আমি শুধাই, কে বলে দেয়-
বান্ধব কে আছে আমার এমন?

১। আমি করেছি যে পাপ, তার জন্য কি অন্তরে আজ জাগে মনস্তাপ
আত্মা ধুলায় পড়ে হাহাকারে, কেন করতেছে এমন ক্রন্দন!

২। যেন দুঃখীর নযন জলে
আকাশ ভ’রে সৃষ্টি ভরে করতেছে টলমল!
যেন ভাদ্র মাসের ভরাগঙ্গা ছোটে, না মানে বাধা-বন্ধন।

৩। শুনি সাধুজন কয়
মহাজনে একা ব’সে কাঁদে, স্বর্গের রাজসভায়
রাজার চরণতলে, নয়নজলে করে আমার জন্য নিবেদন।

৪। বুঝি ক্রন্দনের সেই সুর
জগতে এসেছে আজি ভ’রে স্বর্গপুর
তাঁর সেই বিনয়ের সুরে হৃদয়পুরে বুঝি মন হল আজ উচাটন।

৫। একবার দেখা পেলে তাঁর
বলব তাঁরে নয়নজলে মনের সমাচার
আমি চাই না মুক্তি, চাই না স্বর্গ
কেবল চাই তোমার ঐ শ্রীচরণ।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১০০)
ভাটিয়ালী

কে আছে আর তোমারই মতন
ওহে দয়াল যীশু, পতিত পাবন
তুমি রাজার রাজা, প্রভুর প্রভু, নিখিল এই ব্রহ্মাণ্ডের কারণ!

১। অপরাধের দণ্ড দিতে, বাসনা নাই তোমার চিতে
পাপী-তাপী তরাইতে ভবে তোমার আগমন
মোদের সকল পাপের সাজা নিয়ে, তুমি ভুগিয়াছ মরণ
যত দুঃখীর দুঃখ ঘুঁচাইয়াছ, মুছাইয়া দিয়াছ নয়ন।

৩। ক্ষমা করে দোষী জনে, দিয়াছ স্থান শ্রীচরণে
অযোগ্য জন অভাজনে, তুমি ক’রেছ গ্রহণ
ভবে মিলাইয়াছ প্রেমের মেলা, শান্তির রাজ্য করে স্থাপন।

৪। যে যা বুনে সেই তা কাটে, তেমনি ফল পায় ভবের হাঁটে
সুবিচার তোমার নিকটে, শুনি শাস্ত্রেরি বচন
আমি নরকযোগ্য মূঢ়মতি, আমাকে দিয়াছ চরণ।

৫। কি বলে আনন্দ জানাই, যীশু হে জগতের গোঁসাই
তোমার তুল্য আর কেহ নাই, দেখলাম খুঁজে ত্রিভূবনে
আমি বাঁধা রইলাম ঐ পাদপদ্মে, দেহে যাবৎ রয় এই জীবন।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১০১)

কে ডাকে আজ জগৎ জুড়ে অকালে
শুনি দুপুর রাতে কর্ণ পেতে, কে ডাকে আয় আয় বলে।

১। অন্ন পাবি শান্তি পাবি, দুঃখ তাপ সব ভুলে যাবি সেই দেশে গেলে
ভবে শান্তিবিহীন আছে যারা, আয় তোরা আয় সকলে।

২। সুখের দেশ কে যাবি আয়, দুঃখ-তাপ আর নাইরে তথায় নাই কোন কালে
কেন মিছে মায়ায় মত্ত সবে, আবদ্ধ মায়া জালে।

৩। পুত্রহারা নারী যেমন, পুত্রেরে করে অন্বেষণ, আর সকল ভুলে
আজ সেই ভবের পাগল, ঘরে ফিরে খুঁজে বেড়ায় পাগলে।

৪। গৃহহীন অন্নহীন পাগল, বাঁধাল মহা গন্ডগোল ঘোর কলি কালে
ও তাঁর কথা শুনে মরা মানুষ, তাঁহার কাছে যায় চলে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১০২)

কেবল দিনে-রাতে বসে রে, বাঁজাও গুপী যীশুর
বাঁজাও গুপী যীশুর নামে, তোর শুদ্ধ হবে অন্তর।

১। গুপীর তানে মিশায়ে তান, তুই যীশুর নামে গেয়ে যা গান
গানে মাতুক পরাণ, সংসারের ভুত ছড়াবে তোর
শুনে যীশুর নামের মন্তর।

২। নেমে যাবে সকল বোঝা, তোরে মুক্তি দিবেন মহারাজা, যাবে পাপের সাজা
মনের দুঃখ যাবে ঘুঁচে, পরম সুখে যাবে দিন তোর।

৩। গুপী যন্ত্র হাতে রেখে, মধুর যীশু নামটি গেয়ে মুখে, চলতে থাক সুখে
দেখবি একদিন ফুরাবে পথ, দেখবি সামনে স্বর্গের বন্দর।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(১০৩)
মিশ্র মুলতান-একতাল

কে জানে কোন রূপ ধ’রে সে আসবে হৃদয় দুয়ারে
কোন্‌ সুরে প্রাণ উঠবে ভ’রে পরাণ প্রিয়ের ঝঙ্কারে।

আসতে পারে কাঙ্গাল বেশে
পরের অভাব নিয়ে
হয়ত রে সে ডাকবে এসে
বজ্র আঘাত দিয়ে।

আসুক নাকো যে বেশ ধরে
নির্ভয়ে ধরিস তারে
চায় সে শুধু পেতে তোরে
ধরা দিয়ে আপনারে।

দুয়ার খানি খুলে তাঁর
বসিয়ে হৃদি মাঝারে
চরণ দু’টি দিসরে ভ’রে
চুম্বনে আঁখির ধারে।
-ধীরেন্দ্র লাল পাঁড়ে


_______________________________________________________________________

(১০৪)
খাম্বাজ-ঠুংরী

কে তুমি বালক, করিয়া আলোক
দাঁড়িয়েছ আজ গৃহ-দ্বারে?
(তোমায়) চিনি চিনি চিনিতে না পারি
(কোথা) দেখেছি বলে মনে পড়ে।

১। চন্দ্র-সূর্য আদি নক্ষত্র সকল
সাগরাদি সহ এ মহী মন্ডল
সৃষ্টিকর্তা যবে, রচিলেন এ সবে
দেখেছি সেখানে, তোমারে।

২। বাবিল নগরে মহা অগ্নিকুণ্ডে
শদ্রকাদি যবে আছি দন্ডে,
(তুমি) দেব পুত্র হয়ে সেখানে কি নিয়ে
শীতলীলে বহ্নি শিখারে।

৩। মরি মরি কিবা অপরূপ বেশ
সাজিয়াছ তুমি, সুত্রধরের বেশ
বুঝি তক্তা দিয়ে, তরণী বানিয়ে
তারিবে পাপী ভব নীরে।
- বিজয়নাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(১০৫)

কোথায় যীশু ঈশ্বর নন্দন, দেখা দেও এই দীনহীনে
আমার প্রাণ কাঁদিছে দিবা-নিশি চেয়ে তোমার পথ পানে।

১। চাদিকে হেরি অন্ধকার, অন্ধকার এই হৃদয়-মন্দির, অন্ধকার সংসার
প্রাণে সদা উঠে হায় হায় ধ্বনি ধারা বয় এই দুই নয়নে।

২। স্বর্গারোহন করিবার কালে, ভাসে তোমার বিষ্যগণ নয়নের জলে
তুমি বলেছিলে তাদের কাছে আসবে ফিরে এ ভূবনে।

৩। দিনে দিনে গেল কতদিন, পথ পানে চেয়ে চেয়ে আমার আঁখি হল ক্ষীণ
আমি নিদ্রা হইতে জাগি স্বপ্নে, তোমার রথের ধ্বনি শুনে।

৪। মিছা স্বপ্ন, মিছা এ জীবন, কবে তুমি আসবে ফিরে পাব দরশন
আমার দুঃখের নিশি প্রভাত হ’ল, পেয়ে তোমার শ্রীচরণ।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(১০৬)
প্রভাতী-ঠুংরী (আড়খেম্‌টা)
গাওরে প্রভাতে যীশু সঙ্কীর্তণ
রসনাতে যীশু নাম কর উচ্চারণ।
(হৃদয় খুলে ডাক রে রসনাতে, দয়াল নাম নাম রে)।

১। জলন্ত অনল প্রায়, রাঙ্গা রবি ঐ উদয়
অন্ধকার ভয়েতে পলায় হে, উঠ ভ্রাতা-ভগ্নি সব
দেখ স্বর্গীয় গৌরব
হৃদয়-আকাশে উদয়, স্বর্গীয় তপন।
(দিব্য চক্ষে দেখ রে- হৃদয়েতে-যীশুরূপ রূপ রে)।

২। জয় যীশু জয় জয়, সৃজন পালন লয়
সর্বমূলধার যীশু নাথ হে, ভ্রাতা-ভগ্নি, সবে মিলে
উল্লাসে হৃদয় খুলে
যীশু যীশু বলে, সবে কর আহ্বান।
মনের ক্ষুধা যাবে রে- যীশু বলে, প্রান শীতল হবে রে)।
-বিন্দুনাথ সরকার (১৯৮২ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১০৭)
গাও সেই মধুমাখা যীশু নাম মন-প্রাণ খুলে
ঐ নাম গানে ত্রিভূবনে আনন্দের ঢেউ খেলে।

১। অমর ধামে অগণিত দূতের বাহিনী
গায় যীশু নাম বীণা যোগে দিবস রজনী।

২। সাধুভক্তবৃন্দ যারা আছে ভূমন্ডলে
ঐ যীশু নাম গানে সদা ভাসে চোখের জলে।

৩। দুঃখ শোকে জরামৃত্যু পাপের জ্বালা যত
ঐ নাম গানে পলায় নামে বেঁচে উঠে মৃত।

৪। রূগ্ন আর্ত মুক্ত হয় যীশু নামের বলে
যীশু নামের মত নাম কি ব্রহ্মান্ডে আর মেলে।

৫। পাতকী-পাষণ্ড যারা পাপে জীর্ণ তরী
অকূল ভবজলে ধরে যীশু নামে পাড়ি।

৬। গাও যীশু নাম চঁাদ বদনে হরষিত চিতে
শুনুক ঐ নাম জগজ্জনে যারা চায় শুনিতে।

৭। স্বর্গ-মর্ত এক হয়ে যাক ঐ যীশু নাম গানে
মর্তে গাবো মোরা স্বর্গে গাবে দূতগণে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১০৮)
গানের তরী পূর্ণ ক’রে আকাশে আজ দেও ভাসায়ে
পিতার ধন্যবাদ আর গুণ সঙ্কীর্তণ, নয়নের জলে মিশায়ে।

১। কত দয়া কত আশীর্বাদ
করে তিনি পূর্ণ করলেন মনে কত সাধ
একবার আনন্দে কর ধন্যবাদ, উঠুক সঙ্গীত আকাশ ছেয়ে।

২। গানের তরী ভাসুক পবনে
ভেসে যাক সেই অমরপুরে পিতার ভবনে
যথায় দয়াল যীশু পাপীর জন্যে নিবেদন করেন বসিয়ে।

৩। অমরপুরে কত সাধুজন
আনন্দে প্রদক্ষিণ করেন পিতার সিংহাসন
পিতার নাম সংকীর্তন করেন দূতগণ, বীণার সুরে সুর মিশায়ে।

৪। সেই সুরে আজ কর গান তাঁর নাম
দেহ মন লুটায়ে তাঁর পায়ে কর হে প্রনাম
আসুক স্বর্গের সুখ আনন্দ বিশ্রাম, আমার এই আঁধার হৃদয়ে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১০৯)
 গিয়াছে অমর আত্মা পরম শান্তি নিকেতনে
দুঃখ কষ্টের অবসানে আছে সুখময় স্থানে।
পেলে ক্ষুধা শান্তি সুধা নিভাবে প্রাণের ক্ষুধা
শ্রান্তি ক্লান্তি নাইকো তথা, থাকে আরামে বিরামে।
পুনঃপ্রভু মেঘরথে আসবেন দূতগণ সাথে
মধুর তুরীধ্বনি শুনে জাগিবে বিশ্বাসীগণে।
জীবিত বিশ্বাসী সবে প্রভুতে একত্র হবে
সহসা রূপান্তরিত হবে সবে একই সনে।
-জয়নাথ অধিকারী


_______________________________________________________________________

(১১০)
গেছে নেমে গেছে আমার এই জীবনের পাপের ভার
যীশুর ক্রশতলে এসে, এক নিমিষে পেয়েছি আমি নিস্তার।

১। গেছে শঙ্কা, ভাবনা আমার গেছে লজ্জা যাতনা
আমার গিয়াছে মর্ম বেদনা, গেছে প্রাণের হাহাকার।

২। যুগে যুগে কত জন, করে ক্রুশ দরশন
তারা পেয়েছে পাপেরি মোচন, স্বর্গরাজ্যে অধিকার।

৩। অদ্য এ শুভদিনে, যীশুর ক্রুশ দরশনে
এল মুক্তি, এ দগ্ধ জীবনে, আনন্দের নাই সীমা আর।

৪। যুগে যুগে জগৎময়, আমি গাব যীশুর ক্রুশের জয়
তোরা ক্রুশের তলে, আয় সবে আয় আয় গো পাপী নারী-নর।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(১১১)
গেল সন্ধ্যা- এল আধাঁর রজনী
ভবের অন্ধকারের শঙ্কা নাই আমার, সাথে থাকলে আপনি।
(আমার অন্ধকারের শঙ্কা নাই আর)।

১। সারাদিন ঐ চরণের ছায়ায়, মোরে দিয়াছ স্থান যীশু দয়াময়
করে তোমার দয়া স্মরণ এই সময়ে, করি আনন্দ-ধ্বনি। 
(দয়াল যীশু তোমার যীশু নামে)।

২। ক্ষমা কর যা কিছু অন্যায়, আমি করেছি আজ ভুলিয়া তোমায়
তুমি ধোয়াও তোমার রুধিরের ধারায়, মনের যত পাপ গ্লানি।
(তোমার নিজ রক্সে ধোয়াইয়া দেও)।

৩। তোমার শান্তি দেও মোর অন্তরে, দুঃখ ঘুঁচাও তোমার প্রেমের মন্তরে
যেন ঘুমের ঘোরে হৃদয় যন্তরে, বাঁজে তোমার রাগিনী।
(কেবল যীশু যীশু যীশু বলে)।

৪। সমর্পণ করি ঐ চরণে, মোরে দিয়াছ যা কিছু ভূবনে
আমার দেহ, আত্মা, আত্মীয় জনে, রেখো চরণে আনি।
(আমার আত্মবন্ধু- স্বজনগনে)।

৫। নিশি শেষে মেলিয়া নয়ন, যেন দেখিতে পাই তোমার চাঁদবদন
তুমি নিদ্রার বিশ্রাম করহে প্রেরণ, সুখে ঘুমাউক সব প্রাণী।
(তোমার ঐ চরনের ছায়াতলে)।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯৪৪ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১১২)
গুরু তোমার আজ্ঞা নিয়ে শিরোপর, ভাসাইলাম তরণী
তুমি কর্ণধার মোরে কর পার, ভাসাইলাম তরণী।

১। আকাশ আঁধার চারিদিকে, গুরু গুরু দেয়া ডাকে
বুঝি ঝড়ের গর্জন শুনি।
শঙ্কা নাই মোর মনে ঝড়া তুফানে হেেআজ কাণ্ডারী আপনি।

২। সমুদ্রে ঝড় যায় গো থেমে শুনলে দোহাই যীশু নামে
(নামের মহিমা এমনি)
তুফান নোয়ায় মাথা, জগত্রাতা হে,
শুনলে তোমার মুখের বাণী।

৩। দিলাম নৌকায় নোঙ্গর কেটে ভাঙ্গন কূলের পুরাণ ঘাটে
ছুঁছে তোমার চরণখানি
হলেম সকল হারা, তোমা ছাড়া হে
যেন আর কিছুই না জানি।

৪। আসুক ভাটা, আসুক জোয়ার, সে ভাবনা আজ ভাবি না আর
(ভাবি তোমার-গুণ কাহিনী)
কত করেছ পার, হাজার হাজার হে,
যত অধম পাপী প্রাণী।

৫। নিয়া এখন চল মোরে, তোমার দেশের সেই বন্দরে
(সে দেশ সকল দেশের রাণী)!
তথায় সাধুগণে ঐ নাম- গানে হে, আছে বিভোর দিন রজনী।

৬। চক্ষে রেখে তোমার মূর্তি, গাব তোমার মধুর র্কর্তি
কীর্তির সীমা নাহি জানি
বিশ্চয় জানি মনে শুভদিনে হে, পাব তোমার সেই রাজধানী।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১১৩)
কীর্তনাঙ্গ-খেমটা

ঘটে যা ঘটুক তোমার জীবনে- বল ধন্য যীশু!
বল রাত্রি দিনে, সর্বক্ষণে
ধন্য যীশু! ধন্য যীশু! ধন্য যীশু! 

১। আসলে সুখের সময়, এ সংসার আনন্দময়
তুমি মহানন্দে খুলে হৃদয়, বল- জয় জয় ধন্য যীশু!

২। আসলে ব্যাথা-বেদন, হাহাকার দুঃখ ক্রন্দন
তুমি সেই শ্রীচরণ করে স্মরণ, বল-জয় জয় ধন্য যীশু!

৩। আসলে সুখের জোয়ার, ভরে যায় তোমার ভান্ডার
গোলায় ধন-ধান্য ধরে না আর, বল- জয় জয় ধন্য যীশু।

৪। যখন হয় শূণ্য দুই হাত, দুঃখের রাত হয় না প্রভাত
তুমি উর্ধে তুলে সেই শূণ্য হাত, বল-জয় জয় ধন্য যীশু!

৫। দুঃখ-সুখ আঁধার-আলো, জীবনের সাদা কালো
নিয়ে দুঃখ-সুখ, আর মন্দ ভাল, বল- জয় জয় ধন্য যীশু।

৬। সুখ দুঃখের উর্ধে থেকে, তাঁর দিকে দৃষ্টি রেখে
বল বুঃখে-সুখে, হাস্য মুখে, জয় জয় জয় ধন্য যীশু।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১১৪)
ঘরের বাহিরে (করল) রে মোর যীশুর নাম রতন
ওনাম পেয়ে মনে বনে বনে ঘুরে মরি নিশি দিন।

১। নাম শুনিয়া গভীর রাতে, রইতে নারি কোন মতে ঘরে গো
যেমন নায়ের গুণে নায়ে টানে, তোমন যীশুর নামের টান।

২। পাগল বলে সবাই আমায়, ঘুরে বেড়াই যেথায় সেথায় বলে গো
আমার সে পাগলামী যাবে কিসে জানে না কোন জনে।

৩। পিছনেতে ছিল যারা তাদের মায়ায় হয়ে হারা গো
এবার যীশুর প্রেমে দিয়ে সাড়া, গান গেয়ে যাই এই জীবন।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(১১৫)
চলে সারি সারি স্বর্গের দূতগণ
যেন কি গান গেয়ে।
ধরি ধরি ধরতে নারি, আছি শূণ্য পানে চেয়ে।

১। ভোরের আগে শেষের রাতে, দেখলাম প্রভাতী ঐ
তারার সাথে, শূণ্য আকাশ পথে
নেমে এল জগৎ পানে, দূতের সোনার বীণা নিয়ে।

২। মধুময় রাগিণীর সুরে, তারা দিল ঝংকার বীণা তারে
সারা আকাশ জুড়ে
ছুডিটল দক্ষিণা বাতাস, সুরে জগৎ গেল ছেয়ে।

৩। উঠল ফুটে জগতের ফুল, যদ মল্লিকা, মালতী, বকুল
গন্ধে হয়ে আকুল
উঠল ডেকে কোকিল পাখী, কুঞ্জে বিহঙ্গে জাগায়ে।

৪। হৃদয় মাঝে বাঁজল বাঁশী, তুমি ধন্য প্রভু যীশু মশীহ্‌
জন্ম নিলে আসি
দুঃখের এই ধরণী মাঝে, পাপীর ব্যাথার ব্যথী হয়ে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১১৬)
আবহনী সঙ্গীত তাল- ১ মাক্রো

চরণে দিতে তোমারিিএনেছি অর্ঘ্য আহরি।
আমি করি হোম যজ্ঞ দিব তাহে অর্ঘ্য
দেহ মন প্রাণ অনুষ্ঠিত।

১। নাই কিছু দিতে মোরা দীন অতি
তবু আশা করিতে তোমার আরতি
মম কণ্ঠে ভাষা দিয়ে হে বিশ্বপতি
পুরায়ে বাসনা মোদেরই।

২। নানাবিধ কুসুম সযতনে তুলি
সাজায়ে রেখেছি সঙ্গীতের ডালি
কৃপা করি হে দেব, লহ গলে তুলি
সামান্য মাল্য মোদেরি।
সংরক্ষণে- হর্ষনাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(১১৭)

চড়ে সোনার রথে এস হে সোনার চাঁদ, আকাশ পথে।

১। তুমি বলেছিলে যাবার কালে সোনার অমর ধামে
তোমার সময় হলে ধরাতলে আসবে আবার নেমে।

২। দুঃখ এ জগতে শত্রু হাতে সয়েছিলে প্রাণে
এবার রাজার বেশে বসবে এসে সোনার সিংহাসনে।

৩। উড়বে নিশান তোমার হে ত্রাণেশ্বর আকাশ করে আলো
হবে পদানত, তোমার যত শত্রু ভবে ছিল।

৪। চরণ দরশন পেয়ে ধন্য হবে এ ধরণী
বলে “জয় যীশু জয়” ব্রহ্মাণ্ডময় উঠবে গানের ধ্বনি।

৫। ঘুঁচবে ভবের জ্বালা, পাপের লীলা, দুঃখ যাবে ঘুঁচে
ব্যথা করবে হরণ দুঃখীর নয়ন আপনি দিবে মুছে।

৬। হবে দুঃখ শূণ্য শান্তি পূর্ণ সুন্দর বসুন্ধরা
তোমার সোনার রাজ্যে রবে না আর মৃত্যু ব্যধি জরা।

৭। কবে সময় হবে আসবে ভবে বরভয় দুই হাতে?
কবে দিবে দেখা পাপীর সখা, তোমার সোনার রথে।

৮। চেয়ে পথ পানে দিন গণে এই ব্যথিতা ধরণী
একবার কর স্মরণ ঈশ্বর নন্দন, জিন মুখের সেই বাণী।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১১৮)
ঝিঁঝির মিশ্র-ঠুংরী

১। চল চল দ্রুত সবে, যীশু জয় রবে
হাতে লয়ে জয়েরি নিশান
কাঁপুক বিপক্ষ শয়তান (২)

২। দিয়ে রক্ত দিয়ে প্রাণ, বাঁচলেন এ পরাণ
বাঁচিল পতিত মানবগণ।

৩। প্রভু যীশুর আগমনে, গায় স্বর্গ দূতগণে
শুন শুন সুললিত তান
ত্বরা চল ধেয়ে চল, ভক্ত সবে নিয়ে চল
আনন্দে উথলে আজ প্রাণ (২)

৪। শুভ দিনে শুভ ক্ষণে, যে মহাশুভ মিলনে
গাব ভক্ত ভরিয়া পরাণ
নাহি রবে দুঃখ ভয়, সদা বল যীশু জয়
আনন্দে গাইবে মধুর গান (২)

৫। বসাইয়া নিজ কোলে, মুছায়ে চোখের জলে
আদরে পিতা দিবেন স্থান
বয়ে গেল সুসময় ছুটে আয়, ছুটে আয়
ছেড়ে আয় মরণের স্থান (২)।
-শশী ভূষণ পণ্ডিত


_______________________________________________________________________

(১১৯)
বেহাগ-কাওয়ালী

চেয়েছি যা পেয়েছি সব, কিছুই বাকী নাই আর এখন
তোমার মহা দয়ার দানে ভরিয়া দিয়েছ ভূবন।

১। খুলিয়া দিয়াছ তোমার, সোনার পুরীর ভাণ্ডারের দ্বার
পূর্ণ করিয়াছ আমার ছিল যা অভাব অনটন।

২। পেয়ে তোমার করুণার দান, উথলিয়া উঠিছে প্রাণ
জাগিতেছে আনন্দ গান, আলোড়িত করিয়া মন।

৩। প্রাণের বোঝা গেছে নেমে, ভাবনার ভয় গেছে থেমে
আকুল হৃদয় তোমার প্রেমে, তোমার দানে ধন্য জীবন।

৪। জাগিছে প্রত্যাশা মনে, যত দিন থাকি ভূবনে
পাব তোমার ঐ চরণে, যখন আমার যা প্রয়োজন।

৫। ধন্য ধন্য ধন্য পিতা, ধন্য ধন্য যগত্রাতা
ধন্য ধন্য পূণ্য আত্মা, ধন্য হে সত্য সনাতন।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১০/৬/১৯৪৮ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১২০)
মধু কানের সুর-কাহারবা

ছাবি না তোমার চরণ
ঐ চরণে পাব আমি, যা কিছু মোর মনের মতন।

১। যা কিছু পাই এ জগতে, ভেসে যায় সব কালস্রোতে
দু’দিন পরে রয় না হাতে, মিছা যেন নিশির স্বপন।

২। আদি হ’তে অনন্তকাল, তুমি মাত্র আছ দয়াল
কালস্রোতের এই ঘুর্ণিজল, ছোঁয়না তোমার ঈশ্বর নন্দন।

৩। চির চঞ্চল এ সংসারে, সার জেনেছি মোর অন্তরে
সারাৎসার ঐ চরণ ধ’রে বাঁচিব বাঁচাব জীবন।

৪। শান্তি আছে আছে আশ্রয়, ঐ চরণে সব পাওয়া যায়
বাঞ্চা কল্পতরু তোমায়, নাম দিয়েছে জানে যে জন।

৫। প্রেম আছে যার নাই তুলনা, ক্ষা যা ভবে মিলে না
পুরাতে মনের বাসনা, তোমার মত কে আর এমন।

৬। এ প্রার্থনা করি তোমায়, হে প্রভু যীশু দয়াময়
চরণ ধরে থাকতে আমায়, দিও শক্তি যাবজ্জীবন।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯৪৩ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১২১)

জগত পিতা গো করি তোমার পায়ে আত্ম-সমর্পণ
তুমি সারা নিশি জেগে থাক, তোমার সন্তানের রক্ষার কারণ।

১। কাল নিশি বোরে পিতা তুমি মোরে সুখ নিদ্রা হতে
যখন জাগাইলে নয়ন মেলে, আমি দেখেছিলাম শ্রীচরণ।

২। তোমার দয়ার হস্ত আমার এই মস্তকে, রেখে ধীরে ধীরে
তুমি দিয়াছিলে এই কাঙ্গালে, তোমার আশীর্বাদ অমূল্য ধন।

৩। মনে ছিল আশা, সারা দিন ধরে আমি পূঁজিব তোমারে
আমার সকল কাজে, জগত মাঝে, হবে তোমার মহিমা কীর্তণ।

৪। দিবা অবসানে ব্যথিত অন্তরে, বাবি বসে বসে
আমি বারে বারে তোমায় ছেড়ে, কত দূরে করেছি ভ্রমণ।

৫। আমি ভুলিয়াছি বারে বারে তোমায়, অসার চিন্তায় মজে
কত কলঙ্ক মেখেছি অঙ্গে, কত মলিন হয়েছে এই মন।

৬। পিতা ক্ষমা কর দয়া কর, শান্তি প্রদান দাসে
দেও ঐ চরণে স্থান হে দয়াময়, আজ এই রজনীর বিশ্রাম কারণ।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১২২)

জানি বিশ্বাসের বল এতই প্রবল, পাহাড় সরে যায়
কত অসাধ্য কাজ সাধন করে, বিশ্বাসজাত প্রার্থনায়।

১। যীশু বলেন বিশ্বাস হলে দেহতরী যায় না টলে গো
রক্ষা হয় তার লাভে মূলে, হয়না ক্ষতি পরীক্ষায়।

২। সন্দেহ করোনা মনে, বাঁচিতে বিশ্বাসের গুণে গো
কি করিবে ঝড় তুফানে, সঙ্গে আছেন দয়াময়।

৩। শুনেছি বিশ্বাসের জোরে, জল মিলে মরু প্রান্তরে গো
সেরূপ বিশ্বাস দিয়া মোরে, কর প্রভু নির্ভয়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১২৩)
কীর্তণ

জীবিত নাই প্রাণের ভাই লাসার
কথা বলিতে বুক বিদরে, চারি দিন সে কবরে
আর কি দেখা পাব তার।

১। তোমার কাছে সংবাদ দিয়ে
ছিলাম আশা পথ পানে চেয়ে
তুমি এসে হবে উদয়, হে যীশু দয়াময়
শঙ্কা ভয় রবে না আর।

২। মরণকালে লাসার শুধায়
আজ সেই বিপদ ভঞ্জন আছে কোথায়
একবার পেলে তাঁর সেই পরম পদ
ঘুঁচে যাবে সব বিপদ, শমন ভয় রবে না আল।

৩। শূণ্য করে সোনার পুরী
তারে নিল শমন করে চুরি
আজ সেই প্রাণের ভাই বিহনে
কে আছে ভূবনে সকল দেখি অন্ধকার।

৪। আর কি ভবে পাব তারে, লাসার
আর কি ঘরে আসবে ফিরে
কাল শমনের শাসনে, তাঁর সেই চাঁদ বদনে
কথা কি সে কবে আর?
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১২৪)
ভৈরব-কাওয়ালী

জানাব আর কারে ব্যথা
সে দেহ আর কবরে নাই, নিয়ে গেছে হরণ করে।

১। দুর্মতি পাষণ্ড জন, করেছিল যে লাঞ্ছনা
জগতে তার নাই তুরনা স্মরণে পরাণ বিদরে

২। কথাঘাতে জর্জরিত, সর্বাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত
দেখে তারে ক্রুশার্পিত, সূর্য লুকায় অন্ধকারে।

৩। সোনার দেহ করি ধৌত, এই উদ্যানে সমাহিত
করেছিলাম বিধিমত, আজ সে দেহ নাই কবরে।

৪। কারে শুধাই কে দেয় বলে, পাব তারে কোথায় গেলে
নিশি শেষে প্রভাতকালে, বল মোরে দয়া করে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১২৫)
মিশ্র ভূপাল-ঠুংরী

জয় প্রভু যীশু, জয় তব জয়
দিগন্তে নবীন অরুণ উদয়।
জয় রথে তব শুভ শঙ্খবানী
স্পন্দিত করে আজি অসত্য হানি
মৃত্যু বন্ধন করিয়াছ ক্ষয়।

যে জানিল তব প্রেম ভক্তি মর্মে
সে লভিল দুর্জয় শক্তি কর্মে।
ভক্ত এস নব জাগ্রত প্রাণে
লও হে দীক্ষা তারি জয় গানে
পূণ্য সেবাব্রত লও দেশময়।
-সন্তোষ কুমার পাত্র


_______________________________________________________________________

(১২৬)
খাম্বাজ-কাশ্মীরি

তব প্রেম দেখে আমি যীশু
মনে হলেম হতজ্ঞান।
তুমি প্রাণ দিয়া নাথ, প্রাণ কিনেছ
সেই তো প্রাণের প্রাণ।

১। আহা দারুন ক্রুশেতে, প্রেক শলাকাঘাতে
আমার প্রাণ কাঁপিছে থর থর
করে ক্রুশ ধ্যান।

২। আমি ক্ষুদ্রাণু ক্ষুদ্র, জ্ঞানে হয়েছি আর্দ্র
আমার ক্ষুদ্র মনে থাকে যেন
দয়াল যীশুর নাম।

৩। একি শুভ সমাচার, প্রাণের যীশুই আমার
প্রিয় যীশুর বরে, পিতার করে
আঁকা আমার নাম।

৪। আমি পাপী নগণ্য, যীশুর হয়েছি গণ্য
তাই যীশু ধন্য, যীশু ধন্য
গায় মম প্রাণ।
-বিন্দুনাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(১২৭)

(সুরঃ যীশুর আলো কি উজ্জ্বল)

ডাক প্রভু তোমার কাছে
শান্তিকামী সকলকে।
তোমার ক্রুশের ছায়া মাঝে
শান্তির তুফান খেলে রে।

১। তাই স্রোতধারা রুধির মাঝে
ডুবাও প্রভু আমারে।

২। যদিও দুর্বল পাপী এসেছি শুনিতে বাণী
এবার তোমার ডাকের বানের মাঝে
ভাসব আমরা আনন্দে।
-দীনবন্ধু মিত্র


_______________________________________________________________________

(১২৮)

তরী দিনে দিনে জীর্ণ হইল রে আমার নয়া নৌকা
সাধের তরী জীর্ণ হইল, আজও কাণ্ডারীর নাই দেখা।

১। ভেবে ছিলাম প্রভাত কালে, সুখে যাব চলে নৌকা তুলে
দিব বাদাম তুলে।
বাদামে দক্ষিণা বাতাস, লাগবে চন্দন গন্ধমাখা।

২। নয়া নৌকা পুরাণ হল, আমার সকাল গিয়ে বিকাল হইল
মাঝি কোথায় রইল।
ওদিকে ঐ মারে চিলিক, ঝড়ের মেঘে আকাশ ঢাকা।

৩। ভাটার বেশী নাই আর বাকী, মোরে সকলেই কি দিল ফাঁকি
সবই মিথ্যা নাকি।
যেদিকে ফিরাই দুই নয়ন, দেখি সকল দিকই ফাঁকা।

৪। বসে আছি মাঝির আশায়, যদি এখনও সে নৌকা ভাসায়
তবে করি না ভয়।
সার জানি তাই বসে বসে কেবল সেই মাঝিকে ডাকা।

৫। এস আমার নায়ের কাণ্ডারী, দয়াল ভাসাও এসে সাধে তরী
এস ত্বরা করি।
ধর হাল আর তুলে দেই পাল, দি তন যায় না ধরে রাখ।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯১৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১২৯)

তুমি এসেছ প্রভাতে, রাজার সাজে সেজে যীশু দয়াময়
শ্রীমুখের আলোকে, ভয়ে নিশির আঁধার দূরে পলায়।

১। জেগে উটল রসনা মন, করতে তোমার গুণ সঙ্কীর্তণ
শুভ ক্ষণে প্রভাত বেলায়
গুন ধাম তোমার নাম, আমি গাব আজ এই জগত সভায়।

২। আজ তোমার এই জগত মাঝে সব কথায় মোর সকল কাজে
উঠুক বেঁজে ঐ নামের জয়
দেহ-মন সমর্পণ, আমি করি তোমার ঐ রাঙ্গা পায়।

৩। বিকাইলাম ঐ চরণ তলে, ইহকাল পরকালে
সর্ব কালে সবার আশ্রয়।
চিরকাল হে দয়াল, যেন তোমার ঐরূপ জাগে হৃদয়ে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩০)
মিশ্র গারা কাওয়ালী

তুমি নিশি ভোরে এস প্রভু মোর প্রাণেেএস মোর প্রাণে, নিশি অবসানে।
সুখও শয্যায় তব চরণে, ছিলাম ঘুমে অচেতনে
তুমি হয়ে প্রহরী সারা নিশি ভরি
প্রভু রক্ষা করেছ এই দীনহীনে।

প্রতি বোরে তোমার করুণা, নিত্য নূতন তার নাই তুলনা
পেয়ে তোমার দয়া, আমার চিত্ত কায়া
উঠুক আনন্দে মাতিয়া গুণগানে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩১)
ভাটিয়ালী-দাদ্‌রা

তুমি অধিষ্ঠিত হও এই গৃহে ইশ্বর কুমার
বিরাজ কর সবার প্রাণে, তুমি মূর্তিমান হও হৃদয়ে সবার।

১। তোমার শান্তি রেখে মনে, যেন সবে নিশি দিনে
থাকি ঐ শ্রীচরণ ধ্যানে
সুখে-দুঃখে চিরজীবন, থাকে অটল নির্ভর তোমার উপর।

২। দাও হে তোমার সরলতা, যেন তোমার দয়ার কথা
চিরদিন প্রাণে রয় গাঁথা
কৃতজ্ঞতা তোমার প্রতি যেন সবার মনে রয় নিরন্তর।

৩। দেও সবারে শান্ত মতি, অহঙ্কার, হিংসা, কুমতি
সংসারে ভাবনা ভীতি
অমঙ্গল সব দূরে রাখ, যেন পায়না স্থান এই গৃহের মাঝার।

৪। চালাও তুমি সর্বজনে, তোমার প্রেমের আকর্ষণে
আনন্দ নগরের পানে
যেন পায় স্থান তোমার পায়ে, যখন ভাঙ্গবে এ সংসারের বাজার।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩২)

তুমি বাঞ্চা কল্পতরু ভূবনে
দয়াময়, এ ধরাতে, তুমি বিলাইছ সর্বজনায় বাঞ্ছিত ধনে।

১। বিলাইছ যুগে যুগে সবারে সর্বস্ব ধন
এসে এই ভূমণ্ডলে, দীনহীন নরকূলে
বিলাইলে ক্রুশে অমূল্য জীবন
অদেয় কিছুই নাই, হে যীশু জগৎ গোঁসাই
পাই আমি যা কিছু চাই, তোমার কাল্যাণে।

২। এই ভিক্ষা চাহি আজি ধূলিতলে লুটায়ে
কাঙ্গাল এই দীনহীনে, রেখো ঐ শ্রীচরণে
গুণ গানে যাবে হে দিন কাটায়ে
আমার এই দেহ জীবন, পাদপদ্মে করি অর্পণ
কর হে কর গ্রহণ, আপন গুণে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯৪৫ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৩৩)

তুমি ধন্য ধন্য পিতা ধন্য জগত্রাতা
ধন্য পূণ্য আত্ম নিরঞ্জন
তুমি নিত্য পরাৎপর ত্রিত্ব একেশ্বর
সত্য সারাৎসার সনাতন।

১। অনন্ত অনাদি আছ নিরবধি
সর্বসিদ্ধিদাতা ভগমান
ভবের নবরূপে এসে দিলে প্রাণ ক্রুশে
দিতে নিজ দাসে মুক্তি ধন।

২। তব নাম গানে বৈকুণ্ঠ ভূবনে
গেয়ে অপূর্ব রাগিণী করে দূত বাহিনী
তোমার আসনখানি প্রদক্ষিণ।

৩। তব প্রেমে মগ্ন পাদপদ্মে লগ্ন
রাখ অভাজনে আজীবনে
যেন তব প্রেম স্মরি দিবা বিভাবরী
ঐ যীশু নাম করি সঙ্কীর্তন।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩৪)
তুমি দয়া করে দিয়াছ আহার
ওহে কগৎ পিতা দয়াধার
তোমার পায়ে জানাই নমস্কার।

তুমি আশীর্বাদ কর এ খাদ্যে
দান কর আত্মার আহার
পূর্ণ কর এই গৃহের ভান্ডার।

দিয়া সুখাদ্য (আজ) ক্ষুধিত জনে
(তুমি) বাঁচাও দুঃখী নারী নর।
আমেন।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩৫)

তুমি জাড়ালে মোর তাপিত পরাণ, পাপের ক্ষমা দিয়ে
ধন্য হল অসার জীবন, তোমার দয়া পেয়ে।

১। কেটে গেল মনের আঁধার, এল কগৎ জুড়ে সুখের জোয়ার
কি শুভদিন এল আমার, সারা জীবন ছেয়ে।

২। শুষ্ক মরু হল সিক্ত, হল পূর্ণ যাহা ছিল রিক্ত
ক্ষুধার্তকে করলে তৃপ্ত, অমৃত বিলায়ে।

৩। মিটে গেল সকল তৃষ্ণা, আমার নিরাশ প্রাণে জাগে আশা
প্রাণ-পাখী পেয়েছে বাসা, ঐ চরণের ছায়ে।

৪। কি আনন্দ এল প্রাণে, হৃদয় পূর্ণ আজি গুনগানে
স্বর্গের শান্তি চরণ ধ্যানে পেয়েছি হৃদয়ে।

৫। গাব সদা আনন্দ গান, রেখে ঐ চরণে বাঁধা এ প্রাণ
রেখ মোরে হে দয়াবান, চিরদিন ঐ পায়ে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩৬)

তুমি ধন্য যীশু ধন্য দয়াময়
তোমার জয় হবে জয় হবেই হবে হবে তোমার জয়।

১। পাপী তাপী যত দুরাচার হবে পার দয়াধার
তোমার নামের গুণে যাবে ওপার সাধের অমরায়।

২। তোমার রাজ্য আসেবে ভবে, আসিবেই আসিবে
তোমার জগৎ জোড়া রাজ্য হবে স্থাপিত ধরায়।

৩। তোমার ইচ্ছা বৈকুণ্ঠে যেমন পালিছে সর্বজন
তেমনি এভবেও হবে পূরণ, তোমার অভিপ্রায়।

৪। পূর্ণ সবে পূণ্যেতে তোমার, এ সংসারে ত্রানেশ্বর
সেদিন সুখের সীমা রবেনা আর এ ব্রহ্মাণ্ডময়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩৭)

তুমি আনন্দ নগরে, চলেছ জগৎ ছেড়ে হে দয়াময়
কেমনে চরণে জানাই যত কথা জাগে হৃদয়।

১। সাধু যোহন জর্দন তীরে, জানাইয়াছিলেন সবারে
মুক্তিদাতা তুমি ধরায়
এ ধরার পাপের ভার, প্রভু ঘুচে যাবে তোমার কৃপায়।

২। তোমার আত্মবলিদানে জগদ্বাসী সর্বজনে
মুক্ত হবে পাপেরি দায়
আসিবে এ ভবে মহাসুখের রাজ্য আনন্দময়।

৩। কি দুঃখ করেছ সহ্য, যেন সেই আনন্দের রাজ্য
জগৎ মাঝে হয় গো উদয়
দুঃখ ক্লেশ, হিংসা দ্বেষ, যেন না থাকে আর মলিন হৃদয়।

৪। সয়েছ তুমি নীরবে, যত দুঃখ আছে ভবে
কি দুঃখ না সয়েছ হায়
ক্রশো’পর ত্রাণেশ্বর, তুমি সকল দুঃখ করেছ জয়।

৫। করেছ জয় জগৎ সংসার করেছ জয় চিত্ত সবার
প্রণাম জানাই তোমার ঐ পায়
দয়াময় তোমার জয়, হবে চিরকাল এই ব্রহ্মাণ্ডময়।

৬। মেঘের রথ আসিছে নেমে, তোমাকে আনন্দ ধামে
নিয়া যাবার হ’ল সময়
আকাশে বাতাসে স্বর্গের অভ্যর্থনার গান শোনা যায়।

৭। চেয়ে রব আকাশ পানে মেঘের রথের বাতায়নে
ঐ চাঁদ বদন দর্শন আশায়
অকারণ দু’নয়ন যেন ভেসে যায় জলের ধারায়।

৮। বহে যদি অকারণে, জলের ধারা দুই নয়নে
প্রবোধ নাহি মানে হৃদয়
দৃষ্টিপাত কর নাথ, জেনো অবোধ পরাণ তোমারেই চায়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩৮)

তুমি বসে আছ, গোলোকের সেই সোনার আসনে
স্বর্গের পিতার দক্ষিণে।

১। একদিন প্রভু ছিলে যখন এ সংসারে, জগদ্বাসী নারী-নরে
তেমায় টাঙ্গাইয়া সেই ক্রুশোপরে, মেরেছিল প্রাণে।

২। অদ্য প্রভু, স্বর্গ-দূত আনন্দে ভাসি, গুণগান গায় দিবানিশি
তোমার ভক্ত যারা জগদ্বাসী, লুটায় ঐ চরণে।

৩। ওহে প্রভু, তোমাবিহীন আছে যারা, তোমার হাতে দেয় নাই ধরা
ক্রমে আসিতেছে কাছে তারা, তোমার প্রেমের টানে।

৪। একদিন প্রভু, ঐ চরণে হব নত, নরনারী আছে যত
তোমার মরণ গুনে হবে মুক্ত, যে আছে যেখানে।

৫। অদ্য প্রভু, সে শুভদিন দেকার আশে, মোরা সবে আছি বসে
আসুক তোমার রাজ্য সর্বদেশে, দেখে যাই নয়নে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৩৯)
পরজবাহার-ঢিমে তেতালা

তৃষিত এ চিত মম সতত-নিয়ত।

১। দাবানল দগ্ধ বনে ফুরঙ্ক সশঙ্ক মনে
ছোটে জলের অন্বেষণে, হয়ে প্রাণ ভয়ে ভীত।

২। তেমনি এ হিয়া মম, তৃষিতা হরিণী সম
ছুটিতেছে প্রিয়তম, তোমা পানে অবিরত।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৪০)

তোরে বুঝাইলাম কত ওরে অবোধ মন
চেতন কেন হইলি না,
ঐ দেখ শমন রাজা দ্বারে এসে, জারী দেয় পরোয়ানা।

১। সঙ্গে নিয়ে বন্ধু ছয়জন, কুসঙ্গে কাল করতেছ ক্ষেপণ
তারা হরে নিল সর্বস্ব ধন, তবু তাদের চিনলি না।

২। মায়াপুরের বন্দরে এসে, মুগ্ধ হয়ে আনন্দ রসে
ও তুই লুব্ধ হয়ে সুখের আশে হারাইলি ষোল আনা।

৩। নয়ন প্রদীপ নিয়িা আইল, স্বর্গপুরের দ্বার রুদ্ধ হইল
ঐ দেখ দণ্ড রাজা খবর দিল, বসতি আর চলে না।

৪। রূপ নগরে আগুন লাগল শোভাগঞ্জ পুড়ে ছাই হইল
ঐ দেখ চরণ বাবু কাবু হইল ফুরাইল বাবুয়ানা।

৫। অধম বলে কররে শ্রবণ দিন থাকিতে কর পলায়ন
একবার শমন রাজা করিলে বন্ধন, ছেদন করতে আর পারবি না।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(১৪১)

তোমারি চরণে যীশু করি আত্মসমর্পণ
সদা যেন তব ইচ্ছা আনন্দে করি পালন।

১। যীশু তোমার রব শুনে, আশ্বাসিত হয়ে প্রাণে
এসেছি তব সদনে, আশীর্বাদ কর দান।

২। কি আছে তোমারে দিব, আদত্ত কি আছে তব
তোমার প্রদত্ত সব সম্পদ জীবন প্রাণ।

৩। শুচি কর এ অন্তর, শুদ্ধ রব নিরন্তর
তব প্রেমে পূর্ণ কর, আনন্দে মাতিবে প্রাণ।

৪। বাসনা করেছি প্রাণে, সদা রব তব সনে
তোমা ছাড়া এ জীবনে, অন্য আশা নাই এখন।

৫। দয়াল যীশু দয়া করে, আাত্মায় পূর্ণ কর মোরে
সদাই তোমার তরে, করিব হে কালযাপন।
-অজ্ঞাত (১৮৯৬)


_______________________________________________________________________

(১৪২)

তোমার রক্ত করহে মোচন
যাতে সকল পাপ মোর হবে গো মোচন
এসে ক্রুশোতলে পাই যেন আজ
তোমার রক্তের অবগহান।

১। কত মিথ্যা, কত ফাঁকি, মনের মাঝে আছে বাকী
কত পাপ গোপনে রাখি, ভবে কাটাই এ জীবন।
সে সব ধুয়ে যাক আজ তোমার রক্তে
ওহে যীশু পতিত পাবন।

২। সংসারের বাসনা যত, ধুয়ে যাক জনমের মত
সকল উদ্বেগ হতে মুক্ত কর আমার এ জীবন
ভবের আশঙ্কা, ত্রাস, ভয়-ভাবনা, সকলই কর প্রক্ষালন।

৩। অবিশ্বাস আর নৈরাশ্যময়, কলঙ্কিত আমার হৃদয়
ধৌত কর হে দয়াময়, রক্ত করি বরিষণ
কর তোমার প্রেমের প্রেমিক মোরে, শ্রীচরণে এই নিবেদন।

৫। ক্রুশের তলে ঐ রুধিরে, অবগতি করে মোরে
সফল কর মোর অন্তরে, তোমার ক্রুশীয় মরণ
কর সফল তোমার অসীম দয়া, সফল কর আমার জীবন।


_______________________________________________________________________


(১৪৩)

তোমার শুভ জন্ম দিনে
শ্রীপাদপদ্মে লুটাই মোরা, অভাজন দীনহনগণে।

১। মানব জাতির হল পতন, জগৎ পিতা দিলেন বচন
আপন গুণে এ ভবে আসিবে তুমি পাপীর কারণ
তেুমি করবে তারণ পতিত পাবন, মানব সন্তানে।

২। পিতৃ সত্য পালিবারে, এসেছ ভব সংসারে, শুভলগনে
আনন্দ গান জগৎ জুড়ে উঠিছে গগনে
স্বর্গ দূতের সমাজ, হে মহারাজ, মাতিয়াছে গানে।

৩। তোমার অপার দয়ার কথা, কি জানে হে জগত্রাতা
অদম অজ্ঞানে, হৃদয়ের এই আনন্দ গান সঁপিলাম চরণে
যেন পায় এ চরণ যাবৎ জীবন, জীবন অবসানে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৪৪)

তোমার প্রশংসা গান গাব মোরা সকলে
তোমার জিন শক্তি দেও সবারে, তোমার নিজ আত্মা দেও ঢেলে।

১। তোমার শ্রীচরণ ছায়ায়, মোরা পেয়েছি আশ্রয়
সুখে-দুঃখে দিনে রাতে তুমি দিয়াছ অভায়
যীশু হে তুমি যাও নাই ভুলে এক জনেও
তোমায় মোরা ভুলেছি বলে।

২। তোমায় ভুলিয়া যখন, ওহে ঈশ্বর নন্দন
মিথ্যা পথে, অসৎ পথে মোরা করেছি ভ্রমণ
যীশু হে, মোরা চলিয়াছি স্বার্থের পথে
দয়াল তোমায় পিছনে ফেলে।

৩। তুমি করে ক্ষামাদান, ‍ওহে যীশু ক্ষমাবান
তোমার অভয় চরণ তলে সবে দিয়াছ হে স্থান।
যীশু হে, তোমার দয়ার কথা হলে স্মরণ
বক্ষভাসে সেই চক্ষের জলে।

৪।  আজ এই আনন্দের দিনে, ভিক্ষা জানাই চরণে
এস তুমি স্বর্গ হতে নেমে, আপন গুণে
যীশু হে, এসে দাঁড়াও একবার সভা মাঝে
এসে দাঁড়াও হৃদয় কমলে।

৫। তোমার প্রশংসা কীর্তন, মোরা করবো সর্বজন
সঁপে দিব ঐ চরণে মোরা দহে আত্মা মন
যীশু হে, মোরা পূজিব ঐ  চরণ তোমার
মোরা লুটাব চরণ তলে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯৪২ খ্রীঃ ঢাকা)


_______________________________________________________________________

(১৪৫)
খাম্বাজ আড়খেমটা

তোমার দুয়ারে দাঁড়ায়ে যেন দিন কেটে যায়
ভিতরে যাই কি না যাই, যীশু দয়াময়।

১। ঘুরেছি কতই দেশে, কি ব্যথায় কি আফশোষে
এসেছি অবশেষে-তোমার দরজায়।

২। দাঁড়ায়ে ঐ দুয়ারে, র’ব মোর জীবন ভ’রে
বারেকের তরে যদি দেখা পাওয়া যায়।

৩। ভক্তেরা যখন আসে, দরশন পাবার পাশে
শুনেছি, হেথায় ব’সে চরণ ধূলা পায়।

৪। আমিও দেখব তখন, তোমার ঐ চন্দ্রবদন
ধ’রব ঐ অভয় চরণ আমার এই মাথায়।

৫। এই আশা রেখে মনে, চেয়ে ঐ দুয়ার পানে
র’ব হে নিশি দিনে তোমার অপেক্ষায়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৪৬)
ভাটিয়ালী-ঠুংরী

তোমার জয় হউক, জয় হউক হে মহারাজ
হউক মহিমা কীর্তণ মহিতলে।
ভবে যত নর-নারী, এসে সারি সারে, লুটাক তোমার ঐ চরণতলে।

১। বসে স্বর্গের সিংহাসনে, চেয়ে আছ জগত পানে
কোথায় কে কাঁদে অবাজন, করে হাত প্রসারণ, কর হে ধারণ তুলে কোলে।

২। মুছাও পাপীর নয়নের জল, কে আছে আর এমন দয়াল
তুমি ধন্য হে গুণধাম, ধন্য ঐ যীশুর নাম, নাই এমন নাম আর ভূমণ্ডলে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৪৭)

তোমার শ্রীপাদপদ্মে এনেছি শিশু সুকুমার
কর কৃপাদৃষ্টি নিজ গুণে যীশু ত্রাণেশ্বর।

১। এই শিশুর মুখ দর্মণ করে জাগিছে সবার অন্তরে
প্রভু তোমার শৈশব কালের স্মৃতি অতি মনোহর।

২। সে শৈশব কাল করে স্মরণ ইহার শিরে কর বর্ষণ
তোমার আশীর্বাদ হে ঈশ্বরনন্দন যীশু দয়াধার।

৩। তোমার আশীর্বাদের গুণে এই শিশুটি দিনে দিনে
যেন হয়ে ওঠে কায়োমনে সর্বাঙ্গ সুন্দর।

৪। সকলের কল্যাণের কারণ করে যেন জীবন যাপন
যেন তোমার সেবায় করে অর্পণ সর্বশক্তি তার।
৫। চির জীবন ঐ চরণে, রেখে তারে নিজগুণে
তুমি মঙ্গল কর তার জীবনে সংকল্প তোমার।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৪৮)

তোমায় ভালবেসে বন্ধু কাঁদে আমার মন-প্রাণ
ওগো পরাণ বন্ধু আমার সহে না বেদন
তুমি ক্যান বা এসে পেতে দিলে হৃদয়ে ব্যথার আসন।

১। বসেছিলাম একা জীবনে, কেন এসেছিলে স্বপ্নের মত হৃদি কাননে
বসে মন-বীতানের কুঞ্জবনে মন-প্রাণ করলে হরণ।

২। সুখের স্বপন গেল ভাঙ্গিয়া, জ্বলে বুকের মাঝে
দুঃখের আগুন ফাগুন জাগিয়া

৩। বাদ্‌লা রাতের মেঘলা আকাশে ও সে কাজলা মেঘের ফাঁকে
 বসে বিজলী হাসেেআবার লুকাইয়া
কোন্‌ বা দেশে হানিয়া বুকে বেদন।

৪। ভালবাসা এমনি তোমার, আমার শুষ্ক হৃদয়-মরু মাঝে শুধু হা হা কার
কত যুগ-যুগান্তর হইল পার, পাবো তোমার দরশন।

৫। (প্রসাদ বলে) হে প্রাণ সখা, যদি ভালবেসে থাক মোরে এসে দাও দেখা
নিবাও বুকের মাঝে দুঃখের শিখা দিয়া বুকের পরশন।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৪৯)

তোমার ঐ রুধিরে ধুয়েছ আমারে, নিজ করে কত দয়া করে।

১। পাপে কলঙ্কিত, কলুষিত চিত, করেছ ধৌত, পবিত্র, পুত
তোমার ঐ কোমল দেহ নিঃসৃত রক্তধারে স্নেহভরে।

২। পাপ বিভুক্ত মম এ জীবন, পাদপদ্মে তব করি সমর্পণ
করহে গ্রহণ ঈশ্বরনন্দন, একেবারে চিরতরে।

৩। এ দেহ আত্মা তোমারি সেবায়, কর ব্যবহার যীশু দয়াময়
রাখ সতত ঐ যুগল পায়ে, বন্দী করে অধমেরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৫০)

তোমার আরাধনা করি মোরা মনের উল্লাসে
তুমি পরম ধন্য পরিত্রাতা বিপুল এ বিশ্বে।

১। মোরা অভাজন তোমাকে স্মরণ
ধরে ঐ শ্রীচরণ করি অর্চণ আনন্দে ভেসে।

২। দিয়া নিজ রক্ত করে প্রায়শ্চিত্ত
মুক্ত করিয়াছ, ছিলাম যখন শয়তানের গ্রাসে।

৩। অসহায় জেনে রেখে চরণে
তুমি করিয়াছ তত্ত্বাবধান প্রতি নিমিষে।

৪। দিয়াছ ক্ষমা শান্তি অসীমা
তুমি পূর্ণ করিয়াছ হৃদয় আশা-আশ্বাসে।

৫। দেহ প্রাণ মন মোরা সর্বজনে
করি ঐ চরণে অর্পণ তোমার সেবায় উদ্দেশ্যে।

৬। আপন গুণে দাস-দাসীগণে
সদা রেখ তোমার উদার পাদ-প।লব পাশে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৫১)

দয়া করে অধীনেরে দিলে দেখা দয়াময়
তুমি ধন্য, ধন্য দয়াল যীশু, শত মুখে গা’ব তোমার জয়।

১। তোমার শ্রীচরণ তলে, শত নক্ষত্র জ্বলে
শত চন্দ্র জ্বলে তোমার ঐ শ্রীমুখ মণ্ডলে
তোমার চক্ষে ব’য় করুণার ধারা দয়াল
সুর ধ্বনির ধারা যেমন বয়।

২। শাস্ত্রে শুনেছি উক্তি, করতে পাতকী মুক্তি
জন্মেছিলে গোশালাতে, ধ’রে শিমুর মূর্তি
আমার পাপের মলিন হৃদয় মাঝে দয়াল
তেমনি এসে হয়ে’ছ উদয়।

৩। তোমায় দিতে উপহার, দয়াল কিছু নাই আমার
ভক্তি বিশ্বাস, পূণ্য সম্বল শূণ্য কাঙ্গাল দুরাচার
ব’সে ভাসিতেছি নয়ন জলে আমি সর্ব শূণ্য অধম দুরাশয়।

৪। আমার দেহ জীবন মন, তোমায় করি সমর্পণ
এই আত্মা উৎসর্গ করি পায়, হে ঈশ্বর নন্দন
তুমি গ্রহণ কর পাপীর এই দান, দয়াল পবিত্র ক’রে চরণ-ধূলায়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৫২)

দয়াল জগৎ পিতা, করি নিবেদন
একবার নিজ গুণে কর শ্রবণ
তোমার কৃপা কর হে বর্ষণ
যেন বাংলাদেশী যত প্রাণী
পায় তোমার ঐ শ্রীচরণ
মুক্তিধন আজ কর বিতরণ
যেন তোমার শান্তি পেয়ে সকলে
করে ঐ চরণ ভজন।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৫৩)

দয়াল যীশু গো পার কর আমায় এই ভবের সাগরে
দয়া কর মোরে পাই যেন নাথ তোমার দরশন।

১। ভাসিতেছি আমি অকুল সাগরে ওগো রক্ষা কর
মোরে আসিয়া অন্তরেেআমার কর্মফল, নাহি তার বল, তোমার বলে কর
আমায় বলিয়াান।

২। তোমা বিনে এই ভবের তুফানে ওগো কে রক্ষা
করবে অধম সন্তানেেএই পাপের তুফানে ভাসিয়ে ভাসিয়ে আজি মরে যে গেলাম
তুমি দয়া কর মোরে, এসহে অন্তরে, প্রাণ দিয়াছ হে তারণ।
-রজনীকান্ত রায়


_______________________________________________________________________


(১৫৪)

দয়াল, অধমে রাখিও চরণে
আমার পূণ্য সম্বল নাই, আমি কার কাছে দাঁড়াই
বসে ভাবি তাই নিশি দিনে।

১। ছিল মরিয়ম ধনি ও সে ভক্তি বিশ্বাস, অনুরাগে
পূজে চরণ দু’খানি।
বসে শ্রীচরণ তুলে ধূয়ে নয়নের জলে, করে চরণ সেবা যতনে।

২। আরো কত পাপীজন, পেল তোমার অপার কৃপাগুণে অনন্ত জীবন
তুমি থেকে ক্রুশো’পর, চোরে করিলে উদ্ধার
আছে বিদিত এ ভূবনে।

৩। আমার নাই কোনও সম্বল, আমি বিশ্বাস, ভক্তি, ধর্মবিহীন
পাপী অতীব দুর্বল।
করি তোমার ভরসা, কেবল ঐ চরণ আশা, তুমি ত্যাজনা এ অজ্ঞানে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________


(১৫৫)

দয়াল যীশু গো, ঐ যে তোমার রাজ্যে শান্তিধারা বয়
শুনি স্বর্গ-দূতে দিনে রাতে, তোমার মধুর নামের কীর্তণ গায়।

১। বেয়ে প্রেম তরণী, স্বর্গদূত বাহিনী চারিদিকে যায়
তাঁরা ঘুঁচায় ক্ষুধা, শান্তি সুধা
যত দীন-দুঃখীরে বিলায়।

২। আমাখ আলো করে, ধীরে ধীরে নামে এ ধরায়
তোমার প্রেমাশীর্বাদ শুভ সংবাদ যেন
ঢেউয়ের মত বয়ে যায়।

৩। আছে সুবর্ণে গঠিত কাঞ্চনে নির্মিত
পুরী তেজোঃময়
ও তার উজ্জ্বল আলোক, মাতায়ে ভূলোক
(ভবে) তোমার মহিমা জানায়।

৪। উঠে প্রেম লহরী অতীব মাধুরী সেই রাজসভায়
সবে দুই বাহু তুলে জয় যীশু বলে,
প্রণমে তোমার যুগল পায়।

৫। যাব আনন্দ নগরে, সে সুন্দর বন্দরে প্রাণে ইচ্ছা হয়
তুমি গ্রহণ কর ঈশ্বর নন্দন
(আজি) ক্ষমা কর নিজ কৃপায়।

৬। যাব আনন্দ নগরে, সে সুন্দর বন্দরে প্রাণে ইচ্ছা হয়
রেখ যুগল পায়
যেন শুভ দিনে কন্ধ্যাকালে দীনহীন কাঙ্গালে
রেখ যুগল পায়
যেন শুভ দিনে রূপ চরণে দয়াল
তোমার শুধু দিনে ঐ রূপ চরণে দয়াল তোমার
রাজ্যে স্থান পায়।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(১৫৬)

দয়াল তুমি লুকায়ে রয়েছ সোনার মন্দিরে
আমি দিবানিশি, কেঁদে মরি, থাকি মায়া-সংসারে।

১। বড় সাধ ছিল গো মনে, পাব তোমায় নিশি দিনে গো
আমি পাই কিনা পাই এ জীবনে, দিও দেখা নিদানে।

২। খুলে দিয়ে সোনার দুয়ার, দাঁড়াও দূরে, হে ত্রাণেশ্বর গো
তুমি ঘুঁচাও জ্বালা, অন্তরের ভার, ডাকি তোমায় কাতরে।

৩। আশা করি ধরব গো বলে, ধরা দেওনা কোন ছলে গো
যদি না দেও ধরা, দাঁড়াও দূরে পূজা লও মোর দুই করে।

৪। আর দিব না তোমায় ব্যথা, লুকাইওনা জগৎত্রাতা গো
জানি নিশ্চয় একদিন হবে দেখা, সেদিন যেও না দূরে।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(১৫৭)

দয়াল যীশু বিনে বন্ধু আমার এ জগতে কে নাই
আমার ব্যথার ব্যথি কে আর আছে, (আমি) কার কাছে গিয়া প্রাণ জুড়াই।

১। আমার জন্ম মৃত্যু এই ভবে, আমার এ দেহ পতন হবে হে
ও সেই নিদান কালে যীশু নাম বিনে আমার পথের সম্বল কেহ নাই।

২। দারা-সূত-বন্ধু আদি, আপন আপন বলি কাঁদি হে
কাঁদবে তারা নিরবধি আমায় রাখিবার আর সাধ্য নাই।

৩। আমি বসব যখন যীশুর বামে, ত্রাণনাথের রব শুনিব দুই কর্ণে হে
আমায় নিয়ে যাবেন স্বর্গধামে , দয়াল ঐ চরণে দিবেন ঠাঁই।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(১৫৮)

দয়াময় আমায় নিয়ে যাও তোমার দেশের মাঝেতে
আমি বহু দিবস অবরুদ্ধ বন্ধ মোহ মায়া বাজারে।

১। আমি হারায়ে স্বদেশ এসে এই পোড়া বিদেশ আমার অস্থি
চর্ম শুষ্ক হলে পেয়ে বহু ক্লেশ
এখন তোমার দেশের পেয়ে উদ্দেশ্য বীরাবেশ সদা এমন সাজরে।

২। ছিড়ে মায়া শক্তির ডোর বিষয় বাসনারই ঘোর
আমি তোমার দেশে যেতাম উড়ে থাকলে পাখা মোর
তবু আমায় ফেলে অবহেলে করছ পার হাজার হাজার।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৫৯)

দয়াল যীশুগো আমি তোমায় কিছু
দিতে গো পারলাম না
আমি পারতাম যদি তোমায় কিছু দিতে
আমার কোন অভাব থাকত না।

১। তুমি আমায় মন দিয়াছ দয়াল করতে ভজনা
আমি পরের যায়গায় বসত করি দয়াল
তবু তোমায় চিনলাম না। (ঐ)

২। হস্ত দু’খান দিয়েছিলে দয়াল করতে অর্চণা
আমার হস্ত দু’খান মলিন হইল দয়াল
তোমার সেবায় লাগল না। (ঐ)

৩। চরণ দু’খান দিয়েছিলে দয়াল করতে সাধনা
আমার সোনার অঙ্গ মলিন হইল দয়াল
তবু তোমার পূজা হইল না। (ঐ)
-লাল চাঁন বালা (২০০৫ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________


(১৬০)

দিয়ে মান্দার মুকুট তব শিরে
মোরা সাজাব সুসাজে রাজ-রাজেশ্বর হে তোমারে
লুটাবে চরণ তলে জগদ্বাসী নারী নরে।

১। বিজেতা প্রণত হয়ে পূঁজিব পদ রাজীব
রতন, মুকতা, মণি দিয়ে অর্ঘ্য নব নব
যীশু নামে জয়ধ্বনি, করিবে সকল প্রাণী
শান্তিপূর্ণ এ ধরনী হবে তব কৃপা বরে।

২। বন্দী মুক্ত হয়ে গাবে বন্দনা গীতি
তব পূণ্যালোকে হবে আলোকিত বসুমতি
অদ্বিতীয়, একমাত্র তুমি রাজা একছত্র
অনন্ত তব রাজস্ব লোকে লোকে লোকান্তরে।

৩। এস তুমি প্রভু যীশু তব দাস-দাসীগণে
তব আগমন আশে চেয়ে আছে পথ পানে
দীর্ঘ দিবা দীর্ঘ রাতি, আকুল অনন্য মতি
এস তুমি ত্বরাগতি, এস তুমি কৃপা করে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৬১)
আসোয়ারী কাওয়ালী

দিয়ে তব রক্ত, কর মোরে ধৌত, যে রক্ত স্রোত বয় কালভেরী শিখরে
পাপ দেহ মোর এ চিত্ত অন্তর নিজ হস্তে কর ধৌত ঐ রুধিরে।

১। যত অপরাধ করেছি জীবনে যত দোষে দোষী আছি ঐ চরণে
যত অবাধ্যতা বিদ্রোহ গোপনে করেছি পোষণ অন্তরে অন্তরে।

২। পাপে কলঙ্কিত আমার এ জীবনে অপবিত্র দেহ কলুষিত মন
তব রক্তে প্রভু কর প্রক্ষালন চরণে বিনতি করি করজোড়ে।

৩। যুগে যুগে এসে পাপী তাপী যত তব ক্রুশতলে হয়েছে পতিত
তোমার ঐ শোণিতে করে তুমি সিক্ত, ধৌত, পাপ মুক্ত করেছে সবারে।

৪। দিও না ফিরায়ে আমারে অমনি, কর ধৌত মম যত পাপ-গ্লানি
ধর প্রভু মোরে ধর হে এখনি, ডুবাও আমারে ঐ রক্ত সাগরে।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

 (১৬২)

দূর করে দেও মনের জঞ্জাল ভাইরে রেখনা আড়ালে
ধুয়ে হৃদয়খানি দিন রজনী তারে জয় যীশু জয় বলে।

১। হিংসা নিন্দা কপটতা, দেহের গুমান কুটিলতা
ভাইরে অহংকার দেও ফেলে
হবে নূতন জন্ম পরম ধর্ম পাবে চিত্ত শুদ্ধ হলে।

২। সুনির্মল দর্পণের মত হৃদিপদ্ম করে ধৌত
যদি রাখ প্রেম-জলে
তবে দিবে দেখা পাপীর সখা তোমার হৃদয়-কমলে।

৩। মন-মন্দিরকে সাজায়ে ভক্তি বিশ্বাস তৈল পুরিয়ে
রাখ আত্মায় বাতি জ্বেলে
আসবে বিবাহের বর সেই রাজকুমার তোমার বিচ্ছেদ যাবে ভুলে।

৪। যাবে যদি পুরীর ভিতর চেনে থাক নিরন্তর
ঘুমে পরো নাকো ঢুলে
অধম রূবেন বলে ভাই সকলে চল এক সঙ্গে যাই চলে।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(১৬৩)

দায়ূদ নগরে হের যীশু অবতার
দিকে দিকে গাহে ধরা আগমনী তার
দূতেরা গাহে রে
মধুর স্বরে আকাশ ভরে দূতেরা গাহে রে
সোনার বীণা লয়ে করে দূতেরা গাহে রে
স্বর্গের আনন্দ দ্বারে আনন্দ নগরে।

আকাশে বাতাসে একি পুলকিত গান
না মানে বাধা বাঁধন উচ্ছলিত প্রাণ
জগৎ হে হাসিল
ত্রাণ সূর্যে পেয়ে কোলে জগৎ যে হাসিল
বনে বনে আকুলকরা পিককূলে গাহিল
একি আনন্দ আজ আনন্দ রে
জগৎ মাতল যে আজ পূলক ভরে।

আজি যীশু এলেন স্বর্গ ছেড়ে মোদের পাপের তরে রে
আয় তোরা আয়
সেই বৈৎলেহমে গোয়াল ঘরে আয় তোরা আয়
যদি দেখবি তারে নয়ন ভরে আয় তোরা আয়
তোরা আয় আয় আয়
আয় তোরা আয়।
-নলিনী বৈরাগী (শ্রীরামপুর ডিসেম্বর, ১৯৫৩)


_______________________________________________________________________

(১৬৪)
কীর্তন

দায়ুদ নগর ঐ যে দেখা যায়
মোরা এসেছি নিকটে তাঁর, বেশী দূর নাহি আর
যাবি যদি চলে আয়।

১। দূতের মুখে পেলাম সংবাদ, এবার
পূর্ণ হবে অন্তরের সাধ গো ভাইরে
হলেন জগৎ পিতা অনুকূল, ভব জলে পাবি কূল
পাতকী কূল নিরুপায়।

২। মেষপাল নিয়ে ছিলাম জেগে
মোরা অন্ধকারময় নিশিযোগে গো, ভাইরে
ঘটল কি ঘটনা আকস্মাৎ করে দেখি দৃষ্টিপাত
আলোকে সব আলোকময়।

৩। স্বর্গের পুরুষ বিদ্যুৎ বরণ, কিবা অনিন্দ্যরূপ
চন্দ্র বদন গো ভাইরে
হয়ে ভয়ে প্রায় অচেতন, শুনেছিলাম তাঁর বচন
শুনিলে তা প্রাণ জুড়ায়।

৪। “ভয় নাই, ভয় নাই, শোন কথা
ভবে জন্মেছেন আজ জগৎ ত্রাতা গো, ভাইরে
করে যীশু মশীহ নাম ধারণ, তরাবেন পাপী জন
রবে না আর শমন ভয়।

৫। শুনতে পেলাম বীণার ধ্বনি, তাতে বেজে উঠল
কি রাগীনি গো, ভাইরে
এলেন  শান্তিরাজ এ সংসারে, আনন্দ নগরে
জয় হউক! জয় হউক! পিতার জয়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৬৫)
পিলু জৎ

দায়ূদ নগর বৈৎলেহমে রাখালেরা যায় গো, ঐ দেখ
সঙ্গে কে কে যাবি তোরা, আয় আয় গো

১। গোলকের রাজসভা হতে, দূত এসেছে আঁধার রাতে
যীশুর জন্ম সংবাদ দিতে রাখালেরা সভায় গো।

২। রাখালেরা ছিল বসে, আঁধারে খোঁয়ারের পাশে
হেন কালে হয় আকাশে দূতেরই উদয় গো।

৩। ভয়ে হয়ে দিশেহারা, চেয়ে থাকে রাখালেরা
শুভ সংবাদ শোনে তারা, স্বর্গীয় ভাষায় গো

৪। “স্বর্গের ঈশ্বর স্বর্গ ছেড়ে, জন্ম নিলেন এ সংসারে
বৈৎলেহমে দেখব তাঁরে গেলে গোশালায় গো।

৫। ধন্য হ’লে জগদ্বাসী, পেয়েছে সেই পূর্ণ শশী
ধন্য ধন্য যীশু মশীহ্‌, জয় জয় জয় গো।

৬। আয় তোরা আয় যাবি যদি, দেখবি যদি গুণনিধি
জগতে আনন্দ নদী, উজান বয়ে ধায় গো।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৬৬)
বেহাগ-মিশ্র

দেখা হবে যে আবার
(আজ) বিদায়ের ক্ষণে, শুধু জাগে মনে
সে কথাটি বারে বার।
দু’দিনের তরে এসেছিনু হেথা, দুদিনের মেলামেশা
রহিবে অটুট এই সুখ স্মৃতি, জাগাবে নূতন আশা।

এক ব্রতে ব্রতী এক আহ্বান
মুছেগেছে সব বাধা ব্যবধান
সবার হৃদয়ে এক প্রেমে বাঁধা, বুঝিছি এমনে সার
দেখা হবে যে আবার।

জীবন নদীর এপারেতে যদি দেখা নাহি হয় আবার
নাহি দুঃখ তায়, জানি যে মিলিবে মৃত্যু নদীর পার
অনন্ত মিলনে মিলি এক প্রাণে
সে আনন্দ ধামে জয় জয় গানে
শ্রী  যীশুর চরণ ঘেরিয়া দাঁড়াবে অযুতভক্ত তাঁর
দেখা হবে যে আবার।
-নির্মলানন্দ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৬৭)
ভাঁয়রো ঢিমে তেতালা

ধন্য ধন্য তুমি, যীশু হে জগৎ স্বামী
প্রণমি চরণে নিশি অবসানে হে।
চির জাগ্রত প্রহরী! ব্যাপিয়া বিভাবরী
রক্ষিলে কৃপা করি, কাঙ্গালে এ অধীনে হে।

নিজ গুণে তুমি দিয়েছ দেখিতে
এ নব শুভ দিন, এ শুভ প্রভাতে
জাগে জয় ধ্বনি পুলকিত চিতে
অপার, অসীম তব করুণা স্মরণে হে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৬৮)
মিশ্র গারা কাওয়ালী

ধন্য পরমারাধ্য যীশু, সত্য সনাতন
ঈশ্বর নন্দন পতিত পাবন।

১। সৃষ্টির পূর্বে ছিলে অনাদিকালে
বাক্য ব্রহ্মরূপে পিতার কোলে।
তুমি স্বয়ং ঈশ্বর, তুমি নিত্য পরাৎপর
তুমি নিখিল এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃজন কারণ।

২। পতিত মানবে করিতে উদ্ধার
মানরূপে হলে ভবে অবতার
প্রভু, তোমার কৃপায়, যত পাপী মুক্তি পায়
করলে পাপীর পাপের তরে প্রায়শ্চিত্ত সাধন।

৩। দীন-হীনের দুঃখ সয়েছে প্রাণে
দরিদ্র হয়ে তুমি ছিলে ভূবনে
দুঃখী কাঙ্গাল যত প্রভু, তোমার আশ্রিত
যত দীনাত্মা জনে পায় তোমার চরণ।

৪। পাপীর পাপের দণ্ড নিয়েছ শিরে
দিয়েছ নিজ প্রাণ ক্রুশোপরে
নিলাম শরণ তোমার, ওহে যীশু ত্রাণেশ্বর
তুমি সত্য সুপথ, তুমি অনন্ত জীবন।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৬৯)
ইমন-তেঁওরা

ধন্য ইশ্বরসুত যীশু তুমি, পতিত পাবন মুক্তিদাতা
গাব দেশে দেশে যশোগীতি, তোমার ঐ প্রেমের বারতা।
সুখ স্বর্গধাম ত্যাজি অবহেলে, জন্ম নিয়েছ এ ভূমণ্ডলে
নরত্রাণ লাগি ক্রুশে প্রাণ দিলে, পাপী তরে একি মমতা।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৭০)

ধুয়ে নয়নের জলে ওহে দয়াল যীশু, তোমার জরণ দু’খানি
আমি রাখব সদা হৃদমন্দিরে, পূজব দিবা রজনী।

১। ঐ চরণের সুশীতল ছায়ায়, আমার তাপিত এ অঙ্গ জুড়ায়
জুড়ায় আমার তাপিত পরাণী।
বসে ঐ চরণে পড়ে মনে স্বর্গের সুখের কাহিনী।

২। বসে আছি সেই দিনের আশায়, দয়াল যে দিন তুমি
ডাকবে আমায় ওপার হতে আসবে তরণী
ছেড়ে অসার সংসার যাব ওপার, যথায় তোমার রাজধানী।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৭১)
কাওয়ালী

ধ্যান ও প্রার্থনাতে সদা জেগে থাক
তুমি কিরূপে চলিছ তাহা ভাল করে দেখ।

১। পথ প্রশস্ত অতি, সকলের তাহাতে গতি চাহিয়া দেখ
(তোমার) পরিণাম বিনাশ তাহা ভাল করে দেখ।

২। হৃদয় কপাট খুলে দেখিতে চাহনা ভুলে ঢাকিয়া রাখ
যখন পাপাগুনে উঠবে জ্বলে ফেটে যাবে বুক।

৩। যিহূদার ধর্ম সাজে, যীশুর পবিত্র মেঝে বসিয়া থাক
তুমি শুক্লীকৃত কবর তুল্য বাহিরে দেখ।

৪। মৌখিক শাস্ত্র আলোচনা, লোক দেখান প্রার্থনা করিয়া থাক
দু’দিন পরে জানা যাবে চাপা রবে নাকো।

৫। কপটতা পরিহর সরল কর অন্তর খেদান্বিত থাক
তোমার ভগ্নচূর্ণ অন্তর হলে উজ্জ্বল হবে মুখ।
-ছেপৎ মন্ডল


_______________________________________________________________________

(১৭২)

নগরবাসীগণ, শোন ঐ সোনার বীণঅ বাজে আকাশে
স্বর্গের দূতেরা গায় আনন্দ গান, হয়ে মত্ত মনের উল্লাসে।

১। যত ব্যথিতের ব্যথা, পাপীর পাপের বোঝা হরণ করিবারে
সেই অধম তারণ ঈশ্বর নন্দন, ভবে উদয় হয়েছেন এসে।

২। মহারাজাধিরাজ স্বর্গের রাজ ঐশ্বর্য ত্যাজি অবহেলে
আজি এলেন নেমে, বৈৎলেহমে, ক্ষুদ্র মানুষের শিশুর বেশে।

৩। ঐ যে সারি সারি কত নর নারী, বৈৎলেহমের পানে
সবে যাচ্ছে চলে সেই গোশালে, তাঁর সেই শ্রীমুখ দর্শনের আশে।

৪। তাঁর দর্শনে যায় সকল দুঃখ জ্বালা, স্পর্শে মুক্তি মেলে
হৃদয়ে রাখলে সেই নাম বৈকুণ্ঠ ধাম, পাপীর অন্তরে নেমে আসে।

৫। তোরা আয় সকলে দেখিতে তাঁহারে, যাব বৈৎলেহমে
মোরা তাঁর শ্রীচরণ করব ভজন, সদা মনের আনন্দে ভেসে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________


 (১৭৩)

নয়ন মেল, নয়ন মেল, একবার দেখ নয়ন মেলে
রাজার দুলাল ডাকে তোমায়, জাগ জাগ বলে গো
একবার নয়ন মেল।

১। বসেছে সে তোমার পাশে রূপে জগৎ করে আলো
ডাকিতেছে বারে বারে, জাগ নয়ন মেলে গো।

২। জাগিল এ নিখিল ধরা, নিশি পোহায় শুভক্ষণে
অচেতনে থেক না আর, আলস্য-শয়নে গো।

৩। শুনে তার সেই মধুর বাণী, কুঞ্জে ডাকে কোকিল পাখী
সুখের নিশি পোহায়ে যায়, জাগ মেল আঁখি গো।

৪। এনেছে সে সোনার মুকুট, আরও পারিজাতের মালা
পূণ্য বসন দিবে তোমায়, জাগরে এই বেলা গো।

৫। পরশে তার মরা বাঁচে, কুসুম ফোটে শুকনা ডালে
দয়াতে তার পাষাণ প্রাণে প্রেমের তুফান খেলে গো।

৬। সোনার পুরী ছেড়ে সে জন, সোনার রাজ সিংহাসন ছেড়ে
এসেছে সে তোমার পাশে, তোমার প্রেমের তরে গো।

৭। যার প্রেমে এই জগৎ পাগল, সে জন পাগল তোমার তরে
বরণ করে লও আজ তারে, হৃদয় মন্দিরে গো।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________


(১৭৪)

না ঘুঁচিলে মনের ময়লা
ও সেই সত্য পথে যায় না চলা।

১। মন পরিষ্কার কর আগে
অন্তর বাহির হউক খোলা
তবে যত্ন হলে রত্ন পাবে
এড়াবে সংসারের জ্বালা।

২। স্নানাদি বস্ত্র পরিষ্কার
অঙ্গে ছাবা জপমালা
দেখ এ সকলি ভ্রান্তি কেবল
লোক দেখানো ছেলেখেলা।

৩। ভবনদী তরবে, যদি
তার যোগাড় কর এই বেলা
যীশুর অসীম প্রেমে মগ্ন হলে
ঘুঁচে যাবে মনের ময়লা।
-শধুসুদন সরকার  (১৮৭৮ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________


(১৭৫)
মিশ্র খাম্বাজ-কাওয়ালী

নিয়ে মুক্তিধন তুমি এলে দ্বারে, করজোড়ে করি অভ্যর্থন
ধন্য তুমি যুগে যুগে, ধন্য তোমার শুভাগমন।

১। দেখে মুখের প্রসন্নতা, জুড়াল মোর সকল ব্যথা জুড়াল জীবন
সর্বসুন্দর কে আছে আর, ত্রিভূবনে তোমার মতন।

২। রেখে হৃদি শত দলে, পূজিব নয়নের জলে ঐ রাঙ্গা চরণ
যুগে যুগে যে চরণে, পেয়েছে ঠাঁই এ অভাজন।

৩। বাড়ায়ে ঐ দয়ার হস্ত, শিরে মম রাখ নাস্ত, ঈশ্বর নন্দন
দয়া কর, হে দয়াধার, চরণ সেবায় কাটুক জীবন।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (২৫/৪/১৯৪৮ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________


(১৭৬)
সুর-ভাটিয়ালি

নীরব রই কেমনে
দয়ার কথা হলে স্মরণ।

১। ছিলে তুমি অমরপুরে (বন্ধু) পিতার দক্ষিণে
মর্তে এলে দীনবন্ধু আমার কারণে রে।

২। এলে তুমি এই ভূমণ্ডলে (বন্ধু) ফিরি দ্বারে, দ্বারে
শুধাইলে প্রেম বারত, ফির পাপী ফির রে।

৩। না মানিল কে তোমাকে, (বন্ধু) না শুনিল কথা
(তারা) হানিল তোমার পরাণে, বন্ধু দিয়া কত ব্যাথা রে।

৪। কালভেরী শিখরে গিয়ারে, (আমি) দেখ্‌লাম প্রেমের ছবি
শুনিলে তাঁর প্রেম বারতা, তোরাও পাগল হবি রে।

৫। জীবন দিয়া ঋণ শুধিয়া রে, (বন্ধু) পিতার চরণে
ধোয়াইয়া দিল মোদের নিজ রক্ত দানে রে।

৬। ভুলিতে পারি না আমি তাই (বন্ধু) ভুলিব কেমনে
যত দিন রহে এ জীবন যেন কাটে গুণ গানে রে।
-জ্ঞানরঞ্জন সমদ্দার


_______________________________________________________________________

(১৭৭)

পরাইয়া দাও আমার কণ্ঠে তোমার খ্রীষ্ট নামের মালা
তোমার নামের মালা পরে গলে যাবে এ জীবনের জ্বালা।

১। পরশিয়া কোমল করে হৃদয় বীণার সপ্ততার
কর এসে ত্বরা করে তারে তারে মধুর ঝঙ্কার
তোমার মৃদুকার সঞ্চালনে বাঁজাও আগমনির পালা।

২। বীণার সুরে মিশায়ে সুর গুঞ্জরিয়ে অলিকুল
মঞ্জরিয়ে কুঞ্জলতা কইবে যত বনফুল
মধুর বসন্তে গানে গাবে বাসন্তি কোকিলা।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৭৮)

পথ হারাইয়া বিজন বনে কাঁদি একা বসে পরাণ বন্ধু আমার
কত দিনে আমি তোমার হব
বন্ধু আমার হৃদয় তোমায় দিয়া তোমার হৃদয় পাব।

১। আমার হৃদয় ব্যাথায় ভরা, ভরা নদীর প্রায়
উথলিয়া ব্যাথার তুফান দুকূল ভেঙ্গে যায়
আমি কুলহারা অকূল দরিয়ায় তোমার কূল কি পাব।

২। ভাঙ্গা হৃদি শতদলে, ব্যথার কুসুম তুলে
একলা বসে গাঁথি মালা, দুই নয়নের জলে
আমার প্রাণের আশা তোমার গলে
মালাখান পরাব।

৩। যতই আশা হৃদয় মাঝে করিয়া পোষণ
ভালবাসার আশার আশে কাটাই এ জীবন
জ্বলে নিরাশার দারুণ হুতাসন
কি দিয়া নিভাব।

৪। নদী মিশে সাগর সাথে, ফুলে ভ্রমর যেমন
পাগল প্রসাদ বলে মন মিলে হয় নাই হয় নাই মনের মতন
হবে তোমায় আমার শেষের মিলন
যেদিন আমারে হারাব।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________


(১৭৯)
রামকেলী-আড়খেমটা

পরিত্রাণ খ্রীষ্টের মরণে।

১। যীশু নর দেহ ধরি, আইল মর্তপুরী
পাতকীর পাপ-নিবারণে
যীশু সব সুখ ত্যাগী, হইয়া মহাদুঃখী
তারিলেন সকল শত্রুগণে।

২। যীশু পতিত পাবনে, নরক দুস্তরে
প্রেম কৈলে নিজ গুণে;
যীশ শত্রুর কারণে, আপন পরাণে
যন্ত্রণা ভুগিলে সংবিধানে।

৩। যীশু অন্তর কারণ, অনন্ত প্রমাণ
দিতেছ হে জগজ্জনে
যীশু আমি ক্রিয়াহীন, অতি দীনহীন
মুক্ত কর মোরে প্রেমগুণে।

৪। যীশু প্রেম সিন্ধু তুমি, জন্তু কুর্ম আমি
বাস করি তব নীরে;
যীশু মোরে করি দয়া, দেহ পদ ছায়া
শীতল থাকিব সর্বক্ষণে।


_______________________________________________________________________

(১৮০)
ঝিঁঝিট মিশ্র-একতালা

পেলেম জীবন যীশুর করুণায়
আমি মরণে কি আর কি ভয়।

১। আমি যত দিন থাকিব ভবে
আমার জীবনেতে প্রভু যীশুর গৌরব হবে
গেলে পরলোকে, মন সুখে, হেরিব সেই দয়াময়।

২। আমি জানিয়াছি পাপের যাতনা
পাপ কার্যেতে সদা দুঃখ মনে শান্তি থাকে না
আমি পাপকে ছেড়ে খ্রীষ্ট ধরে পেয়েছি নূতন হৃদয়।

-বিন্দুনাথ সরকার (১৮৮৪ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৮১)

ভৈরবী খেম্‌টা

পিতা- তোমার পাদপদ্মে মোরা রাখিলাম এই দান
গ্রহণ কর নিজ গুণে, চরণে দেও স্থান।

১। নিজ গুণে দিয়াছ সব, এ সংসারে বিষয় বিভন
ঘুঁচাইয়াছ সকল অভাব, করুণা নিধান।

২। পাঠাইয়াছ এ জগতে, নিজ পুত্র স্বর্গ হতে
মোদের সবে মুক্তি দিতে, দিতে পরিত্রাণ।

৩। তোমার দয়া করে স্মরণ, ঐ পাদপদ্মে করি অর্পণ
ক্ষুদ্র এই দান এ দেহমন, এ আত্মা এ প্রাণ।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (৯/৭/১৯৪৭ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৮২)

পিছনে তুই রাখলি তারে
যে তোর জীবনে গোঁসাই।

চেয়ে দেখলি না কে সারা জীবন তোরে শ্রীপাদপদ্মে দিল ঠাঁই।

১। পরাণ দিয়ে যে তোরে বাঁচায় সকল দুঃখের বোঝা তুলে
নিল আপনার মাথায়, ঠেকে প্রেমের দায়ে পরাণ দিয়ে
যে তোকে ঘুঁচাল সকল বালাই।

২। দরদী যে, ব্যথী যে ব্যথার, সাথের সাথী কাণ্ডারী যে
অকূল ভব সাগরের পার।
তোর ইহকাল আর পরকালে, ভোলা সে বিনা তোর আর বান্ধব নাই।

৩। সে কোথায়, আর তুই রইলি কোথায়
ভাবলি নারে কোন পাপে তোর আয়ু ফুরাইয়া যায়
বুঝে দেখলি না রে, কিসের তরে রে তোর বাড়া অন্নে পড়ে ছাই।

৪। দিন বন্ধুকে করলি অসম্মান, সবার আগে যার সিংহাসন
তাকে পাছে দিলি স্থান।
লজ্জায় সোনার সংসার হল আঁধার
বুঝি এ পাপে তোর আর নিস্তার নাই।

৫। চেয়ে দেখরে পিছনের পানে, অনাথের নাথ দীনবন্ধু সে আজ
রইল কোন খানেেএকবার যা ফিরে যা, তোর পাপের বোঝা
তোর সেই রাজার পায়ে রাখা চাই।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯১৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৮৩)
প্রভাতী-ভৈরবী

পোহাল রজনী শ্যামল ধরণী, অপূর্ব বরণী, অরুণ রাগে
তিমির বিনাশী আলোক প্রকাশী, দিবাকর আসি দীপ্ত পূর্বভাগে।

১। ত্যাজি সুপ্তিভাব সুসুপ্ত প্রকৃতি করিছে কীর্তন মুধুর প্রভাতে
বাহিয়া মলয়-মৃদুমন্দ গতি-জাগরণের গীত গাহে বিশ্বের আগে।

২। পশু-পাখী যত জীব সমুদয়, প্রভাতী বন্দনা করিছে অর্চনায়
বিশ্ব বিমোহিত সুরের মূর্ছনায়-বীনা বিনিন্দিত নব অনুরাগে।

৩। হইল পুষ্পিত কুসুম লতিকা, মধু লোভে ভুঙ্গ মধু চয়নিকা
চপলা বালিকা গাঁথিছে মালিকা প্রেমিকা পাগেলা বিভোলা বিরাগে।

৪। আর কত মন অচেতন ঘুমে, প্রসাদ কহে জাগে, এ শুভ লগনে
হইবে মিলন প্রাণে প্রিয়তমে করিলে অন্বেষণ প্রভাত যোগে।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৮৪)
চেতনা
ভাটিয়ালী-ঠুংরী

পাপের কারণ কর ক্রন্দন, তুমি আর অচেতন থেক না
(তোমার) হৃদয় মাঝে পাপ পুষে, গোপন করে রেখ না।

১। এমন এক দিন আসেবে, হৃদয় কপাট খুলে যাবে
(তোমার) গুপ্ত বিষয় ব্যক্ত হবে, চাপা কিছু রবেনা।

২। পাপীর সে দিন ভয়ঙ্কর, বলবে গিরি গায়ে
(বলবে) পর্বতগণ চেপে ধর, যাতনা আর সহে না।

৩। বলেন প্রভু দয়া করে, পাপী যে পাপেতে মরে
(তাতে) প্রীত নাহি মোর অন্তরে, পাপীর মরণ চাহি না।

৪। এ সুসময় আর হবে না, কাঁদিলেও আর পাবে না
(তুমি) পেয়ে অনেক চেতনা, তবু পাপ ছাড়িলে না।

৫। ননীবীবাসীর মত, এখন হও খেদান্বিত
(হও) চট পরে ভস্মে শায়িত, বল আর পাপ করব না।

-মধুসূদন সরকার (১৮৯২ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৮৫)

পোড়া জঞ্জাল মোটে পথ ছাড়ে না
যাতনা মোর আর সহে না।

১। অসার ভবের সম্পত যত ভাই-বন্ধু-দারা-সুত
কেবল পথের পরিচিত কেহ সঙ্গে যাবে না
একদিন সকল ফেলে যেতে হবে, পড়ে রবে দেহখানা।

২। ব্যাধি যখন হবে ভারী, দুর্বল দেহ শয্যায় পড়ি
দিন কয়েক থাকতে পারি, সয়ে রোগের যাতনা
বলবে শমনরে তোর পায়ে ধরি, বিনয় করি তাই যাবে না।

৩। অসার ভবে আহা মরি, কায়া প্রাণে বিচ্ছেদ ভারী
যীশু তোমার পায়ে ধরি, মোরে ফেলে যেও না
আছি ভয়েতে ভীত অতি, ভবের সুখে মন মজে না।
-সূর্যকান্ত সরকার


_______________________________________________________________________

(১৮৬)

প্রেম ডোরে বেঁধে তারে কাছে টেনে আন
তাঁরে দেখলে জুড়ায় আঁখি
তাঁরে ডাকলে জুড়ায় প্রাণ

১। ডাক দে, ডাক দে, ডাক দে তাঁরে
যীশু খ্রীষ্ট পাপ হরে
ডাকলে কি সে রইতে পারে
সে যে ভক্তের ভগবান।

২। ডাক দে, ডাক দে, ডাক দে তাঁরে
মন প্রাণ মিশাইয়া সুরে
যেমন শিশু ডাকে মা, মা স্বরে
ডাকলে জুড়ায় মায়ের প্রাণ।

৩। প্রভুর সনে মেশামিশি
ভক্তে কয় ভালবাসি
মম প্রাণ ঐক্য করি
কর যীশুর গুণগান।
-অজ্ঞাত

_______________________________________________________________________

(১৮৭)
সুরঃ প্রেমানন্দে মাতি সবে কর সংকীর্তন

প্রেমানন্দে মাত সবে, কর সঙ্কীর্তন (যীশুর গুণ সংঙ্কীর্তন)
হোশান্না, হোশান্না রবে কর সঙ্কীর্তন।

১। শান্তি রাজ নামে যিনি নিজ রাজ্য লিইবেন তিনি
বল ধন্য যীশু, ধন্য তিনি বল সর্বজন।

২। ‍যিরূশালেম পথে চলে, আগে পিছে দলে দলে
কত লোক তাঁর সঙ্গে চলে, কত পথিক জন।

৩। সাজিয়া রাজার সাজ, গাধার পিঠে চড়ে আজ
সিয়োন কন্যার কাছে চলে বরের মতন।

৪। নিজ বস্ত্র দিল পেতে, খর্জুর পত্র লয়ে হাতে
বলে দীন বেশে হবে তোমার রাজার আগমন।

৫। পিতার গৃহ প্রার্থনার ঘর, (হবে) ধন্যবাদ ও প্রশংসা তাঁর
দস্যুগণের গহ্বর ইহা- করি কি কারণ।
-পাগল নরেন্দ্রনাথ ঘরামী


_______________________________________________________________________

(১৮৮)

প্রভু, যখন হবে আমার অন্তিম কাল
তুমি রেখ তোমার চরণ তলে দীনহীন কাঙ্গালে।

১। যখন নয়ন মুদিবে, কর্ণ বধির হবে, দেহের কল হবে বিকল
আমার সেই দুঃখের কালে, কাঁদিবে সকলে
ফেলিবে চক্ষের জল।

২। যখন মৃত্যু কফ এসে, কণ্ঠদেশে চাপিয়া ধরিবে রব
তোমার অমৃতময় নাম, লইতে দিবে না নাম
দিবেনা দুরান্তকাল।

৩। আমি আগে জানিয়ে যাই, চরণে এই চাই
অন্তিমে ত্যাজনা মোরে
যাইতে অনন্তধাম তোমারই মধুর নাম
পাই যেন পথের সম্বল।
-নিশিকান্ত হালদার


_______________________________________________________________________

(১৮৯)

প্রভু তোমায় মাঝি করে, তরণী ভাসাইলাম দরিয়ায়
তুমি পাড়ের মালিক, সুজন নাবিক বস এসে আমার নায়।

১। কত নায়ের মাঝি হয়ে বেড়াও তুমি তরী বেয়ে
আমার জীর্ণ তরী যত্নে রেখ যদি তোমার মনে লয়।

২। দাড়ি মাঝির কুমন্ত্রনায়, কতবার পড়েছি ঘোলায়
আজি শুভদিনে সুযোগ পেয়ে
সব সঁপিলাম তোমার পায়।
৩। ভবের হাটে লাভের আশে আমি করবনা আর পরকাম
আমার মন যাইতে চায় নিজ দেশে
বসে আছি তোমার আশায়।
-হর্ষনাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৯০)

প্রভুর দরশন আমি কত দিনে পাব-তাঁহারে
তারে হৃদয় মাঝারে রাখিিআমার এ পরাণ জুড়াব।

১। ও যার জুগল চরণ ধরি বুকে
পাশরি বিরহ দুঃখে
মনের সুখে আর কবে মজাব
ধুয়ে চরণ নয়ন জলে মাথার কেশেতে মুছাব।

২। তারে করি চুম্বন শত শত
মন প্রাণ করিয়া তৃপ্ত
এ অতৃপ্ত বাসনা পুরাব
আমার হৃদয়ে সুগন্ধ রস
কবে তাঁর চরণে মাখাব।

৩। ও যার ব্যাথায় জানায় মিলন বাণী
মিলনে দেয় বিচ্ছেদ আনি
প্রাণ সজনী কেমনে বুঝাব
আমার হাসি কান্নার ভিতর দিয়ে
কবে তাঁরে পাওয়ার মত পাবো।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৯১)
গীত ১৩৯ঃ২৪-২৪
লুক-একতালা

প্রাণের যীশু বলে যবে ডাকি গো তোমায়
তুমি আড়ালে দাঁড়ায়ে শুনিও
নয়নের জলে হৃদয়ের জল
মিশে কিনা তাহা দেখিও।

১। নাথ, তুমি হে আমার হৃদয়ের ধন
করি তোমায় যবে আত্মসমর্পণ
অর্পনের হেতু যাহা প্রয়োজন
রহে কিনা তাহা দেখিও।

২। তোমার সেবার আয়োজনে যাহা প্রয়োজন
না জানি গুছাতে আমি অভাজন
যেন ভ্রমতমঃ হয় নিবারণ
তাই মন্ত্রী হয়ে সঙ্গে রহিও।

৩। আমার হৃদয়ের আলো করিতে নির্বাণ
জল বন্যারূপে আসে হে শয়তান
তুমি তৈল কুম্ভ সহ আড়ালে থাকিয়া
মৃদু মৃদু ধারে ঢালিও।
-বিন্দুনাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(১৯২)
বাউলের সুর-একতালা

প্রভুতে ভ্রাতা ভগ্নীগণ, (সদা) জেগে থাক প্রার্থনাতে।

১। শয়তান সিংহের মত, গর্জিছে অবিরত
জেগে থাক সতত, নাহি পড় পরীক্ষাতে।

২। শাস্ত্র পাঠ আলোচনা, ধর্ম গীত ও প্রার্থনা
করিতে নাম ঘোষণা, ভুলিও না কোন মতে।

৩। শদ্রক অগ্নি ভিতরে, যোনা মৎসের উদরে
নিত্য প্রার্থনা ক’রে সান্ত্বনা পেল মনেতে।

৪। দায়ূদ সৈন্য মাঝারে, প্রেরিত পৌল কারাগারে
জেগে প্রার্থনা করে দানিয়েল সিংহের খাতে।


_______________________________________________________________________

(১৯৩)
প্রাতঃকালের প্রার্থনা
প্রভাতী-ঠুংরী

প্রাতে দরশন দেও হে ত্রাণ-নাথ
প্রাতে দরশন দেও।

১। কাল নিশি পোহাইল, আকাশে ভানু উদিল
হৃদাকাশে হও আসি উদয় হে ত্রান নাথ।

২। জাগিতেছে জীব সব, করিতেছে নানা রব
এ হৃদে ভক্তি প্রীতি জাগাও হে ত্রাণ-নাথ।

৩। আহা কি মধুর স্বরে, পাখিগণ গান্ করে
এ হৃদে ভক্তি প্রীতি জাগাও হে ত্রাণ-নাথ।

৪। প্রাতের শিশির মত, কর নাথ আশীর্বাদ
বিন্দু বিন্দু অবিরত দেও হে ত্রাণ-নাথ।
-রামচরণ ঘোষ (১৮৯২ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৯৪)

প্রভাত হইল, হইল, হায় মন যীশুর গুণ একবার গাও রে।

১। যাহার গুণে দিবা এল সম্মুখে, সেই পরম নাম লওরে মুখে
যীশু জয় জয় বলে, উঠ প্রাতঃকালে সেই পরম নাম রও বদনভরে।

২। নিশি অন্তি ভানু প্রকাশ পাইল, তাহা দেখে সৃষ্টি চেতন হইল
ওরে অবোধ মন, হওরে চেতন, থাকবে কতক্ষণ আর ঘুমের ঘোরে।

৩। পাখী শাখী পরে চেতন হইল, কোকিল কুহু স্বরে মঙ্গল গাইল
শুন মন বলি, তুমি সেই স্বর তুলি
যীশুর নামে নিশান তুলে দেও রে।

৪। মানব রূপী জ্যোতি উদয় জগতে, তিমির লয়ে হাতে ম’লেন ক্রুশেতে
স্বর্গের মহা আলো ব্যপ্ত ভূমন্ডল, ধরা তেজে পরিপূর্ণ হয় রে।

৫। অধীন দীনহীনের এই মিনতি, আলো দানে কিঞ্চিত দাওহে শকতি
তব আলো লয়ে, চেতন হইয়ে, সদা থাকি শ্রীচরণ ধরে।
-অরুণোদয় ঘোষ


_______________________________________________________________________

(১৯৫)

প্রাণের যীশু জগতত্রাতা আমারে তুমি ত্যাজ না
আমার জনম গেল বৃথা কাজে, এজীবনে সুখ হল না।

১। যত কিছু ভাবি আপনার, আত্ম-বন্ধু-পুত্র-কন্যা সকলই অসবার
তারা সদা প্রাণে দুঃখ হানে, অসময়ে কেউ চাহে না।

২। মিছা মায়ায় আবদ্ধ হয়ে, গেল রে দিন মিছা কাজে মিছায়ে বয়ে
আমার সোনার দেহ অসার হল, আসলেতে ফল হল না।

৩। মনে আমার ছিল বাসনা, সযতনে পূজব চরণ, করব সাধনা
আমার সাধের আশা সব নিরাশা, সাথের সাথী কেউ হল না।

৪। কতদিনে পাব শ্রীচরণ, কতদিনে হিরিব ঐ প্রফুল্ল বদন
তোমার চরণ তলে পড়ে রব, পুরিবে মনের বাসনা।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(১৯৬)

বড় প্রেমানন্দ মনে হে, বড় প্রেমানন্দ মনে
প্রেমানন্দ মনে এখন ধন্যবাদ জানাই চরনে।

১। তুমি করেছ দয়া, রেখছ আশ্রায় দিয়া
দিতেছ চরণ ছায়া কি রাতে কি দিনে
তাহার বস্ত্র যোগাইতেছ, কাঙ্গাল দীনহনে (দয়াময়)
যত আত্ম বন্ধু স্নেহ দয়া-সে সকল তোমার বিধানে।

২। রোগের করেছ তত্ত্ব যোগাইয়া ঔষধ পথ্য
স্বাস্থ্য যখন দুঃখ পড়ে, ধারা বয় নয়নে (দয়াময়)
এসে নিজ হাতে মুছাও চক্ষের জল, সান্ত্বনা দিয়া অজ্ঞানে।

৩। জগতেহর দুঃখ শোকে, আঁধার দেখি দুই চক্ষে
দেখা দিয়া সম্মুখে, লও নিকটে টেনে
এক মুখে ঐ দয়ার কথা, বলিব কেমনে, (দয়াময়)
যদি থাকত শত সহস্র মুখ, হার মানতাম দয়া-বর্ণনে।

৪। পাঠাইলে আপন নন্দন, এই পাপীর মুক্তির কারণ
তিনি প্রায়শ্চিত্ত সাধন করেন জীবন দানে
জীবন মূল্যে কিনিয়াছ, আমার এই জীবনে (দয়াময়)
মনে আশা আছে, অবশেষে স্থান পাব অভয় চরণে।

৫। কাঙ্গালের এই আকিঞ্চন, যত দিন রয় এই জীবন
তোমার নাম গুণ সঙ্কীর্তন করব নিশিদিনে
দেশ বিদেশে, সুখ দুঃখে আর জীবনে মরণে (দয়াময়)
আমি গাব তোমার ধন্যবাদ গান দিন কেটে যাক্‌ গানে গানে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

 (১৯৭)

বড় চমৎকার বন্দরে এসে
তরীখান মোর লেগেছে এবার
তোমার ঐ চরণে হে কাণ্ডারী, বারংবার করি নমস্কার।

১। উজান জলে ঝড়ের হাওয়া, গুরু গুরু ডাকে দেয়া
ছিল আকাশ পাতাল ছাওয়া, কাল মেঘের অন্ধকার
এখন সেই নিশি ভোর পোহাইয়াছে, এসে সেই বন্দরের ভিতর।

২। ছিল না জীবনের আশা, ভয়ঙ্কর সেই কর্মনাশা
নদীর মধ্যে প’ড়ে দিশা, তখন ছিল না আমার
তুমি কি শক্তি দেখালে মাঝি, দীনহীনে করলে উদ্ধার।

৩। আজ সেই বিপদ গেছে কেটে, এসে এই বন্দরের ঘাটে
কাণ্ডারী আমার নিকটে এসে দাঁড়াও হে একবার
আমার ধন ও প্রাণ যা সম্বল আছে, তোমার পায়ে আজ দেই উপহার।

৪। এই বন্দরের ঘাটে থেকে, ডাক দিলে পরম পিতাকে
কেবলমাত্র দুই এক ডাকে, বুঝি পাওয়া যায় উত্তর
বুঝি বেশী দুর নয় সেই রাজপুরী, যেখানে আছে মন্দির তাঁর।

৫। গাইলে গান এই ঘাটে বসে, গানের সুর বাতাসে ভেসে
যায় বুঝি সেই পরম দেশে-স্বর্গের পিতার গোচর
গাব পিতার জয়গান নেচে নেচে প্রাণের বীণায় তুলে ঝঙ্কার।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯২৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(১৯৮)

 বহে উজানে আজ জীবন নদীর জল
একবার “জয় যীশু জয়” বল, সৃষ্টি হয়েছে চঞ্চল
ঐ দেখ নেচে উঠল ধরাতল।

১। স্বর্গের নন্দন উদ্যান
মধুর দক্ষিণা বাতাসে দোলে
মোটে নাইরে বিরাম
ঝরে পড়ে যত ফুল সোনার পারিজাত বকুল
লুটায় তলায় জীবনবৃক্ষের ফল।

২। স্বর্গের রাজপুরীর দ্বার
অমনি মহাশব্দে খুলে গেল
বীণায় উঠিল ঝঙ্কার গেয়ে মধুর রাগিণী রাজা দায়ুদ
আপনিিএল, সঙ্গে স্বর্গের গুণীর দল।

৩। যীশু ত্রাণপতি
এলেন রাজ সিংহাসন হতে, নেমে মৃদু মন্দ গতি
কুসুম দলে দলে ফুটল শ্রীচরণ তলে
কত রক্স জবা শতদল।

৪। ধবল মেঘের রথে
যীশু নেমে এলেন ধরাতলে (কেউ নাই রে সাথে)
দেখে প্রভাতী তারা, হয়ে দিশেহারা
চায় এই জগৎ পানে অচঞ্চল।

৫। ভবের মরা গাঙ্গে
অমনি ডেকে এল জীবন নদীর ধারা বানের তরঙ্গে
যত জীর্ণ তরী, ভাসল সারি সারি
তুলে প্রভু যীশুর নামে পাল।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(১৯৯)

বরষ আশিস-বারি
(আজি) অবিরত ধারে যীশু সবার উপরি।

১। কি উপহার দিব আজি গুণধাম
(এই) এনেছি ভগন চিত, লহ পাপহারি।

২। জ্বাল প্রেম-অগ্নি সকল হৃদয়ে
(সবে) পর-সেবা তরে যেন প্রাণ দিতে পারি।

৩। তব বলে কর সবে বলবান
(মোরা) জীবন-সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারি।

৪। পূর্ণ কর সবে পবিত্র আত্মায়
(যেন) জগতেরে তব প্রেমে মাতাইতে পারি।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২০০)

বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি, প্রভু সমুদয়
তোমার বাক্য সত্য, কার্য্য সত্য, সত্য কিছু মিথ্যা নয়।

১। একদিন পিতরের শাশুড়ী জ্বরে পীড়িত ছিল শয্যায়
তুমি স্পর্শ করলে ব্যাধি সুস্থ হইল প্রভু সেই সময়।

২। এক দিন প্রদর রোগে শিমোনের স্ত্রী গোপনে ছুইল তোমায়
ও তার রক্ত স্রোত বন্ধ হইল সাক্ষ্য দিল প্রভু সেই সময়।

৩। তুমি সকলই করিতে পার, অসাধ্য তো কিছুই নয়
তুমি গালীলের ঝড় থামাইলে, যর্দনের জল উজানে ধায়।

৪। আমরা এই পীড়িতদের জন্য প্রভু প্রার্থনা করি এই সময়
ইহার পাপ অপরাধ ক্ষমা কর প্রভু এই সময়।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২০১)

বিপদে পড়িয়া ডাকি, দেখা দাও এই কাঙ্গাল দীনহীনে হে।

১। প্রলয়ের ঝড় বহে বেগে, আমার মরণের ভয় প্রাণে জাগে হে
বুঝি ডুবে যায়, দয়াময়, তরী এ তুফানে হে।

২। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার, কোন বান্ধব নাই আজ কাছে আমার
এসে নিকটে, সঙ্কটে বাঁচাও অধীনে হে।

৩।  ‍শুনিয়াছি পূর্বকালে, তরী ডুব ডুব সাগর জল হে
কাঁদে শিষ্যদল, অবিরল শঙ্কিত পরাণে হে।

৪। এলে তুমি পর্বত হ’তে, তোমার শিষ্যগণকে বাঁচাইতে হে
অমনি থামল ঝড়, ত্রাণেশ্বর তোমার বচনে হে।

৫। অধমে আজ কর স্মরণ, একবার দয়া ক’রে দেও দরশন হে
করি বিনতি, দুর্গতি ঘুচাও নিজ গুণে হে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২০২)

ব্যথিতেরে, কর শান্তি দান
এসে পাপী তোমার দ্বারে, চাহে জুড়াইতে তাপিত পরাণ।

১। পাপ পীড়ায় জর্জরিত, ভগ্নদেহ, অগ্নচিত
ভব ভয়ে অতিভূত পাপী, দিশেহারা হতজ্ঞান।

২। নয়নের জল মুছাইতে, মনের দুঃখ ঘুঁচাইতে
কে আর আছে এ জগতে, মিছে বন্ধু বান্ধব ধন ও মান।

৩। তুমি বিনে জগত্রাতা, কে বুঝে ব্যথিতের ব্যাথা?
তোমার কোলে রেখে মাথা, কর সকল জ্বালার অবসান।

৪। সকল পাপ আজ কর মোচন, করে তোমার রক্ত সেচন
তোমার দয়ায় পেয়ে জীবন, পাপী গাবে তোমার গুণ গান।

৫। তোমার কীর্তি ভূমণ্ডলে, গাবে ভেসে চক্ষের জলে
রেখে তোমার চরণতলে, বান্ধা দেহ আত্মা মন ও প্রাণ।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(২০৩)

বেলা যায় কি করিলে বসে মনুরায়
না হেরিলি মেলে নয়ন, দিনমণি অস্ত যায়।

১। আসিয়াছি এ প্রবাসে, দিন যদি যায় বৃথা বসে
একদিন যেতে হবে দেশে, করেছ কি তার উপায়।

২। অঙ্গে মেখে রঙ্গের ধূলা, সঙ্গী সঙ্গে করে খেলা
রসরঙ্গে ডুবল বেলা খেলা ফেলে চলে আয়।

৩। বাজিছে সাঁঝের আরতি, গৃহে গৃহে জ্বলল্‌ বাতি
মনরে তোর গৃহের নিভল বাতি রাতি হবে আঁধারময়।

৪। জীবন-সন্ধা আঁধার রাতে, এক্‌লা যে তোর হবে যেতে
আলো হাতে কালো রাতে সাথে কে তোর যাবে হায়।

৫। সাথের সাথী নাই তোর কেহ, মন-প্রাণ তাহারে দেহ
দিলে তোরে বিন্দু স্নেহ গৃহে যাবি তাঁর কৃপায়।

৬। প্রসাদ বলে হে ভোলা মন এলরে তোর শুভলগন
ও তোর সফল হবে মানব জনম পাগলের মহা মেলায়।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(২০৪)

ভক্তিভরে প্রেমাবেশে তারে মন যে ডাকে সে পাবে রে
তোমার হৃদয় কপাট খুলে দিয়ে ডাকলে দেখা পাবে রে।

১। হয়ে যে জন ছদ্মবেশী শুদ্ধ প্রেমের অভিলাষী
তোমার হৃদয় দুয়ারে আসি, বলছে কপাট খুলরে।

২। অন্তরের অন্তর থেকে অন্তরের ভাব নিরখে
কেবল ভগ্নচূর্ণ অন্তর দেখে সে জন বাস করে রে।

৩। ভোগ বিলাসে যার বাসনা যীশুর দেখা সে পাবে না
কেবল সরল অনুতাপী জন সদা ঐ রূপ নিহারে।

৪। এক মনে একচিত্তে বসে ধ্যান করগো দিবানিশি
তোমার চিত্ত শুদ্ধ হলে আসি অমনি দেখা দিবে রে।

৫। যীশুর প্রেমের প্রেমিক জনা শুদ্ধ প্রেমে তার বাসনা
ও সে জগৎ প্রেমে করে ঘৃণা যীশুর প্রেমে মজে রে।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২০৫)

ভব সাগরের কূলে, হে  যীশু তোমার পথ পানে চেয়ে
আমি বসে আছি একা, পারে যাবার আশায়।

১। দেখতে দেখতে ফুরালো বেলা
এদিকে ভেঙ্গে এল ভবের মেলা, সন্ধ্যা এল অন্ধকার হয়ে
মোরে আর কত কাল রাখবে দয়াল, শূণ্য ঘাটে বসায়ে।

২। ওপারে এই সোনার বন্দরে, বাতি জ্বলে শহর আলো করে
চলে যাত্রী তোমার গুণ গেয়ে
মিলে তাদের সাথে গাব ঐ গান আশা আছে হৃদয়ে।

৩। শুনেছি হে তোমার দরবারে, সোনার বীণা লয়ে মধুর সুরে
গান করে দায়ুদ সভা মজায়ে
আমি শুনতে চাই সেই মধুর কীর্তণ, তোমার দরবারে যেয়ে।

৪। তোমার আসন প্রদক্ষিণ করে, আমি নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে
কাটাব কাল তোমার গুণ গেয়ে
তুমি এস প্রভু তাড়াতাড়ি, এস খেয়ার নাও লয়ে।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯১৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২০৬)

ভবের সাগর কূলে, নয়ন জলে ভাসি দিবানিশি
আমায় পার করে নাও যীশু মশীহ ফুরাইল বেলা।

১। সূর্য নেমে গেল পাটে, আঁধার হইল ঘাটে
বসে ভবার্ণবের  তটে, কাঁদি একেলা।

২। পূবের বেলায় হাঁটে েএসে, খোয়াইলাম সব কর্ম দোষে
দেখ্‌লাম এ হাট সর্বনেশে ডাকাতের মেলা
দুঃখ জানাব তোমারে, নিয়ে চল পাড়ে
তুমি এস বেয়ে তোমার সোনার ভেলা।

অন্তরা- হারালেরম আমার পূণ্য সম্বল সব, যা ছিল অন্তরে
সে সব তোমার দেওয়া ধন, হে ঈশ্বর নন্দন
সে ধন নিয়েছে চোরে কেড়ে।

৩। এখন নাইকো পারের কড়ি হে ভবের কাণ্ডারী
তরিব তোমার দয়ার জোরে।
আছি আশাতে বুক বেঁধে পায়ে ধরে কেঁদে
হব পার তোমার নায়ে চড়ে।


_______________________________________________________________________

(২০৭)

(ভাই) আনন্দে যীশু নাম হৃদয় খুলে বল
(যীশু প্রেম হৃদয় খুলে বল)।

১। রাজার রাজা প্রভুর প্রভু স্বর্গে যিনি ছিল
সে এই নরকযোগ্য নরের তরে এ ভবে আইল।

২। দীনবেশে দেশে দেশে ত্রাণধন বিলা’ল
দিল অন্ধকে নয়ন, কত মৃতে বাঁচাইল।

৩। শত্রুর লাঞ্চনা কত যাতনা সহিল
প্রভুর হস্ত বেঁধে, কোড়া মেরে মুখে থুথু দিল।

২। দু’জন চোরের মধ্যে তাঁরে ক্রুশে টাঙ্কাইল
অধম সেনাগণে বর্শা হানে তাঁর কুক্ষিতে মারিল।

৫। আমার পাপের জন্য যে জন প্রাণ দিল
আমি তাঁকে ভাল না বাসিয়া কারে বাসি ভাল।

৬। যাঁর প্রেম জলে মন হৃদয় ভিজিল
এই নিরস বৃক্ষেতে কত সুফল ফলিল।

৭। ওহে খ্রীষ্টভক্ত দল শাস্ত্র লয়ে চল
ও সেই প্রেমময়ের প্রেমের কথা সর্বদেশে বল।
-মধুসূদন সরকার


_______________________________________________________________________

(২০৮)
ইটালিয়ান ঝিঁঝিট কাওয়ালী

ভাঙ্গিবে ভাঙ্গিবে ভাঙ্গিবে এবার
এই শয়তানের দূর্গ ভয়ঙ্কর।
মহা ভূমিকম্প হবে ভবে, ভেঙ্গে যাবে ভেঙ্গে যাবে
পাপ দূর্গ রবে নাকো আর।

১। এই দূর্গে কত শত জন, আবন্ধ মরারি মতন
সতত করিছে ক্রন্দন, তারা আসিবে বাহিরে আবার।

২। মুক্তিধন নিয়া দু’হাতে, যীশু ঐ নীলাকাশ পথে
আসিছেন সোনারি রথে, ঐ যে উড়িছে পতাকা তাঁহার।

৩। জয়ধ্বনি কর সকলে অগ্রসর হও সবলে
ঐ ভেঙ্গে পড়ে ভূতলে, পড়ে শয়তানের দূর্গেরি প্রকার।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২০৯)

মন চল যাই পাগলের মেলায়
যেথা যাদব, প্রসাদ, রাজাই
জ্ঞান দানিয়েল মনোহর ভাই
সদাপ্রভুর গুণ গায়।

১। আরও কত পাগল আছে
যাঁরা প্রভুর পদে মন সপেঁছে গো (ভাইরে)
ভুলিয়াছে সংসার বালাই
দিয়া আত্মবলি প্রভুর পায়
প্রেমানন্দে নাচে গায়
মায়া-মোহের নাহি ভয়।

২। জ্ঞাণী-মুর্খের নাই ভেদাভেদ
আরও লঘু-গুরুর নাইরে প্রভেদ গো
মিলিয়াছে সকলে এক ঠাঁই
এখন করে সবে কোলাকুলি
চরণধূলি শিরে লয়।
-পাগল নরেন্দ্রনাথ ঘরামী


_______________________________________________________________________

(২১০)

মধু যীশু নামে যার মন মজেছে, সে কি ঘরে রইতে চায়
তারে যতই জোরে আঁট বাঁধ সে বাঁধন ত কেঁটে যায়।

১। ছিল এলি মোশি ঐ নাম জবে দিবানিশি
তারা ত্যাজ্য করে স্বর্ণপুরী পর্বত গুহায় পড়ে রয়।

২। ধ্যানে যীশু জ্ঞানে যীশু অন্তরে বাহিরে যীশু
ও যে যীশু পদে মন সঁপেছে তার কি আছে কালের ভয়।

৩। যীশু নামে মাতোয়ারা, নামের মালা হৃদয় ভরা
ও যে মন্ত্র জানে শিকল ছেঁড়া, নামের টানে কেটে যায়।



_______________________________________________________________________

(২১১)
জৌনপুরী-তেওরা

১। মরণ জয়ী হে বীর তোমায়
প্রণাম করি প্রণাম করি
বিশ্ব ভূবন উঠুক জেগে
অমর প্রেমিক তোমায় স্মরি
মরণ আজি তোমার কাছে
জীবন পেয়ে লুটিয়ে আছে
তোমার দু’টি চরণ ধরি।

২। তোমার প্রেমের অভয় বাণী
পাঠিয়ে দিও ধরায় আজি
তাঁহার মধুর পরশ পেয়ে
সবার হৃদয় উঠুক বাজি
পাপ অবিচার হিংসা-দ্বেষ
যাতনা আর দুঃখ ক্লেশ
যায় যেন আজ সকল মরি।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২১২)

মনের আনন্দে আজ ডাকি তোমারে
ওহে যীশু দয়াময়, যারা তোমার দয়া পায়
তারা ধন্য হয় এই সংসারে।

১। আমার নয়নের জল, তুমি কখন এসে মুছে দিলে আমি জানি না দয়াল
এখন যে দিকেতে চাই, সুখের কূল কিনারা নাই
সংসার ভরা সুখের জোয়ারে।

২। আমার জীর্ণ তরী, মাঝে কখন এসে দাঁড়ালে হে তুমি ভবের কাণ্ডারী
এখন নাই আর কোন ভয়, ঐ যে সামনে দেখা যায়
তোমার সোনার পুরী অদূরে।

৩। শুনি চারিদিকে, তোমার মধুর নামের মঙ্গল ধ্বনি কেবল থেকে থেকে
আমি ভরিয়া পরাণ গা’ব যীশু নামে গান
বড় আশা আছে অন্তরে।

৪। করি এই প্রার্থনা তুমি থেক সদা হৃদয় মাঝে দয়াল দূরে যেওনা
আমার নাই সাধন ভজন, দিও নিজ গুণে চরণ
চরণ ছাড়া ক’রোনা মোরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২১৩)

মনে জাগে তোমার প্রেমের বাণী
তোমার বাক্য যায় না ভুলে থাকা
তুমি প্রেম করে জগতেরে
দিলে তোমার নিজ শাখা।

১। প্রেম করে পাপীর তরে এসেছিলে স্বর্গ ছেড়ে
মনের রূপে নরাকারে তুমি দিয়েছিলে দেখা
তুমি দীন বেশে ধারণ করিলে
সাজিলেন ও পাপীর সখা।

২। ত্যাগের জীবন প্রেমের বাণী
ন্যায় আচরণ তাঁর কাহিনী
বিশ্বে উঠল মুক্তির বাণী
এই তো প্রেমের শিখা
তিনি ত্যাগের গুরু প্রেমের যীশু
নামে কত মধু মাখা ।

৩। কিরূপ তাঁর সেই ত্যাগের জীবন
নরযজ্ঞ করলে সাধন
নিজ প্রাণ দিয়ে বিসর্জন পাতকীকূল রাখা
ভবে মৃতেরে ফিরে নাই কেহ
তোমার দয়াল যীশু ফিরলেন একা।

৪। ত্যাগের কর্ম, ন্যায় আচরণ
যার আছে সে ধন্য জীবন
যোগেশ কয় মোর এ পাষাণ মন
নাই কো প্রেমের শিখা
ভবে তোমার তুল্য বান্ধব আর
দক্ষ চিহ্ন আছে আঁকা।
-যোগেশ হালদার


_______________________________________________________________________

(২১৪)
ভাটিয়ালী

মোরা এসেছি আজ তোমার দ্বারে, দয়াময়
তুমি দয়া কর সর্বজনে দয়াল, হৃদয় মাঝে হও উদয়।

১। তোমার চাঁদ বদন দেখে, মোরা মাতিব সুখে
ধন্য হব তোমার চরণ ধূলা সর্বাঙ্গে মেখে (যীশু হে)
মোরা ভাসিব হে প্রেমানন্দে দয়াল
গাব তোমার নামের জয়।

২। পাপের ক্ষমারি কারণ, করব স্পর্শ ঐ চরণ
ধরব হৃদয় শ্রীপাদপদ্ম, তুমি অশান্তি বারণ (যীশু হে)
মোরা জুড়াব হে সকল জ্বালা দয়াল
তোমার ঐ চরণ ছায়ায়।

৩। চির জনমের তরে, মোরা সকলই ছেড়ে
ধরব চরণ মিথ্যা জেনে সব এই অসার সংসারে (যীশু হে)
তোমার আসার আশে বসে আছি দয়াল
নিজ গুণে হও উদয়।

৪। আজ এই নিঃশব্দ রাতে, তোমার নিজ বাক্য মতে
এস তুমি দয়াল যীশু, চড়ে মেঘেরি রথে (যীশু হে)
তুমি নিরবে আছ হৃদ-মন্দিরে দয়াল
 প্রবেশ কর এ সময় ।

৫। ঘুঁচাও সকল অন্ধকার, ওহে ঈশ্বর কুমার
অন্ধকার এই জগত মাঝে, তুমি সকল আলোর সার (যীশু হে)
তুমি ঘুঁচাও মনের পাপের আঁধার দয়াল
চিত্ত কর আলোকময়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২১৫)

মোরা এই শিশুটি রাখি তব পায়ে
তুমি পাঠায়েছ স্বর্গ হতে পিতা-মাতার কোলে তারে
আনন্দে উৎফুল্ল সবে অমূল্য এই নিধি পেয়ে।

১। আলোকিত গৃহে আজি তোমার দানে পূণ্যালোকে
তোমার ঐ শ্রীমুখের আলো খেলিছে এই শিশুর মুখে
প্রার্থনা করি হে মোরা তাকে ঐ চরণে রেখে
স্পর্শ করে দেও আশীর্বাদ দয়ার হস্ত বাড়াইয়া।

২। অনর্থ অমঙ্গল হতে রক্ষা কর চিরজীবন
গঠন কর তারে প্রভু করে তোমার মনের মতন
সুখে-দুঃখে সর্বকালে যেন তোমার ইচ্ছা পালন
করে যেন কাটায় জীবন তোমার প্রশংসা গান গেয়ে।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২১৬)

মোরা সেবক সেবিকা পেয়ে যীশুর দেখা যীশুর নামে পাগল তাই
মোরা পেয়েছি পরিত্রাণ, যীশুর রক্তে করি স্নান আনন্দের আর সীমা নাই।

১। মোরা সিয়নপুরীর যাত্রী, চলি দিবা রাত্রি, যীশু আছেন সঙ্গে তাই
লহরী তুলিয়া জয় যীশু গাহিয়া সিয়নপুরী চলে যাই।

২। বিপক্ষ দিয়াবল, হুঙ্কারে অবিরল শমন ভয়ে নাহি ডরাই
নাশিতে শয়তানে, শাণিত কৃপাণে, যীশুর শক্তি আমরা পাই।

৩। দিব ভব নদী পাড়ি যীশু নামে চড়ি নামের সারি মুখে গাই
ডরিনা শমনে, বানে কি তুফানে, যীশুর নামের বৈঠা বাই।

৪। থাকিব সেখানে, যীশু আছেন যেখানে প্রেমানন্দে সবে ভাই
আছে ললাটে আঁকা যীশু নাম লেখা যীশু বিনে গতি নাই।

-পাগল নরেন্দ্রনাথ ঘরামী


_______________________________________________________________________

(২১৭)

মানিক জ্বলে কার কাছে মানিক জ্বলে
জ্বলে গো আমার যীশুর মানিক জ্বলে ভক্তির হৃদ মাঝারে।

১। মানিক যখন হয় গো উদয়
বোধ হয় যেন বিজলীর প্রায়
নহবেতে সব দেখা যায়
কিন্তু চক্ষু যার আছে।

২। আমি হে ভবের বণিক
যীশু তুমি স্বর্গ-মর্তের মানিক
এবার কর মোরে আত্মায় ধনী
যেন দারিদ্র ঘোঁচে।

৩। সাত রাজার ধন একটি মানিক
যীশু সেই মানিকের খনি
হইয়াছে যে কেমন ধনী
যেজন যীশুকে পাইয়াছে।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২১৮)

মধুমাখা যীশু নাম গাওরে
গাও ঘরে ঘরে নগরে নগরে।

১। এ ভবরে আশা ‍যিনি, স্বর্গের আনন্দ ভূমি
যে নামে সকল দুঃখ হরে।

২। যে নামের মাহত্ম গুণে, শান্তি পায় ভক্তগণে
দুঃখী জনে সুখী হয় অন্তরে।

৩। আইলে আসন্নকাল, যীশু নামই মহাবল
যে নামে মৃত্যু নদী পার করে।
-গগনচন্দ্র দত্ত (১৮৯৬ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২১৯)
কীর্তন গান

মহানন্দে এ বঙ্গে আজ বড়দিন ফিরে এল (ভাইরে)
মগ্ন সবে প্রেমোৎসবে (২) বড়দিন ফিরে এল (ভাইরে)।

১। প্রিয় ত্রাতার জন্মদিনে, ভক্তকূল আনন্দ মনে
যীশুর গুণসংর্কীনে (২) বড়দিন ফিরে এল।

২। মাস ও ঋতু আদিকালে, বৃক্ষলতা পক্ষিকূলে
উচ্চ স্বরে সবে বলে (২) বড় দিন ফিরে এল।
সংগ্রহেঃ সত্যেন্দ্রনাথ ঢালী


_______________________________________________________________________

(২২০)

যদি ভব পরে যাবি রে, চলে আয়, সোনার ঘাটে।

১। ঐ দেখ বেলা গেল সন্ধ্যা এল সূর্য্য বসে পাটে
মিছে আর কত কাল রবি বসে, আঁধার ভবের হাঁটে।

২। জগৎ আঁধার করে ধীরে ধীরে, ডুবল সোনার রবি
ভবের সাগর কূলে দেখা যায় সেই সোনার তরীর ছবি।

৩। তরীর মাস্তুল পরে বায়ু ভরে উড়ে যায় পতাকা
আছে পতাকার পর, সর্বসুন্দর দয়াল নামটি লেখা।

৪। বসে মাঝি নৌকায়, সেই দয়াময়, ডাকে বারে বারে
তোরা তরবি যদি ভব নদী, আয়রে ত্বরা করে।

৫। শুনে তার সেই আহ্বান হয় আগুয়ান কত নর-নারী
তারা সকল ফেলে, দলে দলে চলে সারি সারি।

৬। আমি ভবে পরাণ রেখেছি গান গাব ওপার গিয়া
যদি দয়া করি সেই কাণ্ডারী অধমে যায় নিয়া।

৭। চল সেই সোনার তরী পূর্ণ করি গিয়া দলে দলে
মোরা যীশুর নামে বাদাম তুলে ওপার যাব চলে।

৮। মোদের ভয় কি আছে সাগর মাঝে, তুফানে কি ঝড়ে
তরী যাবে চলে, হেলে দুলে যীশু নামের জোরে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২২১)

যদি আঁধার রাতে পথ হারায়ে যাই সখীয়ারে
তোমায় যেন সাথের সাথী পাই
এই সংসার বনে তুমি বিনে বান্ধব কারে পাই।

১। একলা এসে সংসার পথে, পথের না পাই ঠিক
পথ হারায়ে ঘুরে বেড়াই কেবল চারিদিক
সাজলেম পথহারা, পথের পথিক কোন বা পথে যাই।

২। অমানিশার গভীর আঁধার পথ, গিয়াছি ভুলে
ফাঁক পেয়ে সব সাথের সাথী আমায় গেছে ফেলে
এখন কার বা সাথে যাব বলে বান্ধব কারে পাই।

৩। সঙ্গীহারা বনের পথে চলতে করে ভয়
ছয় দিকে ছয় হিংস্র পশু গর্জিয়া বেড়ায়
আরও চোর-ডাকাতে সব লুটে নেয় জীবনে হারাই।

৪। ছিলেম একা হলেম একা, ফাঁকিবাজির খেলা
কেবল দিন চারি ভোরে বাজি, মায়ামোহের মেলা
অধীন প্রসাদের এই জীবন লীলা তোমাতে মিলাই।
-প্রসাদ সরকার


_______________________________________________________________________

(২২২)

যাব আনন্দ নগরে প্রেমের নৌকায় বাদাম দিয়ে, যীশু গুণ গেয়ে
ভব নদী পাড়ি দিব তোমার দয়ার বলে, দিয়ে প্রেমের রশি
বান্ধ কষি টেনে নেও মোরে।

১। এ ভবের দুঃখ রাশি হর মোর যীশু মোশি, দিয়া দয়ার রাশি সঙ্গে রে মোরে
যে দিকে ফিরাই দুই নয়ন, তোমারে দেখিবারে
আমি মুদিলে আঁখি নিয়ে নেও পার করে।

২। তোমার ঐ পায়ের ধারে নিয়ে যেও দয়া করে, পূজিব হৃদয় ভরে আনন্দ অন্তরে
মানব জনম সফল হবে তোমার পূজা করে
যত সাধু ভক্তগণে সঙ্গে মিলিয়ে অন্তরে।

৩। তোমার ঐ সিয়োন পুরী দেখিব নয়ন ভরি, আনন্দে গুণ কীর্তন করব হে অন্তরে
সিংহাসনের চতুর্দিকে দূত-নরে মিলিয়ে আমরা আনন্দে
নাচিয়ে দয়াল পূজিব তোমারে।
-রজনীকান্ত রায়


_______________________________________________________________________

(২২৩)

যিহুদা, ওপথে তুই যাসনে, তোরে বিনয় করি
গেলে তোর হবে সর্বনাশ, শেষে মরবি দিয়ে গলায় দড়ি।

১। কয়েকটা টাকার লোভে, তোর মহাবিদ হবে
একবার তুই দেখ্‌ দেখি ভবে, ভবে মিথ্যা এসব টাকা-কড়ি।

২। পাতকী তারিবারে, সুখের ধাম স্বর্গ ছেড়ে
এসেছেন মানব আকারে যীশু ভব সাগর পারের তরী।

৩। তোর মহা লোভের কারণ, হবে তোর দারুণ মরণ
হবে তোর নরকে গমন, ও তুই অনন্ত কাল মরবি পুড়ে।

৪। যীশুর পায়ে নিলে শরণ, তোর এই লোভ হবে দমন
রিপু সব করে পলায়ন, পলায় যীশু নামে নরের অরি।

 ৫। ওপথে যাস্‌নে রে আর, গেলে তোর নাই রে নিস্তার
ফিরে আয়, আয় ফিরে একবার, এসে থাকগে যীশুর চরণ ধরি।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯১৯ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২২৪)
কীর্তন গান

যিহুদার বৈৎলেহমে জন্মেছেন আজ ঈশ্বরকুমার
অতি দরিদ্র বেশে রে (২)
শুয়েছেন যাব পাত্রের ভিতর।

১। রাখালগণ পেয়ে খবর গেল বৈৎলেহম নগর
আনন্দে হইল অধীর পেয়ে খোঁজ ত্রাণকর্তার।

২। পণ্ডিতগণ হইয়া সত্বর আইল লইয়া নজর
স্বর্ণ কুন্দুরু রসে দিল পায়ে উপহার।

রচয়িতাঃ হিরলাল সরকার (আনন্দপুর)


_______________________________________________________________________

(২২৫)
নাম গান

যীশু সত্য সনাতন ঈশ্বর নন্দন
পতিত পাবন পরম জয় জয়।

রচনা ও সুরঃ নিবারণ ঢালী (মৈস্তারকান্দি)


_______________________________________________________________________

(২২৬)

যীশু বল নারে ভাই নাম বিনে আর ভব পারের বন্ধু নাই
যীশু নামের মতন, কে আছে রতন, নাম বিনে আর বন্ধু নাই
যীশুর নামের মতন, কে আছে রতন, করলি না যতন, কেনরে ভাই।

১। তোরা আয় সবে ছুটিয়ে, নিয়ে যা লুটিয়ে
নাম বিনে আর বন্ধু নাই।
(প্রিয় ভাই ভাইরে)

২। ও যেদিন অকূলে পড়িবি, হাবু ডুবু খাইবি হাত ধরে
কেন তুলবে না ভাই।
(প্রিয় ভাই ভাইরে)।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২২৭)

যীশু দয়াময়, তোমার নিজ গুণে আজ দয়া কর মোরে
আমার সকলই ভার প্রভু তোমার উপার, অর্পণ করি আজ তব করে।

১। ডাকি প্রভু হ’য়ে ব্যাকুল, তুমি রক্ষা কর এ নরকূল
তুমি না রাখিলে একূল, নরের নাহি কূল
তুমি কূল রাখিতে অবনীতে, প্রাণ দিয়াছ ক্রুশোপরে।

২। তুমি অনাথের নাথ, দিতে পার সত্যপথ
তরাইয়াছ কত শত, অধম পাপীরে
একবার সেই মত আসি ওহে যীশু মশীহ্‌ , স্থান দান কর এই অধীনেরে।
-অরুণোদয় ঘোষ

_______________________________________________________________________

(২২৮)
পাপস্বীকার
সুরঃ পাপের কারণ কর ক্রন্দন

যীশু বলে হৃদয় খুলে ডাক দেখিরে অবোধ মন
অন্তর আত্মা শুচি করে, প্রেম স্বরে ডাকলে পরে
যীশু দেখা দিবেন সে অন্তরে, করে প্রেম আলাপন।
(যীশু দেখা দিবেন সে অন্তরে)।

১। পাপের ক্ষমা না হইলে, আরোগ্য কি ভাগ্যে মিলে
(এবার) মুক্তি তোমার যাবে চলে, করবে নরকে গমন
(মুক্তি তোমার যাবে চলে)।

২। যত পাপ স্মরণ কর, একে একে প্রকাশ কর
আবার বল পিতঃ ক্ষমা কর, আমি অধম সন্তান।
(বল পিত ক্ষমা কর)।

৩। ব্যাধির জ্বালায় হয়ে কাতর (যেন) পুত্র কন্যা জগৎ অসার
তোমার আনন্দের দিন হল আঁধার (করছ) নিরানন্দে কাল যাপন
(তোমার আনন্দের দিন হল আঁধার)।
-পাগল নরেন্দ্রনাথ ঘরামী


_______________________________________________________________________

(২২৯)
ইটালিয়ান ঝিঁঝিট-কাওয়ালী

যীশু নাম, মহানাম, মধুমাখা নাম
মনের আনন্দে গাও অবিরাম
সদা কর হাল্লেলুয়া ধ্বনি, কি দিবা কিবা যামিনি
চাও যদি প্রাণেরি আরাম।

১। ঐ নামে পলাবে দুঃখ ঐ নামে মিলিবে মোক্ষ
ঐ নামে পূর্ণ মনস্কাম
নামে এ ধরণী হবে শান্তিধাম
মনের আনন্দে জপ অবিরাম।


_______________________________________________________________________

(২৩০)

(যীশু) পরিস্কার কর আমারে
ধোয়াও আমারে আপন রুধিরে
যে রুধির ক্ষরে কালভেরি পরে।

১। পাপেতে মলিন হইয়াছে মন
কৃষ্ণবর্ণ তাহা হেরি সর্বক্ষণ
কর কর নাথ, নিজ রক্ত দান
যে রক্তেতে পাপীর সর্ব পাপ হরে।

২। সংহারক দূত আসিবে হে যবে
আমারে ছুঁইতে কুভু না পারিবে
ত্যাজিয়া আমারে অনত্র যাইবে
হেরে তব রক্ত মম অন্তরে।
-রামচরণ ঘোষ (১৮৬৭ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২৩১)
ঝিঁঝিট মিশ্র-ঠুংরী

যীশু খ্রীষ্টের স্মরণ লয়েছি
আর ভব-ভয়ের ভাবনা কি!

১। ত্যাজ্য করে স্বভাব পুরাতন
এখন যীশু-প্রেমে মজে রে ভাই স্থির করেছি মন
ও তাঁর ধর্ম-আলো, অতি উজ্জ্বল
আমি হৃদয় মাঝে জ্বেলেছি।

২। মন ভ্রান্ত ছিল অতিশয়
তাতে পাপে ভারী প্রাণ-তরী জীবন সংশয়
এখন ঘুঁটিয়ে দন্ড, নিরানন্দ
আমি আনন্দেতে ভেসেছি।

৩। শয়তানের দুষ্ট কারখানা
এই ভোলা মনকে ভুলায়ে ছিল দিয়া মন্ত্রণা
সব দেখি ফাঁকি, মুদি আঁখি
প্রভুর চরণ হৃদে ভাবতেছি।

৪। কি করিবে শয়তান দুরাচার
এই মন-প্রাণ দিয়েছি সব খ্রীষ্টের উপর ভার
আর নাইকো শঙ্কা বাজিয়ে ডঙ্কা
আমি যীশুর রাজ্যে এসেছি।

৫। মিথ্যা ফাঁকি যত চাতুরী
আর কুজ্ঞান কুমতি সকল পরিত্যাগ করি
লয়ে যীশু-তত্ত্ব, মহামন্ত্র
আমি খ্রীষ্টের দাস হয়েছি।
-কালাচাঁদ মন্ডল (১৮৪৫)


_______________________________________________________________________

(২৩২)

যীশু তোমার চরণে প্রেমেরই সাগরে
আমায় কেন ডুবাও না।

 ১। ডুবাবে আমারে আশা করি মনে
এই তাপিত প্রাণে ধৈর্য মানে না।

২। ডাকি তোমারে ব্যাকুলিত মনে
হৃদয় মাঝারে তুমি এসনা।

৩। ডুবাবে আমারে ডাকি করজোড়ে
আমায় কেন তুমি ডুবাও না।

৪। যীশু বল মন জুড়াবে জীবন
ভবের দুঃখ জ্বালা আর রবে না।
-রজনীকান্ত রায়


_______________________________________________________________________

(২৩৩)

যীশু হলেন মৃত্যুঞ্জয়ী পাপীর নাই আর মরণভয়
একে দুইয়ে তিনে সাক্ষ্য সত্য প্রমাণ হয়।

১। মৃত্যু জয়ে কবলিত যীশু হয়েছেন জীবিত
মরিলে হব জীবিত নাইকো মোদের মরণভয়।

২। পাপী-তাপীর জামিন হয়ে পাপের সাজা শিরে নিয়ে
কবরের যা কবর দিয়ে মৃত্যুকে করিলেন জয়।

৩। দিয়াবলের হয়েছে ক্ষয় যীশুর শক্তির হয়েছে জয়
পবিত্র পবিত্র ও সে মেষশাবকের হল জয়।

৪। সকল দুঃখের অবসানে আনন্দ খেলিছে প্রাণে
এ আনন্দ ফুরাবার নয় দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়।

৫। মৃত্যুঞ্জয়ী যীশু নামে যাব মোরা স্বর্গধামে
বুক বেঁধে আজ আশায় আশায় আছি সেই প্রত্যাশায়।
-জয়নাথ অধিকারী


_______________________________________________________________________

(২৩৪)

যীশু প্রেমামৃত ধারা বহে ধারা ভক্তের অন্তরে।

১। ঐ নাম শুনিয়ে রাখালগণে, তারা চাইল না নিজ মেষের পানে রে
তারা চলে যায় গোলাশায় যীশুকে দেখিতে রে।

২। যীশুর প্রেমের উদ্দেশ্য পেয়ে (পূর্বের) পণ্ডিতগণ আসিল ধেয়ে রে
পূজে স্বর্ণ, কুন্দুরু গণ্ধরস দিয়া রে।

৩। (ঐ) নামে মরিয়াম ধ্বনি, ধরে যীশুর পা দু’খানি রে
চক্ষের জল দিয়া ধোয়াইয়া, কেশ দিয়া মুছাইল রে।

৪। শালেমস্থ বালকগণে, (তারা) উদ্ধের্ খেজুর পাতা তুলে রে
তারা নাচে গায় যীশু জয়, যীশু জয় বলে রে।

৫। যীশু প্রেমে পাগল হয়ে সাধু যোহন বেড়ায় বনে বনে রে
বলে মন ফিরাও মন ফিরাও, মন ফিরাও বলে রে।
-নিশিকান্ত হালদার


_______________________________________________________________________

(২৩৫)
কীর্তন-একতালা

যীশুর কাছে এলে জগৎ যাবে ভুলে।

১। হায়, হায়, নরকে কেন যাও, দুই চক্ষু মেলে।

২। প্রেমের ছাঁচে ঢেলে, যীশু লবেন নিজ কোলে।

৩। আমি সেই প্রেম পেয়ে, মান দিলাম ফেলে।

৪। এই প্রেমের অপার সুখ, নিলাম মাথায় তুলে।

৫। যীশুর মহা প্রেম ও দয়া কেমনে যাই ভুলে।

৬। ভাই ও ভগ্নীর জন্য তাই, আনলাম প্রেম তুলে।
-আর. এল. মুখার্জি


_______________________________________________________________________

(২৩৬)

যীশুর চরণে
লুটায় নারী, ধারা বয় দুই নয়নে
(ওসে কেঁদে কেঁদে ভাসায় চরণতলে।)।

১। নয়ন জলে যীশুর চরণ, ধুয়ে দিল মরিয়ম তখন
চরণ দিল ছেয়ে শতেক চুম্বনে।

২। খুলে দিয়ে মস্তকের চুল, মুছে দিল চরণ-পদ্মফুল
যে ফুল ফোটে স্বর্গের শতদল বনে।

৩। সুগন্ধি তৈল দিল ঢেলে, প্রভু যীশুর চরণ যুগলে
পাপের ক্ষমা পাবার আশা পরাণে।

৪। এস প্রভু দয়া করে, উদয় হও এই হৃদয় মন্দিরে
তুমি এসে যীশু আপন গুণে।

৫। ধুয়ে চরণ নয়নজলে, মুছে দিব মাথার চুলে হে
চরণ পূজা করব-বাসনা-মনে।

৬। সকল পাপ আজ কর ক্ষমা, দয়াল তোমার দয়ার নাই সীমা
তোমার শান্তি দেও এই অশান্ত প্রাণে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৩৭)
ঝিঁঝিট মিশ্র-ঠুংরী

যীশুর আলো কি উজ্জ্বল দেখাই খুলে প্রাণ কারে
(দেখ) সূর্য লাগে কোথায় তাঁর আলোর কাছে সব হারে।

১। ঐ আলো মোর অন্তরে, ভাল মন্দের বিচার করে
(তাই) সদা জেগে থাকি আমি, নির্ভর যীশুর উপরে।

২। এত জ্ঞান যীশুতে পাই, ভাষা নাহি সে সব বুঝাই
(তাই) যীশুর গান আপনি গাই, যীশুর আলোর তান ধরে।

৩। ভক্ত সকল সাবধান হও, যীশুর আলোয় প্রাণ মিলাও
(সদা) চল, মাঝে থেম নাক, সর্বপূর্ণতার তরে।
-রাজেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায় (১৮৯২খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২৩৮)

যীশু এস আমার অন্তরে
জুড়াব প্রাণ তোমার হেরে।

১। তোমার মোহন মূরতি হেরে
যাবে দুঃখ অন্তরে।

২। আমার তাপিত প্রাণ শীতল হবে
পেলে তোমায় অন্তরে।

৩। তোমার বিচ্ছেদে নরক যাতনা
ভোগে পাপী অন্তরে।

৪। তোমার সহবাসে স্বর্গ-সুখ
হয় এই সংসারে।

৫। যীশু তুমি যথা স্বর্গ তথা
এস আমার অন্তরে।
-অজ্ঞাত


_______________________________________________________________________

(২৩৯)

যীশু পরম ধন
তাঁরে যত্ন কর আমার মন।

১। প্রভু ছাড়িলেন স্বর্গস্থান, আইলেন মর্তভূবন
ও মন, তোমারি কারণ
তিনি নরের জন্য নর দেহ, ও মন, করিয়াছেন ধারণ।

২। ও মন তোমার পাপের জন্যে, গেৎশিমানী বাগানে
কত দুঃখ তাঁর প্রাণে
ও মন তোমার মহাপাপের জন্য, তিনি ক্রুশে হলেন সমর্পণ।

৩। প্রভু যত্নের নিধি যত্নের ধন, তাঁরে ভক্তি কর আমার মন
তবে পাইবে জীবন
তাঁরে অযতন করলে রে মন, হবে নরকে তোমার গমন।

৪। যেজন বিশ্বাসে করে সাধন, সে পেয়েছে ঐ খ্রীষ্টধন
সে ধন অমূল্য রতন
ঐ ধন অনন্তকাল থাকবে রে মন, তাহার ক্ষয় নাহি হবে কখন।

৫। অতি দীনহীনের এই বচন, শুন ওরে ভোলা মন
ধর খ্রীষ্টেরি চরণ
ও মন মহাসুখে সুখী হবে, তুমি স্বর্গে পাবে সিংহাসন।
-যাকোব মন্ডল (১৮৬০)


_______________________________________________________________________

(২৪০)

যীশু বিনে কেহ নাই এ সংসারে
এই মহা পাপের দায় কে উদ্ধার করে?

১। এই জগৎ মাঝে, যত জন আছে
তারা সবে দোষী হবে, নিজ পাপ-ভারে।

২। পিতা মাতা সুত, ভাই বন্ধু যত
তারা আমার পাপের বার নিতে নাহি পারে।

৩। ওরে আমার মন, ধর যীশুর চরণ
যিনি তোমার পাপের ভার নিলেন শিরোপরে।



_______________________________________________________________________

(২৪১)

১। যোসেফ গেল, গেছে মোর শিমিয়ন
যাবে বিন্যামীন চলে
না জানি কি ঘটে নিদারুণ অঘটন
আমার এই আসন্ন কালে।
ধুয়াঃ রে যিহূতা, আমি কত দুঃখ স’ব আর সংসারে।

২। যোষেফ যেদিন ছেড়ে যায় আমারে
তোদের অন্বেষণ তারে
নিজরে হাতে দিলাম সাজায়ে বাছারে
যাবে শিখিমের প্রান্তরে।

৩। দিনে দিনে কতদিন চলে যায়
যোষেফ এল না ফিরে
মনে মনে ডাকি নিশিদিন দয়াময়
আন ফিরায়ে তাহারে।

৪। এল না সে, এল না ফিরে আর
যোষেফ এল না কোলে
কয়দিন পরে রক্তমাখা সেই বস্ত্র তার
পেয়ে ভাসি চক্ষের জলে।

৫। বনের পশুর হাতে যায় তার জীবন
আমার জীবন যায় শোকেে
আর কি ভবে দেখব যোষেফের চাঁদ বদন
দেখব আমার এই দুই চোখে।

৬। দিনে দিনে গেল দিন, বছর, মাস
ভুলিতে পারি না তারে
মনে মনে জাগে চিরদিন এই আশ্বাস
যোষেফ আসবে আবার ফিরে।

৭। মিছে আশা, মিছে মোর সে স্বপন
দিন তো ফুরায়ে গেল
মিশর হতে সংবাদ এল, মোর শিমিয়ন
রাজার হাতে কয়েদ হইল।

৮। কিভাবে তার কাটে দিন, কি দুঃখে
আর কি মুক্তি সে পাবে?
আর কি তারে দেখব আমার এই দুই চক্ষে
আর কি সে দেখা দিবে?

৯। ধৈর্য ধরি, বল না কেমনে
পাব সান্ত্বনা কিসে?
বিন্যামীনের জীবন বাঁধা মোর জীবনে
তারে পাঠাই কোন সাহসে।

১০। বিন্যামীনকে যেতে আর দিবনা
এই পণ করেছি মনে
অব্রাহামের ঈশ্বর, শোন মোর প্রার্থনা
কর রক্ষা বিন্যামীনে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী
_______________________________________________________________________

(২৪২)
মিশ্র ভৈরবী-জৎ

যেন ভুলিয়া না যাই, যেন ভুলিয়া না যাই
অফুরন্ত দয়া তেমার, অনন্তকাল স্থায়ী ।

১। (তোমার) যত দয়া এ জীবনে, দেশে দেশে ও ভূবনে
দণ্ডে দণ্ডে নিশি দিনে, সর্বক্ষণে পাই।

২। (আমি) কেবল মাত্র তোমার দয়ায়, পিতে হে চিনেছি তোমায়
পেয়েছি ঐ পায়ে আশ্রয়, চিরকালের ঠাঁই।

৩। যে তোমার দয়ার কথা, চিরদিন রয় প্রাণ গাঁথা
কৃতজ্ঞতা যেন প্রাণে থাকে সর্বদাই।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১/১/১৯৪৭ খ্রীঃ)

৪। রাখ নামায়ে তোমার প্রাণের বোঝা
দয়াল প্রভু যীশুর চরণে
যিনি তোমার পাপের সাজা, সহিয়াছেন নিজ প্রাণে।

১। দুঃখ দুর্ভাবনা যত, জাগে প্রাণে অবিরত, রজনী দিনে
দুশ্চিন্তা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, যাহা কিচু আছে মনে।

২। যত শোক যত বেদনা, করে প্রাণে আনাগোণা নীরব চরণে
অবিচার অত্যাচার যত, সহিতেছেন অকারণে।

৩। প্রলোভন আর পাপ পরীক্ষা, হতে তিনি করেন রক্ষা আশ্রিত জনে
বলো তাঁরে হৃদয় খুলে, রেখ না কিচুই গোপনে।

৪। ব্যথী তিনি সকল ব্যথার, শ্রোতা তিনি সকল কথার সকল স্থানে
ব্যথিতের বন্ধু এমন, পাবে না এই ত্রিভূবনে।

৫। জানাও তাঁরে অভাব তোমার, তাঁর কাছে আছে প্রতিকার নিশ্চিত জেনে
পাবে মুক্তি, পাবে শান্তি, তোমার অশান্ত জীবনে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৯৪২ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২৪৪)
মুলতান-ঢিমে তেতালা

লুকাল তিমির দিনপতি।
ফাঁটে গিরিশিরে, কঠিন পাষাণ চুড়া
ভূকম্পনে থর থর, কাঁপিছে বসুমতি
হেরি বিকলা বিষাদ আকুলা প্রকৃতি।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৪৫)
আশাবারী কাওয়ালী

শুনেছ বিনতি, অগতির গতি প্রণতি প্রণতি প্রণতি চরণে
তোমার দয়ার কথা যীশু জগত্রাতা, রবে প্রাণে গাঁথা জীবনে-মরণে।

১। নিয়া বরাভয় শ্রীকরকমলে
দাঁড়ালে হৃদয়ের উদয় অচলে
শত-সূর্য্য প্রভা জ্বলে পদতলে, করুণা প্রবাহ বহিছে নয়নে।

২। করিলে মার্জনা অপরাধ যত
তিমির রজনী হইল বিগত
শুভ প্রভাত এসে হয়েছে উদিত, বিহঙ্গ সঙ্গীতে ঝংকৃত ভূবনে।

৩। শুভক্ষণে আজি মম এ জীবন
পাদপদ্মে তব করি সমর্পণ
কাটে এ জীবন গুণগানে যেন, তোমার এই অসীম করুণা স্মরণে।

-প্রিয়নাথ বৈরাগী (১৫/৯/১৯৪৮ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২৪৬)
মিয়া মল্লার-একতালা

শুভদিনে এসেছ, দয়াময় হে
দয়াময় যীশু হে, এ ধরায়
তোমার আগমনে হেরি চারিদিক আনন্দময়।

১। শুনি আকাশে মঙ্গল ধ্বনি সুর পুরবাসী মুখে
তোমার বিজয়-গাঁথা গাহিছে মনের সুখে
ধরাতলে নরকূল, মর্ত উল্লাসে, পুলকে
স্বর্গ-মর্ত সমস্বরে, গাহে তোমার নামের জয়।

২। ঐ যে হাসিছে প্রভাতী তারা, চেয়ে তব মুখ পানে
(সহস্র সুধাংশু সম অতুলন এই ত্রিভূবনে)
জগৎ পূজ্য জ্ঞানী জন, লুটাইছে শ্রীচরণে
রতন, মুক্তা, মণি রেখে তোমার রাঙ্গা পায়।

৩। আজি প্রণমে পদ পঙ্কজে, দীনহীন এই অভাজনে
সঁপিয়া তোমারে প্রভু, দেহ, আত্মা, জীবন ও মন
ইহকাল আর পরকাল, সর্বরাধ্য ঈশ্বর-নন্দন
যুগে যুগে অধীনেরে দিও তোমার পদাশ্রয়।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৪৭)

সকল ধন্যবাদ মহিমা গৌরব তোমার
জয় হোক্‌ জয় হোক্‌ যীশু, জয় হোক্‌ তোমার।

১। জঘন্য পাপী আমি অতি দুরাচার
প্রেমে তরালে মোরে প্রেম অবতার
প্রেমের অবতার তুমি দয়ার অবতার
জয় হোক্‌ জয় হোক্‌ যীশু, জয় হোক্‌ তোমার।

২। রোগ হতে আরোগ্য করলে মহিমা তোমার
সম্পদে-বিপদে সহায় হয়েছ আমার
দয়ার উপর দয়া কত, পেয়েছি তোমার
জয় হোক্‌ জয় হোক্‌ যীশু, জয় হোক্‌ তোমার।

৩। পথে-ঘাটে, মাঠে বান্ধব, হয়েছ আমার
দেখেছি দেখেছি তোমার প্রেম ব্যবহার
অনুগ্রহ করিয়াছ কত শত বার
জয় হোক্‌ জয় হোক্‌ যীশু, জয় হোক্‌ তোমার।
-জয়নাথ অধিকারী


_______________________________________________________________________

(২৪৮)
ভীম-পালশ্রী-তেওড়া

সকল পথের শেষে এসে
পেয়েছি প্রভু তোমার দেখা
সকল সাথী গেছে ফিরে
তুমিই শুধু দাঁড়িয়ে একা।

পথের মাঝে বারে বারে
যতই গেছি দূরে সরে
দেখি তবু ঘুরে ঘুরে
ঐ যে তোমার চরণ-রেখা।

যদি কেহ শুধায় মোরে
এমন সাথী কে সে
সুখে দুঃখে সকল কাজে
সদাই পাশে পাশে।

বলব আমি সবার মাঝে
সে সাথীর মোর খোঁজ মিলিছে
পরাণ আমার ভরে গেছে
সার্থক আমার যীশু ডাকা।
-নির্মলানন্দ সরকার


_______________________________________________________________________

(২৪৯)

সদা জাগে মনে ঐ চাঁদ বদন
তোমার শ্রীমুখ যায় না ভুলে থাকা
আমি পাগল হলেম প্রাণে ম’লেম্‌
বাঁচাও বাঁচাও প্রাণ সখা।

১। তোমার শ্রীমুখের কান্তি, ঘুচায় মনের সকল ভ্রান্তি
জুড়ায় হৃদয় দেয় গো মান্তি, দয়াল রয় না কিচুই ঢাকা
মনের পাপের আঁধার দূর করে দেয়, পূর্ণ চন্দ্রের জ্যোতিরেখা।

২। তোমার দুটি সজল নয়ন, ভুলায় আমার এই ভোলা মন
শীতল করে তাপিত জীবন, তোমার দৃষ্টি সুধা মাখা
যেন মেঘ আড়ালে আলো জ্বলে, সোনার কান্তি জ্যোতিরেখা।

৩। তুমি পূর্ণ দয়ার আঁধার, পূণ্য সুধা প্রেমের ভাণ্ডার
তোমতে হেরি অনিবার, দয়াল সুখ শান্তি লেখা
যেন দুঃখে-সুখে পাই তোমাকে, প্রাণে থাকে আঁকা।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(২৫০)

সত্য গুরুর চরণ ধর আমার মন
সত্য গুরু না ভজিলে, হবে নরকে তোমার গমন।

১। যে জন ভবে সত্য গুরু, গুরুর গুরু কল্প তরু, ঈশ্বর নন্দন
সে জন মানুষ হয়ে এল ভবে, ধোয়াল শিষ্যের চরণ।

২। প্রেম শিক্ষা তাঁর শিক্ষার মূলে
প্রেম শিখায় সে মরণ কালে, প্রেমই তাঁর জীবন
তাঁরে পাবি যদি নিরবধি, কর গে তাঁর অন্বেষণ।

৩। শিষ্যের জন্য সে জন মরে, নিজ প্রাণ দেয় ক্রুশোপরে প্রেমের মহাজন
সে জন পাপীর তরে, দ্বারে দ্বারে, প্রেম ধন করে বিতরণ।

৪। যীশু খ্রীষ্ট নামটি ধরে, এসেছেন এ সংসারে, অমূল্য রতন
শিখায় মানুষকে, সে মানুষ হতে, দেখ এসে সে মানুষ কেমন।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৫১)

সত্য সনাতন নিত্য নিরঞ্জন জয় জয় পতিত পাবন।

১। মোরা অপরাধী, পাপ করেছি জন্মবধি
ক্ষমা কর ওহে জগৎপতি (এখন)।

২। তোমার নামে দুই তিন জনে, উপস্থিত হয় যেখানে
বলছ তুমি থাকবে সেই স্থানে (নাথ)।

৩। লয়েছি স্মরণ আজি, ওহে রাজাধিরাজ
সভামাঝে অধিষ্ঠিত হও আজ (নাথ)

৪। তোমার অতুল শোভা কি মাধুরী মনোলোভা
দেখিলে ভুলিতে কে পারে (ঐ রূপ)।

৫। দেও নয়ন খুলে দেও, এসে সম্মুখে দাঁড়াও
নয়ন ভরে দেখিব তোমারে (নাথ)।
৬। মোরা আকিঞ্চন, অতীব দীনহীন
কে চাহিবে মুখ পানে ফিরে (দয়াল)।

৭। তুমি তো প্রেমময়, যথা-প্রেম তুমি তথায়
প্রেমবন্যায় ভাসাও এসে সবার (এখন)।

৮। তুমিতো আনন্দময়, নিরানন্দ নাইকো তোমায়
আনন্দে মাতাও এসে সবার (এখন)।
-জয়নাথ অধিকারী


_______________________________________________________________________

(২৫২)

সোনার বরণ মানুষ রতন প্রেমিক বিনে সেধন পায় না
আমি নিরবধি ঐরূপ দেখি গো রূপ দেখে প্রাণ পূরে না।

১। কাঁটার মুকুট শিরে পরা হাতে পায়ে পেরেক মারা গো
তাঁর সোনার অঙ্গে কৌপন পরা গো
ভবে এমন মানুষ আর মিলে না।

২। দুটি নয়ন জলে ভরা, প্রেমে আকুল নয়ন তারা গো
দেখে নর-নারী গৃহ ছাড়া গো
তারা প্রেমের টানে ঘরে রয়না।

৩। মার্থা, মরিয়ম ছিল ঐ প্রেমেতে ডুবে গেল গো
আর কত জনে ধিক্কার দিল গো
সাধু পিতার যোহন চেয়ে দেখ না।

৪। কিবা তাঁহার রূপের ছটা জীবন জলে মাতাল আছে গো
আমার হৃদয়ের মাঝে প্রেমের কাঁটা গো
ফোটে দিবানিশি সে যন্ত্রণা।

৫। ঐ প্রেমেতে ডুবে যাব কেঁদে কেঁদে পায়ে পড়ব গো
আমি ঐ চরণে জীবন দিব গো
আমার মনে আছে এই বাসনা।
-রূবেন সরকার


_______________________________________________________________________

(২৫৩)

সাথের সাথী সবার যিনি, থাকুন তিনি তোমার সাথে
যিনি রক্ষা করেন সকল প্রাণী, কি দিবসে কিবা রাতে।

১। তাঁহার শ্রীচরণের ছায়া, শীতল করুক জীবন-কায়া
তার শ্রীমুখের আলো, জগৎ আলো করে জ্বলুক তোমার চিতে।

২। সুখে তিনি শান্তির খনি, সকল দুঃখে সহায় তিনি
তুমি হয়ে তাঁর নয়নের মণি থাক সুখে এ জগতে।

৩। যদি এ জগতে আবার, সাক্ষাৎ নাহি পাই হে তোমার
হবে জীবন জর্দন নদীর ওপার, দেখা সেই শুভ প্রভাতে।

৪। সেই প্রভাতে সুখের দেশে, আনন্দ সুখের আবাসে
মিলে গাবো মোরা প্রেমউল্লাসে, মধুর বিজয় সঙ্গীতে।

৫। সে শুভদিনের প্রত্যাশায়, যেন মোদের দিন কেটে যায়
যে দিন আসিছে, আসিছেন ত্বরায় প্রভু যীশু এ জগতে।

৬। পেয়ে অদ্য কার আশীর্বাদ ঘুঁচুক প্রাণের সকল বিষাদ
মোরা যাচি সবে তাঁহার প্রসাদ, তোমার যাত্রাপথে।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৫৪)

১। সবে জাগম জাগ করি বিনয়; লহ পরিত্রাণ, দিন বয়ে যায়।
যীশু শান্তি দাতা তোমার ত্রাণকর্তা প্রেমময়, এখন
বিশ্বাস করে চলে এস, দিন বয়ে যায়, নাই উপায়।

২। যীশু স্বর্গ ছেড়ে, দাসের রূপ ধরে এ ধরায়, পাপী
নরের তরে ক্রুশ প’রে সমর্পিলেন কায়-দয়াময়।

৩। যীশু মধুর স্বরে, ডাকিছেন তোমারে এসময়, যত
পরিশ্রান্ত, ভারাক্রান্ত, আমার কাছে আয়-সুসময়।

৪। এখন কপিথ ছাড়, পাপ স্বীকার কর, সরল হও
সবে প্রার্থনাতে যীশুর কাছে, মনের কথা কও ত্রাণ লও।

৫। দেরি করো নাকো, সুযোগ ছেড়ো নাকো আর
হেলায়, কোন্‌ দিন শমন এসে বাঁধবে কষে
দিন বয়ে যায়, নিরুপায়।

৬। সুযোগ ছেড়ে দিলে বিস্তর কাঁদিলেও পাবে না ত্রাণ
এখন তপিত্‌ হৃদে কেঁদে কেঁদে, লহ পরিত্রাণ, বাঁচাও প্রাণ।

৭। মনে দেখ ভেবে, ক’দিন থাকবে ভবে, সময় যায়
এখন সরল মনে ডাক তাঁরে, দিন বয়ে যায়, নাই উপায়।
-শলোমন শান্তিনাথ বিশ্বাস


_______________________________________________________________________

(২৫৫)
ললিত-কাওয়ালী

হেথা সারাটি রজনী ভরি, ছিল প্রহরী প্রহরণধারী
নেয় নাই কেউ হরি তাঁর দেহ, করেনি তাঁহারে চুরি গো কেহ।

১। স্মরিয়া যাঁহারে কাঁদিছ, তোমার বহিছে নয়নে বারি
অসহ দহন রহিয়া রহিয়া, দহিছে হৃদয়পুরী।

২। সমাধি শয়নে শায়িত, হেথা সমাহিত তাঁরে হেরি
ভেবেছিল মনে আততায়ীজনে, আসিবে না সে আর ফিরি।

৩। মরণের বুকে মৃত্যুবানহানি, শমনে নিধন করি
ঐ আসে ঐ, সেই মৃত্যুঞ্জয়ী, কালান্ত কৃতান্ত অরি।

৪। ঐ শুন, সে ডাকিছে, শুন, “ওগো মগ্দালিণী মেরী”
মুছিয়া নয়ন, কর দরশন, যীশু দুঃখতাপহারী।
-প্রিয়নাথ বৈরাগী


_______________________________________________________________________

(২৫৬)
 TUNE SA. 15

হোশান্না! হোশান্না!
এ এলেন শান্তিরাজ।
ধন্য! তিনি ধন্য! পথ খুল যীশুর জন্য
নিজ রাজ্য লইবেন আজ।

১। যিরূশালেমের দিকে যায় গাধায় চড়িয়ে কে?
লোক কত আগে পিছে ধায় কি বলে পথিকে?

২। অপূর্ব সাজে সাজিয়ে শ্রীযীশুর সৈনিক যায়
নিজ বস্ত্র পথে পাতিয়ে, খেজুর পাতা উড়ায়।

৩। হে সিয়োন কন্যে! পূরিবে আজ শাস্ত্রের এই বচন
ঐ দীনবেশে হবে তোমার রাজার আগমন।

৪। নগরে শোভে সন্ধ্যালোকে ও চূড়া স্বর্ণময়
রব শুনে ছাদে উঠে লোক, অপেক্ষা করি রয়।

৫। ত্রাণেশ্বর কিন্তু মন নিরাশ “গ্রহিবে কি আমায়?”
কি সত্যের পক্ষে এই উল্লস না জগৎ রাজ্য চায়।

৬। অমায়িক শিশুগণের ভাব নাথ হেরি মন্দিরে
করিলেন স্তবে প্রীতি লাভ, তাই মনে রাখবে।
-উইলিয়াম কেরী


_______________________________________________________________________

(২৫৭)

হে মোদের স্বর্গীয় পিতঃ
তুমি উদয় হও সভা মাঝে সকলে হই প্রনোমিত।

১। বলফুলে গেঁথে মালা
এনেছে সব কুল বালা
আজি তব কণ্ঠে পড় মালা
দেখে লই জনমের মত।

২। হে ত্রাণেশ্বর পাগলা-ভোলা
আজি সফল ক মোর জীবন লীলা
এখন পরাও তোমার মালা
নর-নারী আছে যত।

৩। যোগেশ বলে ও ভোলা মন
গেলরে তোর শুভ লগন
আজি নামের মালা কর ধারণ
যাবে ভবজ্বালা আছে যত।
-যোগেশ চন্দ্র হালদার


_______________________________________________________________________

(২৫৮)
মল্লার মিশ্র-কাওয়ালী

 হৃদয়ে জ্বালাও যীশু তব অনলে
জ্বালাও জ্বালাও প্রাণ দগ্ধ কর এ প্রাণ
পাপ তৃণকুটা সব নাশ সমূলে।

১। ভগ্ন কর হৃদয়, চূর্ণ কর আমায়
ধ্বংস কর হে দয়াময়
ফুকারি তব অনলে, হৃদয়ের অন্তঃস্থলে
প্রবেশ কর হে যীশু তব প্রেম বলে।

২। অগ্নিময়, দেহ ধ্যান, অগ্নিময় বাক্য জ্ঞান
অগ্নিময় হউক আমার প্রাণ
এসে অগ্নিময় রথে, প্রবেশ কর হে চিতে
জয় ঘোষি যীশু তব দূত- নরে মিলে।

৩। অনলে সূবর্ণ রূপ হায়! অতি অপরূপ
সেই রূপ প্রদান আমায়
অনলেতে খাঁটি কর ওহে যীশু দয়াধার
এই চির নিবেদন , তব পদতলে।
-বিন্দুনাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(২৫৯)
লুম্‌ঝিঁঝিট-একতালা

আত্মন! এস হৃদয়-উদ্যানে তুষিব হৃদয় দানে।

১। যেমত বায়ু বিহনে, জীবাদি বাঁচে না প্রানে
সেই মত তোমা বিনে, বাঁচি না এ জীবনে।

২। যেমন বায়ু সুখী করে, তেমন সুখী কর মোরে
সদাই স্নিগ্ধ অন্তরে, ডাকব তোমায় এক প্রাণে।

৩। ওহে প্রভু দয়াময়, উদ্যানে এস এ সময়
নানা জাতি পুস্পচয়, ফুটাও হৃদয়-কাননে।

৪। বিশ্বাস ভক্তি পবিত্রতা, প্রেম আনন্দ সহিষ্ণুতা
মধুর ভাব দয়া নম্রতা, চাই এই উদ্যানে।
-প্রভাত চন্দ্র দাস (১৮৯২ খ্রীঃ)


_______________________________________________________________________

(২৬০)
সুরঃ লাল চান বালা

জগতের ধনে হয় কি ধনীরে
ওরে যীশু ধন যার নাই অন্তরে
সে ধন ছিনতাই হবে, ডাকাতে নেবে রে
সিদ্‌ কাটিয়া নেবে চোরে
যীশু ধন যার নাই অন্তরে।

১। প্রমাণ আছে আলেকজান্ডার, বিশ্বজয়ী নাম ছিল তার
এই জগত মাঝারে
বলে গেল মৃত্যু কালে রে
আমি শূণ্য হাতে যাই কবরে।

২। রাজা প্রজা একই সমান, ওরে কবরেতে হবে যে স্থান
এই তোম বিধির বিধান।
কি লাভ হবে এ ধনে রে
সেধন সঙ্গে তোমার যাবে নারে।

৩। যীশু ধন পেয়েছে যারা, ওরে স্বর্গ মর্তে সুখ তারা
এই তো ধনীর ধারা
এই ধন হবে সংগের সাথী রে
ওরে নিবে তোরে পরপারে।

৪। যীশু নামে পাগল যারা, পরশে যায় ব্যাধি জরা
পরশ মণি তারা।
ওরে পরশ মণির ঐ চরণ ধুলিতেই
তুই ধনী হবি চিরতরে।

৫। যে ধনের নাই কোন ক্ষয়, তোর সংগের সাথী হবে নিশ্চয়
তোর যাবার সময়
পাগল যেহন বলে ঐ ধন পেলেরে
সে সুখী হবে ত্রি সংসারে।
-যেবক যোহন


_______________________________________________________________________

(২৬১)
ভাটিয়ালী
সুরঃ লাল চান বালা

ঈশ্বর প্রেম ভবে এল মানবের-ই তারে
যীশু খ্রীষ্ট বলি হলো ক্রুশের উপরো
যীশু রক্তের বন্যা বয়ে গেল, মানব জাতির তরে।

১। চিন্তা কর ওরে মানুষ, পাপ আর করও না
পাপে মৃত্যু হয় মানুষের, জীবন মেলে না
তোমার দ্বারে যীশু দাঁড়ায়ে আছে
গ্রহণ কর অন্তরে।

২। যখন তুমি ভবে এলে, সাথে কেউ ছিল না
কি কারণে ভবে এলে, ভেবে দেখলে না
ভবে চিরকাল কেউ রবে না
তুমি যাও ক্রুশের ধারে।

৩। খ্রীষ্ট পথে বড় জ্বালা, ক্রুশো বইতে হবে
খ্রীষ্ট পথে আছে জীবন, চির শান্তি পাবে
তুমি যীশু যীশু বলে ডাক
যীশু দেখা দিবেন তোমারে।

৪। খ্রীষ্টের বাক্য প্রচার কর, ভব সংসারে
যীশু খ্রীষ্ট তোমার সাথে, চিরকালের তরে
অধম প্রফুল্ল কয় গেল সময়
চল ক্রুশের পথ ধরে।
-প্রফুল্ল রায়


_______________________________________________________________________

(২৬২)
সুরঃ সেবক কৃপা মধু

আমার যাবার সময় হইয়াছে
আমার বিদায় লগণ এসেছে
তোরা জনমের মত আমায় বিদায় দে
আমি আর কত কাল থাকব ওরে
মায়া ভরা পরবাসে।

১। কতদিন ছিলাম আমি এই সংসারে
আর তো দেখা হতে না পারে এই জীবনে
ওরে কথায় কাজে কত
ব্যথা দিয়েছি সবার মনে।

২। যেতে চায় না পোড়া মন সংসারও ছেড়ে
বক্ষ ফেঁটে যায় যে আমার সবার মুখ দেখে
সবার পায় ধরে মিনতি করি
আমার মায়ার বাঁধন কেটে দে।

৩। একদিন সবার যেতে হবে সংসারও ছেড়ে
ভাই বন্ধু কাঁদিবে তারা মুখ পাণে চেয়ে
তবু যেতে হবে বিদায় নিয়ে
সবাইকে কাঁদায়ে রে।

৪। যাবার বেলা এই প্রার্থনা চরণে রাখি
ভক্ত চরণ ধূলিকণা গায় মাখি
আমি ধূলি লব প্রাণ জুড়াব
এই আশা মোর জীবনে।

৫। সকল কিছু পরে রবে মায়ারই সংসার
একদিন সবার হতে হবে মৃত্যু নদী পাড়
এখন যোহন বলে হে দয়াময়
তুমি থেকো বিদায় লগণে।
-সেবক যোহন


_______________________________________________________________________


(২৬৩)
ভাটিয়ালী
সুরঃ সেবক কৃপা মধু

আজও ভক্তের নয়ন বারি শুখায় নাই আমতলায়
ওরে সাধু জনার চরণ ধূলি আজও যেন কথা কয়।

১। আর প্রসাদেরও গন্ধে সেদিন, বরে ছিল এই দেশে
রূবেনের, মনোহরের, প্রার্থনার নাই বা ছিল শেষ
ওরে প্রার্থনার মানুষ ছিল মথুরা বাবু রে
ও যার প্রার্থনায় নদীর ভাঙ্গন থেমে যায়।

২। আর প্রিয়নেোথর প্রেমের কথা, সংগীতে আছে গাঁথা
কোথায় বৃক্ষ কোথায় লতা, লতায় ছাইছে দেশময়
ওরে ঐ লতার পাতার ছোঁয়া, ছোঁয়া লেগে রে
আর রুগী সুস্থ হয়।

৩। আর জ্ঞান, দানিয়েল, গগনের কথা
আজও কত ভক্তের প্রাণে লাগে ব্যথা
ওরে সোনার মানুষ এসেছিল দুনিয়ায়
ও তারা চলে গেছে যে যার দেশে রে
ও তারা আসবে না আর এই ধরায়।

৪। আর সদাই কাঁদে মনের দুঃখে বুঝলাম নারে কেউ
আম তলারই কাছে বসে শুধু শুনলাম প্রেমের ঢেউ
পারলাম না ঐ প্রেমের মানুষ হইতে রে
আমার জনম বুঝি বৃথা যায়।
-সদানন্দ হাজরা (সদাই)


_______________________________________________________________________


(২৬৪)

তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে
তুমি ধন্য ধন্য হে।
আমার প্রাণ তোমারি দান
তুমি ধন্য ধন্য হে।

১। তোমার বিশাল বিপুল ভূবন
করেছ আমায় নয়ন লোভন
নদীগিরি বন সরস শোভন
তুমি ধন্য ধন্য হে।

২। হৃদয়ে বাহিরে স্বদেশে বিদেশে
যুগে যুগান্তে নিমিষে নিমিষে
জনমে মরণে শোকে আনন্দে
তুমি ধন্য ধন্য হে।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


_______________________________________________________________________


(২৬৫)

আমার এ হৃদয় তোমার যোগ্য নয়
কৃপাতে দাও চরণ ধূলি এসে এ সময়।

১। পথের ধূলা লেগে যখন
মলিন ছিল হৃদ সিংহাসন
আপন হাতে মুছে তুমি বসলে দয়াময়।

২। কৃতজ্ঞতা দর্শনে দেয়
কিছু এমন ভাণ্ডারে নেই
আমার ঘরে সেবা তোমার অনাদরে হয়।

৩। অবশেষে জানাই নতি
পদে যেন রহে মতি
আহ্বান তোমার যতগুলি প্রাণে যেন সয়।


_______________________________________________________________________

(২৬৬)

ক্রুশের কাছে রাখ হে, যীশু নিত্য আমায়
বহুমূল্য স্বাস্থ্যকর স্রোতঃ বহে তথায়।
ধূয়াঃ ক্রুশেতে, ক্রুশেতে শ্লাঘার বিষয় আমার
তাঁরই গুণে নির্ভয়ে যাব নদীর ওপার।

১। ক্রুশের কাছে পাইল, প্রেম ও দয়া আমায়
তথায় প্রভাত তারাটি আলো দিল আমায়।

২।  ক্রুশের কাছে রহিলাম, দেখাও শোভা আমায়
রাখ তাবৎ পথে নাথ! তার ছায়াতে আমায়।

৩। ক্রুশের কাছে জাগিব, বিশ্বাস প্রেম আশায়
যাবৎ নাহি পৌঁছিবে স্বর্গপুরে সবায়।
-এফ. জে ক্রসবি
(বঙ্গানুবাদঃ নৃপাল চন্দ্র বিশ্বাস)


_______________________________________________________________________

(২৬৭)

বল ভ্রাতঃ খ্রীষ্টের মত, চল কি এ জীবনে?
(তুমি) মান কি শাস্ত্রের কথা, রাখিয়া সদা মনে?

১। পুরুতন পুরুষের ভাব, প্রকাশে স্বভাবে তব
পাপেচ্ছা কি আছে সব, এখনও তোমার মনে?

২। কর কি গান প্রার্থনা, ভক্তিপূর্ণ উপাসনা
প্রভুর কথা আলোচনা, প্রেমাবেগে নির্জনে?

৩। যাপ খ্রীষ্টিয় জীবন, কর খ্রীষ্ট পরিধান
থাক খ্রীষ্টগত প্রাণ, জীবনে কি মরণে।
-বিন্দুনাথ সরকার


_______________________________________________________________________

(২৬৮)

প্রভু হে, কি দিয়া পূজিব তোমরে (২)
আমার ভক্তিশূণ্য  হৃদয়খানি রে(২)
তোমার প্রেমের গন্ধ নাই ও রে (২)
প্রভু হে, পূজিব তোমারে।

১। পূজার তরে এই আঁধারে ছিল একটি ফুল
বিরহ অনলের তাপে, শুকাল তার মূল্য ওরে (২)
আমার নিরস বাগান সরস কর রে (২)
তোমার প্রেম বারি দিয়া রে (২)
প্রভু হে, পূজিব তোমারে।

২। কী দিয়া পূজিব প্রভু, কী আছে আমার
মানবকূলে জনম নিয়া হলাম পাষাণের আকার ওরে (২)
আমার পাষাণ মনে কেনও দিন ওরে (২)
আমার প্রভুর স্মরণ হল না (২)
প্রভু হে, পূজিব তোমারে।

৩। রিক্ত আমার পূজার থালা শূণ্য আঁধার
প্রভুর সেবায় বঞ্চিত হলাম, ভবে এমন দশা কার ওরে (২)
কাঙ্গাল অনিল বলে হে দরদী রে (২)
তোমার যুগল চরণ দাও শিরে (২)
প্রভু হে, পূজিব তোমরে।
-রচয়িতাঃ অনিল মধু

৪টি মন্তব্য: